নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস-২০২৫’ উপলক্ষে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ঝুঁকি ভাতা, দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের নেতারা।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম), বাংলাদেশ স্যানিটেশন ওয়ার্কার্স ফোরাম ও নাগরিক উদ্যোগের যৌথ আয়োজনে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শ্রম অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসাইন এবং সঞ্চালনা করেন বিডিইআরএম-এর সাধারণ সম্পাদক শিপন কুমার রবিদাস।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ) এর সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর সহসাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য বাবর চৌধুরী, ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টারের সভাপতি সুলতানা বেগম, মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক নীরদ বরণ মজুমদার, জাত-বর্ণ বিলোপ কনভেনশনের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট উৎপল বিশ্বাস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য জাকিয়া শিশির, সেইফটি অ্যান্ড রাইটসের অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন, বাংলাদেশ স্যানিটেশন ওয়ার্কার্স ফোরামের সমন্বয়কারী গগণ লাল, বিডিইআরএম-এর নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি রাজেন্দ্র কুমার দাস এবং নাগরিক উদ্যোগের ক্যাম্পেইন কো-অর্ডিনেটর ইসতিয়াক মাহমুদ।
বক্তারা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, আইনি সুরক্ষা, আবাসন সংকট, নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং মর্যাদাহীন কাজে যুক্ত থাকলেও তাদের নিরাপত্তা, ন্যায্য মজুরি এবং সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়নি। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দায়িত্ব পালনের সময় উপযুক্ত কর্মপরিবেশ, পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদানের ওপর বক্তারা জোর দেন।
সমাবেশে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
১. পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য বেতন কাঠামো প্রণয়ন এবং শ্রম আইনের মাধ্যমে অধিকার সুরক্ষা।
২. চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে চাকরি স্থায়ী করা ও ‘নো-ওয়ার্ক, নো-পে’ প্রথা বন্ধ করা।
৩. ঐতিহ্যগত অবদান বিবেচনায় ৮০ শতাংশ নিয়োগ নিশ্চিত করা।
৪. নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা।
৫. মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান চালু।
৬. হাত দ্বারা সেপটিক ট্যাংক পরিস্কার নিষিদ্ধ করা, দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান রাখা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান।
৭. নিয়মিত ও পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ।
৮. চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, সেলুন ও মন্দিরে প্রবেশে বাধা দূর করা।
৯. স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা ও উচ্ছেদ বন্ধ।
১০. পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সন্তানদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে বৈষম্যহীনতা নিশ্চিত এবং বিদেশে চাকরির সুযোগ তৈরি।
১১. পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরকে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা।
বক্তারা সরকারের প্রতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মানবিক মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।