• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

সড়কে প্রাণঝরেছে ৫৮৫, ঢাকায় দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ২২ শতাংশ


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ০৪ ফেরুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:১১ পিএম
সড়কে প্রাণঝরেছে ৫৮৫,
সড়ক দূর্ঘটনা। প্রতীকী ছবি।

মোহাম্মদ রুবেল

সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। আশঙ্কা হারে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে খালি হচ্ছে মায়ের কোল। শুধুকেবল চলতি বছরের জানুয়ারিতেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ২২ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতেই।এছাড়া ১ দশমিক ১৮ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১ দশমিক ১ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে হয়েছে। ্অদক্ষ চালক, মাদকাসক্ত চালকদের যানবাহন চালানো, লক্কড় ঝক্কড় যানবাহন, ঢিলেঢালা টু্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আগে যাওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতা, নিয়ম না মেনে ওভারটেকিং, যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো, পেছনের বাসকে সামনে আসতে না দেওয়ার প্রতিযোগিতা, সড়কে খানাখন্দ, সড়কের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় গতিসীমা না মানায় এত প্রাণহানহানির কারণ। আবার অনেকে চিরতরে পঙ্গু হচ্ছেন। অনেক পরিবার পথেও বসেযাচ্ছেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন সংগঠনটির সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় নেত্রকোনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাসের সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে সাতটায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি হাজী রাস্তার মাথা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছেন ও আহত হয়েছে তার আরেক বন্ধু। উপজেলার ভাটিয়াপাড়া-নড়াইল সড়কের মধুমতি সেতুর টোল প্লাজার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বিশেষজ্ঞর বলছেন, সড়ক নিত্যদিন জীবন কেড়ে নিচ্ছে। নেই কোন প্রতিকার। নিয়ন্ত্রণও করা যাচ্ছে না। এর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী তাদের এখন এই জিজ্ঞাসা।

চলমান এই সর্বিক পরিস্থিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন চিত্রে উঠে এসেছে শুধুকেবল চলতি বছরের জানুয়ারিতেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ৮৯৯ জন। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত ও ৭৮ জন আহত হয়েছেন। ২১৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৫ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ১১৪ জন।

শনিবার সকালে সংগঠনের মহাসচিব মো.মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই তথ্য যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সড়কে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ ও দুর্ঘটনায় আহত ১০ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়লেও প্রাণহানি কমেছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

মোট দুর্ঘটনার ৫১ দশমিক ৬০ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেয়া, ২২ দশমিক ২৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ বিবিধ কারণ, ০ দশমিক ৬৭ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ১ দশমিক ১ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছর মোট দুর্ঘটনার ২৯ দশমিক ৫১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৮ দশমিক ৬১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ২২ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে।

দুর্ঘটনারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে ১৭ জানুয়ারি, এদিন ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২ জানুয়ারি, এদিন ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় একদিনে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ১১ জানুয়ারি, ওইদিন ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হন। সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে ৫ জানুয়ারি, এদিন ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ৭১ জন আহত হন।

এসব দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কিছু কারণের কথা বলেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতারা। তারা  বলছে, বেপরোয়া গতি, বিপদজনক ওভারটেকিং,ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাট-বাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা,দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা,মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ায় দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালকদের আইন না মানার অন্যতম কারণ হচ্ছে তাদের মানসিকতা। নগর-মহানগরীর রাস্তা এবং হাইওয়েগুলোয় ট্রাফিক সিগন্যালের বালাই নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রাফিক সার্জন বা পুলিশ গাড়ির সামনে গিয়ে না দাঁড়ান চালকরা তাদের গাড়ি থামানোর কোন প্রয়োজনই মনে করে না। ট্রাফিক সিগন্যাল চালু না থাকায় চালকদের এই মানসিকতা তৈরি হয়েছে। অথচ ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কোন চালক ট্রাফিক আইন ভঙ্গের চিন্তা করে না।এ কারণেই চালকদের আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। আইন অমান্যকারীকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।তবেই চালকদের শৃঙ্খলায় আনা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যে আরও জানা যায়, ২০২০ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৭০৬ জন শিক্ষার্থী ও ৫৪১টি শিশু, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ১৯ শতাংশ। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। সেদিন ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের প্রতিযোগিতায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ঐ দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছিলেন। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসে। রাজপথে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে গাড়ি আটকে কাগজপত্রও দেখে, লাইন মেনে গাড়ি চলাচলে বাধ্য করে। কিন্তু সেই লাইন বেশি দিন টেকসই হয়নি।

২০২২ সালের দুর্ঘটনার চিত্র

অপরদিকে নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচারের তথ্যানুসারে ২০২২ সালে দেশে ৫ হাজার ৭০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।এতে মারা গেছে ৫ হাজার ৭৬০ জন।আগের বছরের তুলনায় বিদায়ি বছরে সড়কপথে ২ হাজার ৪১৫ জনের মৃত্যু বেশি হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন সড়ক দুর্ঘটনার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর যাত্রীকল্যাণ সমিতি বলছে, একই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৯ হাজার ৯৫১ জন। সবার হিসাবেই ২০২২ সালে মৃত্যু বেড়েছে। এছাড়া গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪২০ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে, যা খুবই উদ্বেগের।

 

ঢাকানিউজ২৪.কম / এম আর

আরো পড়ুন

banner image
banner image