নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর কাওরান বাজারের জনতা মৎস্য আড়ৎ এবার আওয়ামী লীগের দখল থেকে নিজেদের দখলে নিল স্থানীয় বিএনপি’র নেতারা। তেজগাঁও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জালাল মোল্লা, তেজগাঁও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার স্বঘোষিত বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন, তেজগাঁও থানার যুগ্ম আহবায়ক আজাদ হোসেন, আলমগীর মোল্লা ও মোক্তার হোসেনসহ অন্যান্যরা চাঁদার টাকার ভাগ নিয়ে থাকেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির এই তথাকথিত নেতারা ৬ আগস্ট কাওরানবাজারের জনতা মৎস্য আড়ৎ দখলে নেয়। এরআগে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবাজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সহযোগী মোশারফ হোসেন সরদার এই জনতা মৎস্য আড়ৎটি দখল করে দীর্ঘ ১৬ বছর ভোগ করে। তখন আড়তের মূল মালিক আতাউর রহমান, মোজাম্মেল হোসেন ও হেলাল উদ্দিন গাজীকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সহযোগী মোশারফ হোসেন সরদার মিথ্যা মামলা ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ১৫ নভেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ঢাকা-এর সিএস খতিয়ান ২১, এসএ খতিয়ান ২০ আরএস ১৫৪-এর খতিয়ানভুক্ত জায়গাটি ঈমাম হোসেনের ওয়ারিশদের কাছ থেকে আতাউর রহমান, মোজাম্মেল হোসেন ও হেলাল উদ্দিন গাজী ক্রয় করেন। এরপর থেকেই উক্ত জমির উপর সেমিপাকা ঘর করে মৎস্য আড়ৎ গড়ে তোলেন। ৪০টি ঘর করে সেখান বিভিন্ন ব্যবসায়ীদেরকে ভাড়া দিয়ে নিজেরাও ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় কাওরান বাজারের ত্রাস মোশারফ হোসেন সরদার তার সহযোগিদের নিয়ে জনতা মৎস আড়ৎটি দখল করে নেয়।
সেখানকার ৪০টি দোকান বরাদ্দ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। দীর্ঘ ১৫ বছরে তিনি ওই ৪০টি দোকান বরাদ্দ ও ভাড়া দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে জানা যায়। এছাড়াও প্রতিদিন দোকান প্রতি ৪’শ টাকা ভাড়া নেন। মৎস্য মার্কেট দখলে নেয়ার পর জমির মূল মালিকরা আদালতে মামলা করেন। আদালত থেকে একাধিকবার মূল মালিকদের পক্ষে রায় পাওয়া সত্ত্বেও দখলে যেতে পারেনি তারা।
কাওরানবাজার জনতা মৎস্য আড়ৎ-এর ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ জানান, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের আগ পর্যন্ত জনতা মৎস্য আড়ৎ- এর ৪০টি দোকান থেকে প্রতি দিন ৪’শত টাকা আদায় করতেন মোশারক হোসেন সরদার। শুধু তাই নয় তিনি মূল মালিকের কাছ থেকে জোড় করে আড়ৎটি দখল করে প্রতিটি দোকান থেকে অগ্রিম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয়। এর একটি বড় অংশ চলে যেতো সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায়। কাওরানবাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকা কামালের বাসায় পৌঁছে দিত মোশারফ। দীর্ঘদিন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্যাশিয়ার থাকার কারণে মোশারক হোসেন সরদারকে শরীতপুর জেলা গোমেরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়ে দেন। তার ভয়ে কাওরানবাজার এ থাকায় কেউ কথা বলতে পারতো না। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ওই সিন্ডিকেটের পতনের পর থেকেই তেজগাঁও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জালাল মোল্লা পুরোদমে জনতা মৎস্য আড়ৎসহ ফুটপাতের অর্ধশত দোকান দখল করে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র থেকে জানা যায়, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও তার নানা অপকর্মের কারণে তেজগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহমান গত ১৯ সেপ্টেম্বর দল থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করেন। তেজগাঁওয়ের আরেক বহিস্কৃত নেতা সুমারির হোসেনসহ কয়েকজন মিলে এখন পুরো কাওরানবাজার এলাকায় রাম রাজস্ব কায়েক করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, জেতগাঁও বিএনপির বহিস্কৃত নেতা আব্দুর রহমান ও বর্তমান তেজগাঁও যুবদলের সভাপতি জালাল মোল্লা ও তার কয়েকজন সহযোগী গত ৬ আগস্ট সব দোকান-পাট দখল করে মোটা অংকের টাকা চাঁদা আদায় করে থাকেন। তারা প্রতিদিন এলাকায় মহড়া দিয়ে কয়েক লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছেন বলে তাদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জনতা মৎস্য আড়ৎ এর মালিক আতাউর রহমান জানান, জনতা মৎস্য আড়ৎটির মালিক তিনিসহ আরো দুই জন। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই মৎস্য আড়ৎ থেকে মোটা অংকের টাকা মোশারফের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতেন। সে সময়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ভয়ে আমরা মুখ খুলতে সাহস পাইনি। কিন্তু পরিতাগের বিষয় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবার একই কায়দায় বিএনপির তথাকথিত স্থানীয় নেতা হুমায়ুন আলমগীর মোল্লা, মোক্তার হোসেন, জালাল মোল্লা, মনির হোসেনসহ এসব নেতারা গত ৬ আগস্ট তাদের ওই মৎস্য আড়ৎটি দখলে নেয়। এ ব্যাপারে উক্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। আড়ৎ-এর মূল মালিকরা সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকায় যেতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে তেজগাঁও থানার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, উক্ত জায়গার মূল মালিক তিনজন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবার একই কায়কায় নাম সর্বস্ব বিএনপির নেতারা জনতা মৎস্য আড়ৎটি দখলে নেয়। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: