নিউজ ডেস্ক: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যাংককে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন, তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ।
৮ এপ্রিল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিষয়টি উত্থাপন করেছি, তবে কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।’
প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি চীনে তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর শেষ করে পরবর্তীতে থাইল্যান্ডে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন এবং সেখানে তিনি শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।চীন এবং থাইল্যান্ড উভয় সফরই বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ করেছে।
ব্যাংককে ইউনূস-মোদি বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি সাংবাদিকদের বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পরিবেশ নষ্ট করতে পারে এমন বক্তব্য থেকে বিরত থাকতে প্রধানমন্ত্রী মোদি সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন।আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’ বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হোসেন। ভারতীয় ভিসা ইস্যুতে উপদেষ্টা বলেন, ভারত ভিসা দেবে কি দেবে না সেটা সম্পূর্ণ তাদের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতে ভারতের ভিসা ইস্যু সাময়িকভাবে স্থগিত করেছি।ভিসা নিষেধাজ্ঞা কোনো শূন্যতা তৈরি করে না। তিনি আরও বলেন, ‘যখন কোনও দেশ ভিসা স্থগিত করে, তখন মানুষ অন্যত্র বিকল্প অনুসন্ধানের প্রবণতা দেখায়।’
চীনকে সম্পৃক্ত করে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে হোসেন বলেন, ভারত ও চীন উভয়ের সঙ্গেই বাংলাদেশ সহযোগিতার জন্য উন্মুক্ত।সরকার উদার অবস্থান নিয়েছে। আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত এবং মূল্যায়ন করব কোথায় বাংলাদেশের স্বার্থ সবচেয়ে ভালোভাবে পূরণ করা হচ্ছে।
তিস্তা প্রকল্পে চীনের একটি কোম্পানির সম্পৃক্ততাকে বাংলাদেশ সরকার স্বাগত জানানোর পর অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অগ্রগতিতে সময় লাগে। আমরা রাতারাতি এমন কোনো সমাধান আশা করছি না, যা তিস্তা সমস্যার দ্রুত সমাধান করবে।’
তিনি বলেন, ভারত বা চীন উভয় দেশের সঙ্গেই সহযোগিতা সম্ভব। কোনও বাধা নেই।চীন সফর সম্পর্কে হোসেন বলেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। সফরকালে বেশ কয়েকটি দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং প্রধান উপদেষ্টা ও চীনা প্রেসিডেন্ট পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমি বিশ্বাস করি এই সফর যৌক্তিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, মিয়ানমার নিশ্চিত করেছে যে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এক লাখ ৮০ হাজার মিয়ানমার নাগরিক প্রত্যাবাসনের যোগ্য। তবে রাখাইন রাজ্যে বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে তাৎক্ষণিক প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।
ইতালীয় ভিসা প্রাপ্তিতে বিলম্ব সম্পর্কে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিক্ষোভের বিষয়ে মন্তব্য করে হোসেন বলেন, রোমের সঙ্গে ঢাকা ধারাবাহিকভাবে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। ভিসা আবেদনের সঙ্গে জমা পড়া কাগজপত্রের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিপুল সংখ্যক ভুয়ো নথির হদিশ মিলেছে।
ঢাকা নিউজ/এস