
নিউজ ডেস্ক: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, অভিবাসন সঙ্কট, করোনা মহামারির অভিঘাতের মধ্যেই ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে রোববার। ২৪ এপ্রিল নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে ডানপন্থী নেতা ম্যারিন লা পেনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেই সঙ্গে তারা ভোটারদের অনুপস্থিতি ও ভোট বর্জনের আশঙ্কার কথাও জুড়ে দিয়েছেন।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাচনী জরিপে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপে মাখোঁ লা পেনের চেয়ে সামান্য এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেছেন, ভোটদানের ওপর সৃষ্ট অনিশ্চয়তা নির্বাচনের ফলাফলকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। অনেক নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের আশঙ্কা, এবার রেকর্ডসংখ্যক ভোটার ভোট বর্জন করতে পারেন। তাদের ধারণা, ভোটারদের এক–চতুর্থাংশ ভোটদানে বিরত থাকবেন।
বিশ্লেষকেরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, জরিপ অনুযায়ী মাখোঁ এবং লা পেন নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছালে তাদের লড়াই ২০১৭ সালের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন হবে। ওই নির্বাচনে মাখোঁ ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেছিলেন।
প্রথম দফার ভোট গ্রহণে একটি অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফরাসি রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্যাসকেল পেরিনিউ। তার মতে, ভোটারদের একটি বড় অংশ এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। অনেকে আবার নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। সেই সঙ্গে অনুপস্থিত ভোটাররাও প্রথম দফার ভোটে প্রভাব ফেলবেন।
বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, ২০০২ সালের রেকর্ড ২৮ দশমিক ৪ শতাংশের প্রথম দফার ভোট বর্জনকারীর হার এবং ২০১৭ সালের অনুপস্থিতির হারকেও (প্রায় ২২ দশমিক ২ শতাংশ) এবার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ইফপ পোলিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফ্রেডেরিক ডাবি এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের এবার একটি অদ্ভুত প্রচারণার অভিজ্ঞতা হয়েছে। অতীতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অভিজ্ঞতার চেয়ে এটি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।’
ফ্রান্সের নির্বাচনে প্রার্থী:
ফ্রান্সের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট প্রার্থী ১২ জন। তাদের মধ্যে আটজন পুরুষ এবং চারজন নারী। প্রধান ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে তিনজন দক্ষিণপন্থী এবং দু'জন বামপন্থী ফরাসি রাজনীতিক।
ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাঁখো দেখা হয় একজন মধ্যপন্থী রাজনীতিক হিসেবে। তিনি রিপাবলিক অন দ্য মুভ পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন। তার প্রতি দক্ষিণ ও বাম উভয় শিবিরের ভোটারদের সমর্থন রয়েছে।
মারিন লা পেন এবং এরিক জিম্যো তারা দুজনেই অতি-দক্ষিণপন্থী। তাদের মধ্যে জিম্যোকে দেখা হয় সবচেয়ে বেশি কট্টরপন্থী হিসেবে।
ভ্যালেরি পেক্রেস দক্ষিণপন্থী রিপাবলিকানদের প্রার্থী হয়েছেন। জ্যঁ-লুক মেলেশঁ নির্বাচন করছেন অতি-বামপন্থী রাজনৈতিক দল ফ্রান্স আনবাউড থেকে এবং ইয়ানিক জাদো গ্রিন পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন। সোশালিস্ট পার্টির ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তার পর থেকে দলটির প্রতি সমর্থন কমে গেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাম শিবিরের এই বিভাজনের কারণে এমানুয়েল মাঁখো লাভবান হতে পারেন, যদিও ডানপন্থীরা অভিযোগ করছেন যে মাঁখো তাদের নীতি অনুসরণ করছেন।
যদি কোন একজন প্রার্থী প্রথম দফার নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পান, তাহলে যে দু'জন প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন তারা পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনে অংশ নেবেন। প্রথম দফার নির্বাচনে কেউই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে যিনি বিজয়ী হবেন তিনিই ১৩ই মে ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: