বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা: নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে চীন আরও গভীরভা্বে সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছে’ বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
৫ দিনের চীন সফর শেষে দেশে ফেরার পরে সোমবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব চীনের এই আগ্রহের কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘‘ চীন আশা প্রকাশ করেছে যে, নির্বাচিত সরকারের আরও গভীর দৃঢ়তার সঙ্গে, আন্তরিকতার সঙ্গে, ভালোবাসার সঙ্গে, প্রেমের সঙ্গে কাজ করবে… তাই বলেছে।এক চীন নীতির প্রতি বিএনপি তার দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছে। সার্বিকভাবে এই সফরের মাধ্যমে আমরা এই দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও উন্নততর, আরও ঘনিষ্ঠতর করার সুযোগ পেয়েছি যা আগামীতে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশাবাদী।
বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরাতে চীনের মনোভাব কী প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব সোজাসাটা জবাব দেন, ‘‘অত্যন্ত পজেটিভ দেখেছি। তারা নির্বাচিত সরকারের সাথে আগ্রহের কথা বলেছে।”
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থান এবং তাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে চীনের সাথে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ স্বেচ্ছা এবং সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে চীনের অধিকতর এবং কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি।”
চীন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে কী বলে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আলোচনায় ওরা(চীন) বলেছে যে, তারা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে এবং ঐকান্তিকতার সঙ্গে এই বিষয়টির ওপর কাজ করছেন।”
‘‘ মিয়ানমার সরকারকে তারা রাজি করার চেষ্টা করছে যাতে খুব দ্রুত এই প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরু হয়।”
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গত ২২ জুন বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে দলের উচ্চ পর্যায়ের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল চীন সফরে যান। মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল বেজিংয়ে ‘গ্রেট হল অব পিপলে’ চীনা কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিসি) এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী মিস্টার লিউ জিয়ানচাও, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার মিসেস সান হাইয়ানের সাথে বৈঠক হয়।
এছাড়া চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সুং-ওয়ে-ডং এর সাথে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির প্রতিনিধি দল সানজি প্রদেশের রাজধানী জিয়াং এ বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বি ওয়াই ডি, হাইটেক প্রযুক্তি পার্ক, জিয়াংটং বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন, সানঝি প্রদেশে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং জিয়ান শহরে একটি আদর্শ গ্রাম পরিদর্শন করেন।
‘বিএনপি এক চীন নীতিতে বিশ্বাসী’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বিএনপি একচীন নীতিতে বিশ্বাসী। আমরা কিন্তু এক চীন নীতি থেকে কখনো সরিনি। তাইওয়ানের একটা ট্রেড সেন্টার এখানে(ঢাকায়) কয়েকদিনের জন্য খোলা হয়েছিলো। তারপরে সেটাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।”
‘‘ আমরা এক চীন নীতিতে বিশ্বাস করি… এটা আমরা আপনাদের বার বার বলেছি।”‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ চীনের আগ্রহ যথেষ্ট রয়েছে যে, আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখি।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং আমাদের যে প্রয়োজন সেটা আমরা ব্যাখ্যা করেছি।”
‘‘ তারা(চীন) এটাতে ইতিবাচকভাবে সাড়াও দিয়েছেন। এটার উপরে তারা কাজ করছেন। আমরা অবশ্যই তাদের প্রস্তাব যদি তারা দেয় সেই বিষয়টা ভবিষ্যতে যদি আমরা কখনো সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আসি তখন সেটা ইতিবাচকভাবেই দেখব বলে তাদেরকে আমরা বলেছি।”
‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিসিয়েটিভ’ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ অনেকগুলো কাজই আপনার আছে যেগুলো ইতিমধ্যে হয়েছে আর যদি কোনো কাজ থাকে বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ যদি মনে করে সেই কাজগুলো বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে তা নিসন্দেহে তা বিবেচনা করা হবে।”
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে বৈঠকে বৈঠকের বিষয়বস্ত তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের পক্ষ থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ‘এক চীন নীতি’র প্রতি আমাদের দলীয় অবস্থান দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয়েছে।
ঢাকা নিউজ/এস