ফুলবাড়ী প্রতিনিধি, দিনাজপুর : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে এক সময়ের জমজমাট পশুর চামড়ার বাজার এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা দীর্ঘ সময়েও না পাওয়ায় কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয় নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই এখানকার চামড়া ব্যবসায়িদের। কোরবানীর গরুর চামড়ার সঠিক দাম না পেয়ে পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা ছড়ছেন ফুলবাড়ীর অন্তত ১৫ জন চামড়া ব্যবসায়ী।
কোরবানীকে ঘিরে পৌরশহরের নিমতলা মোড়, হাসমিপট্টি ও চামড়া গুদাম এলাকায় ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হলেও ব্যবসায়িদের কাছে যথেষ্ট পুঁজি না থাকায় চামড়া কিনতে তেমন আগ্রহ দেখান নাই ব্যবসায়িরা। ফলে আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পিস দরে বিক্রি হলেও ছাগলের চামড়া ফ্রি দিতে হয়েছে চামড়া মালিকদেরকে। কারণ ছাগলের চামড়া কেনার কেউ ছিল না।
চামড়া ব্যবসায়ি শমসের আলী জানান, কোরবানী আকার ও প্রকার ভেদে গাভীর চামড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং আড়িয়া গরুর চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে কিছু চামড়া কিনে আড়ৎদার কাবির হোসেনের কাছে বিক্রি করেছেন। ছাগলের চামড়ার ক্রেতা না থাকায় এক টাকা দিয়েও কেউ ছাগলের চামড়া কেনেনি।
এদিকে উপজেলার দক্ষিণ সাহাবাজপুর গ্রামের মাজহারুল ইসলাম নামের যুবক বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ৮০০ টাকায় ৬০ পিস ছাগলের চামড়া কিনে রবিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় আড়তে আসেন চামড়াগুলো বিক্রি করতে। আড়তদাররা ছাগলের চামড়া কিনতে অনিহা প্রকাশ করায় ওই যুবক হতাশ হয়ে চামড়াগুলো ছোট যমুনা নদীতে ফেলে বাড়ী ফেরেন।
ফুলবাড়ীর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, গত বছর সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছিল তার চেয়ে প্রতি বর্গফুটে ১০ টাকা কমে ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। তারা সিন্ডিকেট করে দাম নির্ধারণ করেন। বাধ্য হয়ে সেই দামেই চামড়া বিক্রি করতে হয়। তাই সরকার দাম বাড়ালেও আমাদের কোনো লাভ নেই। ট্যানারী মালিকরা যা নির্ধারণ করবেন তাই সঠিক এর বাহিরে কোন কিছু করার থাকে না। ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকা বকেয়া থাকায় অনেকেই পথে বসেছেন। অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।
ফুলবাড়ী চামড়া ব্যবসায়ী কাবির হোসেন বলেন, ফুলবাড়ীতে বছরজুড়ে গরু ও ছাগলের চামড়া বেচাকেনা হতো। শুধু কোরবানির সময় এই বাজারে ১৫ থেকে ২০ হাজার গরু ও ২৫-৩০ হাজার পিস ছাগলের চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে। গত বছরের তুলনায় এবার গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট বাড়ানো হয়েছে ৭ টাকা এবং খাসির চামড়া বাড়ানো হয়েছে ৩ টাকা।
সরকার দাম নির্ধারণ করলেও তারা এই দাম কোনো দিনই পান না। ট্যানারি মালিকদের ইচ্ছামতো দামেই তাদেরকে চামড়া বিক্রি করতে হয়। ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা পাওনার কারণে পুঁজি হারিয়ে গেছে তার ব্যবসার। টাকা না পাওয়ায় ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ধুকে ধুকে চলছে ব্যবসা। যা যেকোন সময় অন্যদের মতো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / মোঃ হারুন-উর-রশীদ/কেএন
আপনার মতামত লিখুন: