
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে পড়ে থাকা প্রায় অর্ধ-লাখ টাকার ১৫ টি কাটা গাছের গুড়ি দিন দুপুরে প্রকাশ্যে গাড়ি বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপজেলা আঙ্গিনায় সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও এ বিষয়ে জেনেও জানেন না উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। স্থানীয়দের অভিযোগের তীর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসরাত জাহানের দিকে।
হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকার বাসিন্দা কৃষক মজলুর স্ত্রী ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুদি দোকানদার জানান, অনেকদিন ধরে মাটিতে কেটে রাখা গাছ গত কাল (২'আগস্ট ২০২২) দেখলাম কারা যেন গাড়িতে উঠাইতেছে বৃষ্টির সময় বাড়িতে গিয়েছিলাম এর পর কি হইছে জানি না।
উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপ কর্মকর্তা গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে কমপ্লেক্স চত্বরে বিভিন্ন জাতের কয়েকটি গাছ অপসারণ করানোর জন্য স্মারকলিপি প্রদান করেন। এর পরিপেক্ষিতে বন বিভাগ ১০ অক্টোবর ২০২০ সালে ২ টি আম গাছ,১০ টি ইপিল-ইপিল গাছ , ১টি কদম গাছ, ১টি শিমুল গাছ এবং ১টি শিশু গাছ-সহ মোট ১৫ টি গাছ উনচল্লিশ হাজার ছয়শত ষোল টাকা মূল্য নির্ধারণ করে গাছ গুলো কেটে রাখা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা আঙ্গিনায় সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ১৫ টি গাছের মধ্যে ১ টি গাছের গুড়িও খুজে পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালের বাউন্ডারি'র ভেতরে পশ্চিম পাশে মোটা মোটা গাছের গুড়ির দাগ লেগে আছে মাটিতে। ইসরাত জাহানের কক্ষে প্রবেশ করতেই দেখা যায় ঠিকাদার টিপু গাছের বিষয়ে তার সাথে কথা বলছে এবং টিপুর উপরে রেগে যেতেও দেখা যায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে।
ঠিকাদার টিপু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসরাত জাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে প্রতিবেদককে বলেন, কিছু দিন আগে গাছ গুলো বিক্রি করবে কি-না জানতে চাইলে সে আমার সাথে খারাপ আচরণ করে বলে গাছ বিক্রি করব কি-না সেটা আমার ব্যাপার। আমার মনে হয় সে গাছগুলো লুকাইয়া বিক্রি করে দিছে। স্থানীয়দেরও একই অভিযোগ,হাসপাতালের ষ্টাফদের সহযোগীতায় গাছ-গুলো বিক্রি হয়েছে।
এ বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসরাত জাহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জেনেও যেন জানেন-না এমন ভান করে বলেন, দেড়-বছর আগের পঁচে যাওয়া কিছু গাছ ছিল সে গুলো নিলে নিতে পারে। ভালো গাছ তো নেওয়ার কথা না। আমি পঁচে যাওয়া গাছ ফেলে দিতে বলেছি।
অভিযোগ আছে গত ছয় মাস আগে টেন্ডার ছাড়া আপনি গাছ বিক্রি করেছিলেন এখন আস্তে আস্তে গাছ গুলো সরাচ্ছেন প্রতিবেদক এমন প্রশ্ন করলে ইসরাত জাহান উত্তেজিত হয়ে বলেন," টেন্ডার ছাড়া গাছ বিক্রি করেছি, যাদের কাছে বিক্রি করছি তাদের কে নিয়ে আসেন আমি তাদের কে থাপ্পড়িয়ে দাঁত ফেলে দিব আপনি ভিডিও করবেন। আমার বিরুদ্ধে কিছু লেখবেন প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিতে হবে সেটা আমি দেখব। আমি গাছ চুরি করেছি আপনি আমার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। আমি যদি চুরি করি আপনাকে কি আমি বলব আমি চুরি করেছি? সত্য'টা ঘাটাইতে থাকেন। আমি যদি চুরি নাও করি তা হলে কি আপনাকে প্রমাণ দিতে হবে আমি চুরি করি নাই?"
তিনি আরও বলেন, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করার আগে জানবেন সে কোন পরিবারের মেয়ে বাপ-মা কে,চাচা-চাচী কে বংশীয় মর্যাদা উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ধৈয্যের একটা সীমা থাকা দরকার হরিরামপুর থেকে সব সাংবাদিক আমাকে অনেক জ্বালাইছে!
উত্তেজিত থেকে ঠান্ডা হয়ে তিনি তার পরবর্তী বক্তব্যে বলেন, "কাটা গাছের খন্ড গুলো কেও বাইরে নিয়ে গেছে আমি আপনাদের থেকে প্রথম শুনলাম। যারা গাছ গুলো নিয়েগেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এ ব্যাপারে হরিরামপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, "আমাদের দায়িত্ব শুধু মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া। এর পর কি হয়েছে জানি না। তারা আমাদের কে চিঠি দিয়েছিল আমরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি।"
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, "এ বিষয়ে আমার জানা নেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা: মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, যেহেতু গাছগুলো আমাদের হাসপাতালের সম্পত্তি কে বা কারা নিয়েছে তা আমরা দ্রুত খুঁজে বের করব। আর এ বিষয়ে আমার উপজেলা কর্মকর্তা থানায় জিডি করেছে বলে জানান তিনি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / সাকিব আহমেদ/কেএন
আপনার মতামত লিখুন: