• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ; ১৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

পদ্মা সেতু: বাঙালীর অদম্য শক্তি ও নববিস্ময়ের আরেক নাম


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ০৩ জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:৫৩ পিএম
বাঙালীর অদম্য শক্তি ও নববিস্ময়ের আরেক নাম
পদ্মা সেতু

ড. মো. আওলাদ হোসেন

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন সকালে আমার আশি ঊর্ব্ধ বয়সী মা’র ফোন পেলাম। সালাম বিনিময়ের পর মা বললেন, ‘বাবা, পদ্মাসেতু দেখতে যামু। আমি বললাম, ‘এখনতো ভীড়, কয়েকদিন পর যাই, মা’। উত্তরে মা বললেন, ‘ বললো-পরশু চলো পদ্মাসেতু দেখতে যাই। গাড়ী দিয়া পদ্মা পার হইয়া বাপের বাড়ি যামু, তোমার দাদা বাড়ী যামু’। আমার মা আবেগ তাড়ি হয়ে স্মৃতিপট থেকে তুলে এনে জানালেন, মা’র বিয়ের পর প্রথম যখন আমার বাবার সাথে ঢাকা আসেন তখন আমি তার কোলে ১০ মাসের শিশু আমার বড় ভাই আবুল হোসেন ৪ বছর বয়স ডায়ারিয়া হয়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। তাই তড়িঘড়ি করে আমাকে নিয়ে ঢাকা আসা। আমার নানা বাড়ী পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত মাদবরের চর ইউনিয়ন (শিবচর, মাদারীপুর)। খরস্রোতা পদ্মানদীর ভাঙ্গনে তিনবার বিলীন হয়েছে আমার নানা বাড়ী।

মাদবরের চর থেকে খুব সকালে লঞ্চে উঠলে, চাঁদপুর হয়ে ঘুরে, রাত ১০ টায় ঢাকার ঠিকানায় পৌঁছা যেত। আমার নানা মাকে লঞ্চে তুলে দিয়ে যতক্ষণ লঞ্চ দেখা যায়, ততক্ষণ নদীর পাড়ে লঞ্চঘাটে বসে থাকতেন। একবার নানা আমার মাকে বলেছিলেন, ‘এমন দিন আইবো, বিয়ানে (সকালে) ঢাহা যাইয়া, কাম শেষ কইরা বেইল ডোবার আগেই ফিররা আইতে পারবা’। মা বললেন, ‘হেইদিন আইসা পরছে। আমারে পদ্মা সেতু দেখতে নিয়া চলো’। এই কথোপকথনে উল্লেখযোগ্য ছিল মায়ের মন ভরা ‘আবেগ’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ কামনা করে তিনি বললেন, ‘হাসিনা দেশটারে কত উন্নত করছে। আমার বিয়ার পর শ্বশুর বাড়ি (মোড়লকান্দি, কুতুবপুর ইউনিয়ন, শিবচর) যাওয়ার সময় খালপাড়ের চিকন রাস্তা দিয়া পালকিআলারা ঠিকমত হাটতে পারে নাই। লিটন চৌধুরী ঐ খালপাড়ের রাস্তা পাকা কইরা দিছে। খালের উপর ব্রীজ কইরা দিছে। অহন আমি খালপাড় দিয়া গাড়ী নিয়া যাইতে পারি। শেখ হাসিনারে আল্লাহ বাঁচাইয়া রাখুক, সুস্থ রাখুক, দোয়া করি’।

সম্পূর্ণ অনিশ্চিত, অনির্দিষ্ট গতিবিধি সম্পন্ন নদী পদ্মা। যার ‘একুল ভাঙ্গে অকুল গড়ে’ এমনি একটি নদীকে নিয়ন্ত্রন করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। গত ২৫ জুন ২০২২ এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০ ফুট প্রস্থ কারিগরি বিবেচনায় বিশ্বের এক নববিস্ময় ‘পদ্মাসেতু’ উদ্ধোধন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথিবীর দ্বিতীয়তম খরস্রোতা এই নদীর উপর সেতু নির্মাণে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ অনুভব করেছেন কি দুরূহ কাজ তাঁরা সম্পন্ন করেছেন।

এই সেতু নির্মাণ কার্যক্রমের শুরুতেই বাঁধা আসে। এই পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন করতে চেয়েছিল। সম্পূর্ন কাল্পনিক কিছু দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ালো। এ ঘটনার পর অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ। কিন্তু দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন সাহসী নেতৃত্ব থাকলে সবই সম্ভব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মাথা নোয়াবার মানুষ নন। মুহূর্তেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ঘোষণা দিলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে’। তখন সমালোচকরা বলছেন, ‘এটা দুঃসাহস’। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও স্বাধীনতা বিরোধীরা বলেছেন, পাকিস্তানের নিয়মিত সেনাবাহিনীর সাথে নিরস্ত্র বাঙালি কিভাবে যুদ্ধ করবে? ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘...বাঙ্গালীরে দাবিয়ে রাখতে পারবা না।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলার দামাল ছেলেদের নিয়ে গঠিত অনিয়মিত মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানের একটি নিয়মিত সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে মহান স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল। আন্তর্জাতিক অনেক পরাশক্তির সমন্বয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সকল ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের জন্ম হয়েছে। বাঙ্গালী জাতি হিসাবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাঙ্গালী জাতিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। তেমনিভাবে সকল বাঁধা পেরিয়ে শুরু হয়েছিল পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ।

নির্মাণ সামগ্রী নদী তীরে জমা করা হয়। খরস্রোতা পদ্মার ভাঙ্গনে মালামাল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু ভেঙ্গে পরেননি শেখ হাসিনা। দ্বিগুন উদ্যম নিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনার দৃঢ়তা ও সাহসিকতার জন্যই বাঙ্গালী জাতির আত্মমর্যাদার প্রতীক পদ্মাসেতু আজ বাস্তবতা। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন ঠেকাতে দেশি-বিদেশি যে সকল সংস্থা ও ব্যক্তি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অভিযোগ উত্থাপন করেছিল, তারা পরবর্তীতে মাথা নত করে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যদিও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছেন। আজ পদ্মাসেতু উদ্ধোধনের পর মাথা নত করেছে সকল ষড়যন্ত্রকারীরা, তারা অভিনন্দনও জানিয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানও মাথা নত করে অভিনন্দন জানিয়েছে।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গ দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে, বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ তাও বাস্তবতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২৫৯৪ মার্কিন ডলার যা প্রতিবেশী দেশসমূহের তুলনায় অনেক এগিয়ে। আমাদের গড় আয়ু ৬০ থেকে ৭৩ বছর বয়সে উন্নিত হয়েছ। খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছ। এমন সময় ছিল বিদ্যুৎ ঘাটতি এমন চরম খারাপ পর্যায়ে ছিল যে, লোডশেডিং লেগেই থাকত। সামাজিক অনুষ্ঠান, শপিংমলে বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার বাধ্য হয়েছিল।

বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কল্যাণে দক্ষিণ এশিয়ায় শতভাগ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত একমাত্র দেশ বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, কিছু দুর্গম পার্বত্য এলাকা বাদে এরই মধ্যে দেশের ৯৯.৮৫% এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ রপ্তানী করার সক্ষমতা অর্জন করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এমনিভাবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশের মর্যাদা অর্জন করবে। মাথা নোয়াবে না বাঙ্গালী, মাথা নোয়াবে না বাংলাদেশ।

লেখক: রাজনীতিবিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image