
মশিয়ার রহমান, জলঢাকা প্রতিনিধি, নীলফামারী: ডোমারের মৃৎশিল্পীরা প্রয়োজনীয় পুঁজি ও পরিকল্পিত উদ্যোগ এবং মাটির অভাবে তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া পেশায় চরম ভোগান্তি এবং সংকটের মুহূর্ত পার করছেন তাদের পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া পেশাকে ধরে রাখতে গিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায়ত্ব এবং নাজেহাল অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। অথচ কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্প।
এছাড়াও তাদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর ন্যায্য মুল্যে বাজারে বিক্রি করতে না পারায় অনেকেই এখন তাদের পূর্ব পুরুষদের ব্যবসা গুটিয়ে এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় মনোনিবেশ করতে বাধ্য হচ্ছে। সাত পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে কোন রকমে ধরে রেগেছেন কিছু কিছু মৃৎশিল্পীরা।
বর্তমান বাজারে প্রচলিত প্লাস্টিকের বিভিন্ন পন্য সামগ্রীর সমারোহের সাথে পাল্লা দিতে না পারায় কোনঠাসায় পড়েছেন তারা।ফলে একদিকে যেমন গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প হারানোর পাশাপাশি তারাও তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে নানান দূঃচিন্তার পাশাপাশি দুর্দিনে সংসার জীবন অতিবাহিত করছেন।
এবিষয়ে কথা হয় ডোমারের মৃৎশিল্পি বিকাশ চন্দ্র পাল (৪০) এর সাথে তিনি প্রতিনিধিকে বলেন, ‘পুরুষদের প্রধান কাজ মাটি কিনে সেগুলো কাদা করা ও ভাটায় পোড়ানো। এরপর এসব সামগ্রী নিজ হাতে তৈরী করেন বাড়ীর নারী ও ছেলেমেয়েরা। আর এসব তৈরী সামগ্রী বাজারে বিক্রি করি আমরা। বর্তমানে যত দিন যাচ্ছে মাটির জিনিসের উপর ততই চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন আমাদের হাত পড়েছে কপালে।’
জেলা শহর থেকে মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসা কৈলাস চন্দ্র পাল (৪৫) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান আগে মাটির তৈরী হাঁড়ি,পাতিল,কলস, সারোয়া, পেচি, তাওয়ার খুব চাহিদা ছিল। তখন আমাদের মাটির তৈরি জিনিস পত্রের চাহিদাও ছিল প্রচুর। তৈরি করা মালামাল বাজারে আসার সাথে সাথে ক্রেতাদের সামলানোই যেত না। আর এখন গ্রাম গঞ্জের হাট বাজারে মাল বিক্রি করতে আসলে আসা যাওয়ার ভ্যান ভাড়াই উঠে না। আগে গরমের সময় পানি ঠান্ডা রাখার জন্য এক একটি কলস বিক্রি হতো ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আর এখন ফ্রিজ বের হয়ে মাটির তৈরি কলসের কোন চাহিদা নাই সাধারণ মানুষদের মাঝে। বর্তমানে হঠাৎ এক-আধটা বিক্রি হয়, তাও আবার বিক্রি করতে হয় পানির দামে।
এবিষয়ে নীলফামারী জেলা ক্ষুদ্র কুটির শিল্প (বিসিক) এর ব্যবস্থাপক হোসনে আরা খাতুন বলেন, এ শিল্পের লোকজনদের সমিতির মাধ্যমে আর্থিকভাবে সহায়তা করা যেতে পারে। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাটির তৈরী জিনিশপত্রের আদলে তৈরী করছেন প্লাস্টিক পন্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিনিয়ত ব্যবহার কমছে মাটির তৈরী পন্য সামগ্রীর। এতে বিপাকে পড়েছে এই শ্রেনী পেশার মানুষ।তিনি আরও বলেন, আমাদের শর্ত পুরণের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করা যেতে পারে।
মৃৎশিল্পীর সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন,মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারী ভাবে যদি কোন ধরনের সহায়তার সুযোগ থাকলে অবশ্যই সেটা করা হবে। এটি গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্য আর ওই ঐতিহ্যকে এখনো ধরে রেখেছেন মৃৎশিল্পীরা।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: