বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চা শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়তে হবে এবং এ শিল্পের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন হবে সমন্বিত প্রচেষ্টা।
১৭ মে শনিবার শ্রীমংগলস্থ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের ভবন উদ্বোধন শেষে চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, দেশের চা শিল্পের উন্নয়ন ও চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে আস্থা ও ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন। চা বাগানগুলোর শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, বসবাসের উন্নত পরিবেশ, স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও পানি সরবরাহকরণ সুবিধা, চিকিৎসা সুবিধা ও শিশুদের প্রাথমিক ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চা শ্রমিকরা নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। অনেক বাগানে এখনও মজুরি কম, বাসস্থানের অবকাঠামো দুর্বল, এবং স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল। এছাড়া, চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ না থাকায় নতুন প্রজন্মও বাধ্য হয় চা বাগানের কাজে যোগ দিতে। চা সেক্টরের সকল সমস্যা সমাধানে শ্রমিক সংগঠন ও বাগান মালিকদের এগিয়ে আসতে হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, শুধু মজুরি বৃদ্ধিই নয়, শ্রমিকদের জন্য আবাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো মৌলিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা হবে। এ লক্ষ্যে সরকার, মালিক পক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ট্রাইপার্টাইট কমিটি গঠন করা হবে। বাংলাদেশের চা শিল্পের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে কিন্তু শ্রমিকদের দুর্দশা এই শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। শ্রমিক-মালিক সংঘাত কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো গেলে এই শিল্প আবারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারে। সর্বস্তরের সমন্বয় ও সদিচ্ছাই পারে চা শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে। সরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে স্থানীয় উদ্যোগ—সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, চা শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক উন্নয়ন জরুরি। সরকার ইতোমধ্যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও শ্রমিকদের কল্যাণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে বাস্তবায়নে উভয় পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। চা শ্রমিকের জন্য টিসিভির পণ্য বিতরণ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করা হবে।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দরা শ্রমিকদের ছুটি বৈষম্য, পেনশন গ্রাচুয়েটি, বাসস্থান, নির্বাচন ব্যবস্থা তরান্বিতকরণ, শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের মানোন্নয়ন, সন্তানদের জন্য কারিগরি শিক্ষা, এডহোক কমিটি গঠন, বকেয়া মজুরি, জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা, অস্থায়ী শ্রমিকদের বিধি মোতাবেক স্থায়ীকরণ, শ্রমিকদের প্রফিডেন্ট ফান্ডের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ, চা বাগান এলাকায় অবস্থিত স্কুলগুলো সরকারীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের শেষে পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে অফিস প্রাঙ্গণে গাছের চারা রোপণ করা হয়।
ঢাকা নিউজ/এস