মিঠু সূত্রধর পলাশ, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়ন ফতেহপুর গ্রামে একটি সরকারি রাস্তা দখল করে বাঁশের বেড়া দিয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। এতে করে গ্রামের সাধারণ মানুষের চলাচলসহ একমাত্র কবরস্থানে যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ঘটনায় গ্রামজুড়ে চরম উত্তেজনা ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদেই এই বেড়া স্থাপন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ১ জুলাই (মঙ্গলবার) দুপুরে নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নের ফতেহপুর পশ্চিমপাড়া ভূঁইয়া বাড়ির পাশে মো. বসু মিয়া তার জমি দাবি করে সরকারি রাস্তার ওপর বাঁশের বেড়া নির্মাণ করেন। ফলে ঈদগাহ ও কবরস্থানে যাওয়া ছাড়াও ফতেহপুর গ্রামের মূল যাতায়াতপথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে শিশুসহ বৃদ্ধ, রোগী ও সাধারণ মানুষদের চলাচলে চরম ভোগান্তি দেখা দেয়। মৃত ব্যক্তির লাশ কবরস্থানে নেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে।
এই ঘটনায় ৬ জুলাই (রবিবার) বিকেলে ভুক্তভোগী সাইদুর রহমান ভূঁইয়া নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি’র) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগপত্রে বলেন, আমার পৈত্রিক ভোগদখলীয় সম্পত্তির পাশ দিয়ে যে সরকারি রাস্তা রয়েছে, সেটি দিয়ে গ্রামের মানুষ কবরস্থান ও ঈদগাহে যাতায়াত করে। ১ জুলাই বসু মিয়া, এমরান হোসেন, সোহেল মিয়া, সুমন মিয়া, রফিকুল মিয়া ও লিটন নামের ছয়জন ব্যক্তি বাঁশের বেড়া দিয়ে সেই পথটি বন্ধ করে দেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে আমাকে গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়া হয়। এতে এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সুমন মিয়া এবং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল মিয়াসহ প্রায় ২০-২৫ জন এ বেড়া বসানোর জন্য বসু মিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করেছেন বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ বারেক মিয়া জানান, প্রায় ১০/১২ বছর পূর্বে মরহুম মহন মেম্বার গ্রামের সাধারণ মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তাটি নির্মাণ করেছিল। তারপর থেকে গ্রামবাসী এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে আসছে। এই রাস্তা দিয়ে কবরস্থানে লাশ নেয়া হয়, গত ১ জুলাই রাস্তার মাঝ খানে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়েছে বসু মিয়া ও তার লোকজন। এতে গ্রামবাসীর যাতায়াত করতে অসুবিধা হচ্ছে। দ্রুত বেড়া সরিয়ে রাস্তা উন্মুক্ত করার দাবি জানান এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সফর আলী বলেন, এই রাস্তা আমার বাবার সময় থেকেই ছিল। আমি নিজেও এটি সংস্কার করেছি। অথচ কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি আজ এটি বন্ধ করে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ অমানবিক।
অন্যদিকে অভিযুক্তদের একজন বসু মিয়া নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আমার নিজস্ব জায়গায় বেড়া দিয়েছি। অভিযোগকারী যেখানে বলছেন, সেটি তার জায়গা নয়। আমি কারও চলাচলে বাধা দেইনি।
নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীনূর ইসলাম জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট না হয়ার জন্য আমি ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জায়গাজমি নিয়ে সমস্যা হলে ওটি ল্যান্ড কমিশন দেখবেন।