বিজয় কর রতন, মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: ডাক্তারের চেম্বারের সামনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত অসুস্থ পুরুষ-মহিলাদের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ লাইন।কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন চিত্র প্রতিদিনের। সকাল থেকেই দূর দূরান্ত থেকে গরীব অসহায় মানুষগুলো ছুটে আসে কিছু ঔষধ আর ডাক্তারের পরামর্শের জন্য।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কার্যক্রম। ৫০ শয্যা এ হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। যথাযথ ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল টেকনিশিয়ান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং কর্মচারী না থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার প্রায় দুই লাখ সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৭ সালে হাসপাতালটি কে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়। দীর্ঘদিনেও অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেবার মানে উন্নীত হয়নি হাসপাতালটিতে। সরজমিনে গত বৃহস্পতিবার সকালে ইটনা হাসপাতালে গেলে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, সরকারী বিধি মোতাবেক অনুমোদিত ডাক্তার ১৯ জন থাকার কথা থাকলেও বিদ্যমান রয়েছে ৩ জন। এছাড়াও অভাব রয়েছে নার্স, এক্সরে টেকনিশিয়ান, রেডিও টেকনিশিয়ান আল্ট্রাসাউন্ড ডাক্তার, দাঁতের ডাক্তার, হেড এসিস্ট্যান্ট, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনারসহ একাধিক পদ যা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমেও জনবল সংকট মিটানো সম্ভব হচ্ছে না।
শিক্ষার্থী সাকার হোসেন বলেন, হাসপাতালে এমনিতেই জনবল সংকট তারপর আবার বড় কর্মকর্তা তিনি নিজেও নিয়মিত হাসপাতালে থাকেন না। হাসপাতালে মানুষ আসেন সুস্থ হওয়ার জন্য কিন্তু এইখানে চিকিৎসা না পেয়ে অসুস্থ হয়েই বাড়িতে ফিরতে হয়। আমরা কবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো?
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবুল কালাম জানান, সেবার মান ভালো দিতে হলে সঠিক জনবল দরকার। আমি যে পোস্টে কাজ করি এই পোস্টে ১১ জন লোক থাকার কথা কিন্তু মাত্র আছে ৩ জন। ছুটিতে গেলে চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকে যার জন্য কেউ ছুটিতে যাওয়া হয় না। এই হাসপাতালে অতিদ্রুত জনবল বৃদ্ধি করা দরকার।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ বলেন, এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরেই তিনজন স্টাফ নার্স দিয়ে জরুরী বিভাগ চালাচ্ছি যা আমাদের জন্য কষ্টকর। আমরা কোনো সরকারি ছুটি কাটাতে পারি না কারন ছুটিতে গেলে জরুরি বিভাগে মানুষ চিকিৎসা পাবে না। এই সমস্যা গুলো উপর মহলে চিঠি লিখেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি আধুনিক মেশিন থাকার পরও মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাবে এক্সরে মেশিনের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অতিশ দাস রাজীব বলেন, হাসপাতালে জনবল বাড়ানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেকবার চিঠি লেখা হয়েছে কিন্তু এখনও তেমন জনবল পাওয়া যায়নি।দীর্ঘদিন ধরে অপারেশন থিয়েটারটি জনবলের অভাবে বন্ধ থাকায় গর্ভবতী রোগীদের নিয়ে বাধ্য হয়ে শহরে ছুটেছে সাধারণ মানুষ। জনবল সংকট মিটানো সম্ভব হলে সেবার মান আরোও বৃদ্ধি হবে। তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, মায়ের অসুস্থতার জন্য ছুটিতে ছিলেন। দ্রুত সময়ে জনবল সংকট নিরসনে ব্যবস্থা নিবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।