ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeঅপরাধরাজধানীতে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

রাজধানীতে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:  ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে (২০) দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পানগাঁও ঋষিপাড়া এলাকায় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অভিযুক্ত তরুণেরা ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ সদস্য। যে বাড়িতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সেটি মাসখানেক ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এই সুযোগে সন্ধ্যা হলেই সেখানে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মাদক ও জুয়ার আসর বসাত।

এ ঘটনায় রোববার সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। এতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পানগাঁও বটতলা এলাকার আশরাফুল ইসলাম ওরফে সিয়াম (২০), জীত সরকার (১৯), মো. লিমন (১৮) ও মো. ইয়াসিনকে (১৮) আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আশরাফুল ও জীত গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকি দুজন পলাতক। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ভুক্তভোগী নারীকে আজ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

প্রসঙ্গত গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পানগাঁও ঋষিপাড়া এলাকায় পরিত্যক্ত একটি বাড়ি থেকে এক নারীর চিৎকার শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে যান। তারপর সেখান থেকে সাড়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে উদ্ধারের পাশাপাশি জড়িত দুজনকে আটক করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে যান অভিযুক্ত আরও দুজন।

মামলার এজাহার, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বছর আগে ভুক্তভোগী নারী পরিবারের অমতে এক যুবককে বিয়ে করেন। বর্তমানে তিনি সাড়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ১৫ দিন আগে মনোমালিন্য থেকে স্বামী তাঁকে ঢাকার ভাড়া বাসায় একা রেখে চলে যান। মুঠোফোন বন্ধ করে দেন। স্বামীর কোনো খোঁজ না পেয়ে ওই নারী বাবার বাড়ি চাঁদপুরে ফিরে যান। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা তাঁকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে গত শুক্রবার সকালে তিনি চাঁদপুর থেকে লঞ্চযোগে ঢাকায় ফিরে আসেন। রাজধানীর একটি মাজারে তিনি ওই রাত যাপন করেন।

শনিবার সন্ধ্যার পর ওই নারী পোস্তগোলা সেতু পার হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় স্থানীয় অটোরিকশাচালক আশরাফুল ও জীত তাঁকে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলে অটোরিকশায় করে পানগাঁও ঋষিপাড়া নয়াবাড়ী এলাকার ওই বাড়িতে নিয়ে যান। পরে তাঁরা লিমন ও ইয়াসিন নামের আরও দুজনকে সেখানে ডেকে নেন। রাতে সেখানে তাঁকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হচ্ছিল। একপর্যায়ে রাত একটার দিকে ভুক্তভোগীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে আশরাফুল ও জীতকে আটক করেন। অন্য দুজন লিমন ও ইয়াসিন কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যান।

পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুজনকে আটক করে এবং অসুস্থ অবস্থায় ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

রোববার দুপুর দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সাত ফুট উঁচু সীমানাদেয়াল ঘেরা জায়গার মাঝখানে একটি টিনশেড ঘর। ঘরের ফটক তালাবদ্ধ। জানালা আটকানো। জনশূন্য বাড়িটি ভুতুড়ে অবস্থায় পরিণত হয়েছে।

ওই বাড়িটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা মন্টু মিয়া বলেন, ‘এই বাড়ির মালিক আমার খালাতো ভাই। সে বিদেশ থাকে। পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে এখানে এক পরিবারকে থাকতে দিই। মাসখানেক আগে তারা চলে গেলে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। আজ সকালে লোকমুখে জানতে পারি, কে বা কারা এ বাড়িতে এক মেয়েকে এনে ধর্ষণ করেছে।’

ঋষিপাড়ার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘রাত একটার দিকে ওই বাড়ি থেকে এক মেয়ের চিৎকার শুনতে পাই। তখন ঘরের জানালা খুলে দেখি ওই বাড়িতে লোকজনের ভিড়। পরে সেখানে গিয়ে জানতে পারি, কয়েকজন ছেলে এক মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। এ সময় এলাকাবাসী দুই ধর্ষককে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঋষিপাড়া এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার আশরাফুল, জীত, তাঁর সহযোগী লিমন ও ইয়াসিন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। তাঁরা মাদক ব্যবসা ও জুয়ার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পরিত্যক্ত ওই বাড়িতে মাদক সেবন ও জুয়া খেলেন। তাঁদের সঙ্গে কিশোর বয়সী ছেলেরাও আসত। ভয়ে এলাকাবাসী কিছু বলতে সাহস পেতেন না। এলাকাবাসীর মতে, এলাকায় পুলিশের টহল থাকলে এ ঘটনা ঘটত না। তাঁরা ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, আজ ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। এ মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য কি না, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পলাতক দুজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে রোববার বিকেলে গ্রেপ্তার দুজনকে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাজুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের জাজিরা পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন মিয়া বলেন, আদালতে দুই আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাঁদের প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular