• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

পোশাক নিয়ে রাষ্ট্রের কাছে স্পষ্ট জবাব চাই


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ২২ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০১:০১ পিএম
তবুও কি আমাকে হিজাব পরতে হবে? 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা

নাজনীন মুন্নী

ঘটনা কিছুতেই চোখ থেকে সরছে না, মনে হচ্ছে ঠিক ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি দৃশ্যটি দেখছি। যে কোনও সময় ভয়ঙ্কর কিছু ঘটবে, মেয়েটার কি গায়ে হাত দিচ্ছে সবাই ঘিরে ধরে? নিশ্চয়ই দিচ্ছে। মেয়েটা ভয়ে দু’জন সঙ্গীর মাঝে ঢুকে গেলো। তবুও রক্ষা নেই,  টেনে তার জামা ছিঁড়ে ফেলা হলো। যে ছিঁড়লো তিনিও একজন নারী। আতংক আর অবিশ্বাস নিয়ে ১ মিনিটের কিছু বেশি সময় ধরে চলা ভিডিও দেখলাম। গেলো ২৪ ঘণ্টায় আমার সেই ভয় কাটছে না। এটা আমার দেশ এখন?

ঘটনা বুধবারের। নরসিংদী রেল স্টেশন। এখন পর্যন্ত জানা গেছে– একজন মেয়ে তার দুই পুরুষ সঙ্গী সহ ঢাকায় আসার ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তার পোশাক কেন ‘অশ্লীল’? সেই প্রশ্ন তুলেছেন সেখানকার বয়োবৃদ্ধ একজন মানুষ। সাথে যোগ হয়েছেন আরেকজন নারী। তারপর সেই মেয়েকে নিয়ে টানা-হেঁচড়া। একসময় মেয়েটির টপস টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হলো, মেয়েটি দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের রুমে আশ্রয় নিলেন। যদি সেই আশ্রয় তিনি না পেতেন? কী হতো তার? সব জামা-কাপড় খুলে নেওয়া হতো? সেই প্ল্যাটফর্মে ধর্ষণ করা হতো তাকে?

দম বন্ধ হওয়া এ ঘটনা সত্যি ঘটেছে প্রথমে বিশ্বাস করা কঠিন। একবার না, অনেকবার দেখলাম অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে। কী পরেছিলো মেয়েটি? একটা টপস আর পা পর্যন্ত জিন্স– এই পোশাক কোথায় অশ্লীল?

কিন্তু দেখলাম তারা দল বেঁধে এই দেশের শালীনতা রক্ষায় নেমেছিলো। এমন ঘটনা নতুন নয়। মেয়েদের পোশাক কী হবে এই নিয়ে এখন অহরহ জ্ঞান বিতরণ আর টিপ্পনী চলে রাস্তা ঘাটে। এর আগেও হিজাব পরা এক নারী একটি শার্ট পরা মেয়েকে নাজেহাল করেছে বাসের আরও ৪০ জন মানুষের সামনে। কেউ প্রতিবাদ করেনি। বরং তাদের মৌনতা বলে দিয়েছে ওই নারীর সাথে সহমত তারা। সেই ভিডিও সবার নজরে এসেছে। পুলিশ টিপ পরার অপরাধে নারীকে বাজে মন্তব্য করেছে তাও নজরে এসেছে। পুরো  দিন মনে করার চেষ্টা করলাম। কোনটায় শাস্তি হয়েছে?  মনে পড়লো না।

তার মানে এখন থেকে শালীন পোশাক পরে আমাকে রাস্তায় নামতে হবে। ‘না পরলে এমন অপদস্থ হতে হবে, আমদের কিছু করার নেই’–  রাষ্ট্র কি আমাদের সেই বার্তা দিতে চাইছে?  আরব দেশের পোশাকে সয়লাব এখন আমাদের বাংলা। আমরা কি বলি যে এই পোশাক আমাদের না? আপনারা পরতে পারবেন না?  যদি বলি, কী হবে আমার? কী করা হবে আমাকে এই দেশে? ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। আমি বলতে পারবো না, কিন্তু আমাকে শালীন পোশাক পরতে হবে আপনার পছন্দে।

শালীন পোশাক কোনটা? আরব দেশে যদি আপনি হাফপ্যান্ট পরে ঘুরেন আপনি অশালীন। তেমন সাগর পাড়ে যদি বিকিনি পরা মানুষের সামনে আপনি হিজাব পরেন, আপনি সেখানে হাস্যকর। পুরো মাথা ঢেকে আটোসাটো পোশাক সাথে টকটকে লাল লিপস্টিক আর কড়া মেকাপ আপনার কাছে শালীন। আসলেই শালীন তা?

তবু আমরা সামলে চলার চেষ্টা করি তীব্র গরমে সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে আড়াই হাত ওড়না। তাতেও তো দোষ। ওড়না এক পাশে কেন? ওড়না মাথায় না কেন? ওড়নায় বুক ঢাকে না কেন? শাড়ি? তাতেও শালীন না আমরা। পিঠ দেখা যায় কেন? পেট দেখা যায় কেন? এত টাইট কেন, ব্লাইজের গলা বড় কেন? আমাদের কোনও কিছুই তো আপনাদের শালীন লাগে না। আপনারা আসলে চান সব বাদ দিয়ে আমরা হিজাব পরি। সবাই! তাইতো? আপনারা চাইতেই পারেন সময়টাই আপনাদের।  

কিন্তু আমি জানতে চাই এই রাষ্ট্র কী চায়?  হিজাব পরা যদি কারো অধিকার থাকে তাহলে আমারও যা খুশি পরার অধিকার আছে। আমি যদি হিজাব নিয়ে প্রশ্ন না তুলি, আপনি আমার পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তোলার কে?

মনে করেন আমি মুসলিম না। মনে করেন আমি হিন্দু বা বৌদ্ধ  বা খ্রিষ্টান তবু কি আমাকে হিজাব পরতে হবে? মনে করেন আমি এই দেশে থাকি না। আমি বেড়াতে এসেছি। আমি হিজাব চিনি না। আমি জিন্স আর টপস চিনে বড় হয়েছি। তবুও কি আমাকে হিজাব পরতে হবে? 

রাস্তা ঘাটে, রেল বা বাস স্টেশনে ঘোমটা মাথায় দেওয়া ছাড়া চলতে পারবো না? যদি চলি তাহলে এই অবস্থা হবে? জামা টেনে ছিড়ে আমাকে উলঙ্গ করে দেওয়া হবে? রাষ্ট্রের কাছে স্পষ্ট জবাব চাই, এখন থেকে এটাই দেশের বিধান কিনা– ওই প্রশ্নের উত্তর পেলে আমরা বুঝতে পারবো আমাদের এখন কী করণীয়, আমরা বুঝতে পারবো এক অসম্প্রদায়িক স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখিয়ে আমাদের সমর্থন আদায় কতখানি প্রতারণা ছিল।

লেখক: সাংবাদিক

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image