
জহিরুল ইসলাম সানি:
রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার জামিন না মঞ্জুর করা সহ মামলার সকল আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (০৭ মে) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ শ্রমিক সংহতি ফেডারেশনের যৌথ উদ্দোগে এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার । তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ২০১৩ সনের ২৪শে এপ্রিল তারিখে সাভারের রানা প্লাজা নামক ভবন ধ্বসে সরকারী হিসেবে ১১৩৮ জন শ্রমিক প্রান হারান এবং আড়াই হাজার শ্রমিক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আহত হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন সহস্রাধিক শ্রমিক। সময়ের সাথে সাথে এই শ্রমিকদের দূর্ভোগ, দূর্দশা ও মানবেতর জীবনের চিত্র সকলের গোচরের আড়ালেই পরে যাচ্ছে। যাদের মধ্যে অন্ততঃ একহাজার শ্রমিক পঙ্গুত্ব বরণ করে বেচে আছেন। এই মর্মাহত দুর্ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়। ভবন মালিক সোহেল রানা, ৫টি গার্মেন্টস মালিক ও সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপি তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হলে সরকার বিভিন্ন আইনে ৩টি মামলা দায়ের করেন, যা গত ১০ বছরেও আলোর মুখ দেখেন নাই। এরই মধ্যে সোহেল রানা ব্যতিত মামলার বাকি সকল আসামী জামিনে আছেন। কিছুদিন আগে সোহেল রানার জামিন মঞ্জুর হলে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে সোহেল রানা মুক্তি না পেলেও আগামী ৮ই মে তার জামিন বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশ থেকে সোহেল রানার জামিন না মঞ্জুর করার জন্য জোরদাবী জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা বাংলাদেশ শ্রমিক সংহতি ফেডারেশনের সংগ্রামী সভাপতি জনাব রুহুল আমিন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন যে, ২০১৩ সনের ২৪শে এপ্রিল তারিখে সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধ্বসে সরকারী হিসেবে ১১৩৮ জন শ্রমিক প্রান হারান এবং আড়াই হাজার শ্রমিক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় যাদের মধ্যে অন্ততঃ একহাজার শ্রমিক পঙ্গুত্ব বরণ করে বেচেঁ আছেন। তাই রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা সহ মামলার সকল আসামীদের সর্ব্বোচ্চ শান্তি দিতে হবে । রানা প্লাজা আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও পূর্ণবাসনের সুব্যবস্থা করতে হবে ।
এ সময় সমাবেশ থেকে সোহেল রানার জামিন না মঞ্জুর করার জোরদাবী করা হয়।
সমাবেশ সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ শ্রমিক সংহতি ফেডারেশনের পক্ষ হতে নিম্নলিখিত দাবি সমূহ উত্থাপন করা হয়, দাবীগুলো হলো:
রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা সহ মামলার সকল আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে;আগামী ৮ই মে শুনানীতে সোহেল রানার জামিন না মঞ্জুর করার জোর দাবি জানাই; রানা প্লাজা আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও পূর্ণবাসনের সু-ব্যবস্থা করতে হবে; রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুব্যবস্থা করতে হবে; সকল ক্রেতা ও ব্যান্ডকে একোড চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে; ন্যূনতম মজুরী ২৩,০০০/- হাজার টাকা করতে হবে; ইপিজেড সহ সকল কারখানায় অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন ও যৌথদরকষাকষি করার স্বাধীনতা দিতে হবে। • সকল ক্রেতা ব্যান্ডকে ও মালিকদের কর্মক্ষেত্রে দূর্ঘটনাজনিত বীমার অংশগ্রহন করতে হবে; সকল শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত বীমার আওতায় আনতে হবে;সকল শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; সকল শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করতে হবে; কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা ও যৌন হয়রানী প্রতিরোধে আইন প্রনয়ন ও আইএলও সনদ ১৯০ অনুস্বাক্ষর করতে হবে।
এই সমাবেশে আরোও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন খাদিজা আক্তার, সাধারন সম্পাদক, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন;হাসিনা আক্তার হাসি, অর্থ সম্পাদক, বাংলাদেশ শ্রমিক সংহতি ফেডারেশন; ঊর্মি আক্তার,যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন; সৈকত চৌধুরী -সহ-সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন; ইয়াহিয়া খান, আইন ও যৌথ দরকষাকষি বিষয়ক সম্পাদক, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন; হালিমা বেগম, সাধারণ সম্পাদক, হুপলুন এ্যাপারেলস সম্মিলিত শ্রমিক ইউনিয়ন; লিলি বেগম, চেয়ারম্যান আর এমজি ওয়ার্কাস ফোরাম; জলি আক্তার- অর্থ সম্পাদক, ফাউন্টেন গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারিং কোঃ লিঃ সম্মিলিত শ্রমিক ইউনিয়ন; নাজমা আক্তার, সভাপতি ন্যাচারেল ডেনিমস লিঃ সম্মিলিত শ্রমিক ইউনিয়ন সহ উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আরো অনেক নেতৃবৃন্দ ।
উক্ত সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রীবৃন্দ বিভিন্ন এলাকার ৪০টি ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ আরো শ্রমিকগন।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে, রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার জামিন না মঞ্জুর করা সহ মামলার সকল আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবী করা হয়।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: