নিউজ ডেস্ক: টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলা। চলমান বন্যায় চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে প্রায় ১ হাজার ৬৫১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা নিয়ে গঠিত কৃষি অঞ্চলটিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৭ লাখ ৭ হাজার ৫১৫। চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চূড়ান্ত ক্ষতিসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ হাজার ১৩৭ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১ লাখ ২২ হাজার ৯০৮ হেক্টর জমির ফসল আংশিক বা অর্ধেক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৭৪১ হেক্টর জমির আমন বীজতলা রয়েছে। এছাড়া ১ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৪ হেক্টর আমন ধান, ৩ হাজার ২৪০ হেক্টর বোনা আমন, ২৫ হাজার ৮৯১ হেক্টর আউশ, ৭ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির শরৎকালীন সবজি, ১১ হাজার ৭৩৯ হেক্টর ফলের বাগান, ৬২ হেক্টর আদা, ১৫৬ হেক্টর হলুদ, ৪২০ হেক্টর জমির পান ও ৩১৪ হেক্টর জমির আখের ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জমির আর্থিক মূল্যমান অনুযায়ী, আমন বীজতলায় ৮৮ কোটি ৩৪ লাখ ১৬ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে ৯৬১ কোটি ৭৭ লাখ ৮৫ হাজার ৭০০ টাকা। বোনা আমনের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৮২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এছাড়া ১২৩ কোটি ২৯ লাখ ৫৫ হাজার ৯০০ টাকার আউশ, ৩৯৪ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার সবজি, ৩০ কোটি ৮ লাখ টাকার পান, ২৫ কোটি ৫৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ফলের বাগান, ৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার আদা, ৭ কোটি ২২ লাখ টাকার হলুদ এবং আখের ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ৫২ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা।
জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় ৫৮ হাজার ৪৯২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ ৩৯১ কোটি ৮৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬০০ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৭ জন। কক্সবাজারে ১৯ হাজার ২৯৬ কৃষকের ১৩ হাজার ১৬২ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ৪৭ কোটি টাকা। নোয়াখালীতে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৯২টি কৃষক পরিবারের ৪৩ হাজার ৬০১ হেক্টর জামির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক হিসাবে যা ৪৬৬ কোটি ২৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
এছাড়া লক্ষ্মীপুর ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬টি কৃষক পরিবারের ৩৯ হাজার ৭১৭ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে, যা ২৯২ কোটি ৬৮ লাখ ১১ হাজার টাকার সমপরিমাণ।
চট্টগ্রাম কৃষি অঞ্চলে ফেনী জেলায় সবচেয়ে বেশি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় ৩৮ হাজার ৮৭ হেক্টর জমির ফসল আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৮ হাজার ৭৪ হেক্টর বা শতভাগ ফসলেরই ক্ষতি হয়েছে। জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬০টি কৃষক পরিবারের ক্ষতি ধরা হয়েছে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ ৩৪ হাজার ৭০০ টাকা। ১ লাখ ৩০ হাজার ২৬০টি কৃষক পরিবারের ৩৬২ কোটি ৭০ লাখ টাকার আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। শরৎকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে ৩৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে ২৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এছাড়া আমন বীজতলাসহ অন্যান্য ফসলের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘১৬-২২ আগস্ট পর্যন্ত সৃষ্ট বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফসলের। বন্যায় প্রায় ১৬ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। এখন কৃষকদের কীভাবে পুনর্বাসন বা তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। তাছাড়া বন্যার পানি নেমে গেলে কৃষি উৎপাদন সচল রাখতে আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা পরামর্শ দিচ্ছি। বন্যার পানি নেমে গেলে তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, ‘বন্যায় ফেনীতে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলি জমি থেকে বন্যার পানি এখনো নামেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারপর আমনের চারাসহ অন্যান্য ফসল আবাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব ।’
ঢাকানিউজ২৪.কম / এইচ
আপনার মতামত লিখুন: