নিউজ ডেস্ক: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে যে দলের প্রার্থীই জয়ী হোক তাকে সমান সুযোগ দেয়া হবে।
বুধবার (১৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএনডিপি আয়োজিত গ্রাম আদালতের কর্মশালায় এ কথা জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, আমি যতটুকু জেনেছি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হচ্ছে। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অসুস্থ হওয়ার কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নত দেশ বানাতে চায়। যেই নির্বাচিত হোক তাকে আমি অভিনন্দন জানাই। উন্নয়নের ব্যাপারে কোনো দল দেখা হচ্ছে না, মানুষ দেখা হচ্ছে। যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে সে বিএনপি হোক আর আওয়ামী লীগ হোক তারা তাদের সমমর্যাদার সুযোগ পাবেন।
সকালের এক পশলা বৃষ্টির মধ্যেও দেখা যায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ১০৫টি ভোট কেন্দ্রে এবারই প্রথমবারের মত নজরদারি চলছে সিসি ক্যামেরায়। ভোট শান্তিপূর্ণ করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য। পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রার্থী এবং ভোটাররাও।
এর আগে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কুমিল্লাবাসীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমার প্রিয় কুমিল্লাবাসী তারা যেন ভোট দেন। তারা যেন প্রত্যেকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারেন সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমার এটা অনুরোধ থাকল।
আগামী পাঁচ বছরের জন্য কুমিল্লা নগরীর নতুন মেয়র বেছে নিতে ভোর থেকেই কেন্দ্রগুলোতে সরব উপস্থিতি রয়েছে ভোটারদের। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
এদিকে আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ। পুষ্প-বৃক্ষে, পত্রপল্লবে, নতুন প্রাণের সঞ্চার করে নতুন সুরের বার্তা নিয়ে সবুজের সমারোহে এসেছে বর্ষা। বৃষ্টির রিমঝিম ছন্দের সঙ্গে শুরু হয়েছে আলাপন। আর ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় বৃষ্টি। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে তুমুল এ বৃষ্টিতেই দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করেন ভোটাররা।
এত বৃষ্টির মধ্যেও কেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছেন ভোটাররা। এদিকে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, সুন্দর একটা পরিবেশে ভোট চলছে। ভোটারদের উপস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হচ্ছে।
পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পরিবেশ ঠিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অনভিজ্ঞতার কারণে শুরুতে ইভিএমে ভোটগ্রহণে কিছুটা ধীরগতি দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেন ভোটাররা বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহেদুন্নবী।
ভোট প্রদান শেষে সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ মোটামুটি সুষ্ঠুই দেখছি। তবে মেশিনগুলো ডিস্টার্ব করছে। মেশিনে টিপ দিলে (প্রতীকের) ছবি উঠছে না। প্রিসাইডিং অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি হচ্ছে; আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় মানুষ কেন্দ্রে আসতে পারছে না। তবে ভোট সুষ্ঠুভাবে হলে জয়ী হব; জনগণের রায় যা হবে মেনে নেব।’
ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, সব কেন্দ্রেই আমার এজেন্ট দিতে পেরেছি। এ নিয়ে কোনো ধরনের ঝামেলা হয়নি। সুষ্ঠু ভোট হলে আমার জয় নিশ্চিত।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভিন্ন কেন্দ্রে বুথ কম রাখা হয়েছে। আগের নির্বাচনে ছয়টি বুথ রাখা হলেও এখন তিনটি দেখা গেছে। ফলে ভোটগ্রহণে ধীরগতি হতে পারে। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। সকাল থেকেই কেন্দ্রে চমৎকার পরিবেশ দেখছি।’
নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুরো সিটিতেই ভোট হচ্ছে ইভিএমে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ নারীসহ মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এবার এ নির্বাচনে ৫ মেয়র প্রার্থী, ৯টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ নারী কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ২৫টি ওয়ার্ডে ১০৮ কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২টি ওয়ার্ড ৫ ও ১০নং ওয়ার্ডে একক প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জেলায় ১ হাজার ২৬০ আনসারসহ ৩ হাজার ৬০৮ জন পুলিশ সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৭৫টি চেক পোস্ট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৯ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ১৫ প্লাটুন বিজিবি এবং র্যাব নিয়োগ করা হয়েছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৭ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন। ভোট পড়েছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৯০। এর মধ্যে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট; আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানার নৌকা পেয়েছিল ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।
এর আগে সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর ২০১২ সালের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান। সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন মনিরুল হক সাক্কু।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: