ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeজাতীয়গাজীপুরে ঈদের আগে বেতন অনিশ্চিত ২৭ কারখানায়, সড়ক অবরোধের আশঙ্কা

গাজীপুরে ঈদের আগে বেতন অনিশ্চিত ২৭ কারখানায়, সড়ক অবরোধের আশঙ্কা

গাজীপুর প্রতিনিধি: শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধসহ নানা আন্দোলন-সংগ্রামের পরও এবার ঈদুল ফিতরের আগে অন্তত ২৭টি কারখানায় শ্রমিকদের বেতন পরিশোধে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ঈদযাত্রায় সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটলে মানুষের ভোগান্তি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শিল্প পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুরে ঈদের আগে ৯২ ভাগ কারখানায় বেতন পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এখনো বেতন পরিশোধ করতে পারেনি ২৭টি কারখানা। বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, আগামী দুই দিনের ভেতর বেশির ভাগ কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে।

বকেয়া পাওনাসহ নানা দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিকরা প্রায়ই আন্দোলনে নামছেন। প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও আন্দোলন, সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর গাজীপুরে অন্তত ৯৫ বার মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকেরা। পবিত্র রমজান মাসে এ আন্দোলন আরও বেগবান হয়।

গত মঙ্গলবার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে তিন মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদের বোনাসের দাবিতে শ্রমিকেরা সকাল সাড়ে সাতটা থেকে এক ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে যৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান। উপজেলার টপস্টার এলাকায় হ্যাগ নিট-ওয়্যার নামের কারখানায় এ শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে।

তার আগের দিন ২৩ মার্চ কালিয়াকৈরে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে মৌচাক ফুলবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এসময় এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে বহিরাগতদের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থলে ১০-১২ জন শ্রমিক আহত হন।

শ্রমিকদের অভিযোগ, মালিকপক্ষের ইন্ধনে ওই এলাকার বহিরাগত সন্ত্রাসীদেরকে এনে শ্রমিকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এসময় ১০-১২ জন শ্রমিক আহত হন। এছাড়া একই দিন বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিআইবিএস কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে যৌথবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেন।

এছাড়া তেলিপাড়া এলাকায় ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন লুমেন টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা। এর আগে একই এলাকার স্মাগ সোয়েটার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা ঈদ বোনাস বাড়ানোর দাবিতে টানা তিন ঘণ্টা মহাসড়ক আটকে বিক্ষোভ করেন। ওই দিন শ্রমিক আন্দোলনের জেরে অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে আশপাশের পাঁচ থেকে ছয়টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুরে সবচেয়ে বেশি আন্দোলন করেছেন চক্রবর্তী এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা। গত ১৬ ডিসেম্বর পার্কের ১৬টি কারখানা একযোগে বন্ধ ঘোষণা (লে-অফ) করা হয়। এরপর ১৭ ডিসেম্বর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। পাশাপাশি চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। টানা ছয় দিন অবরোধের পর বেতন পেয়ে তারা মহাসড়ক ছাড়েন। একইভাবে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার গ্লোবাল অ্যাপারেলস লিমিটেড ও আগামী ওয়াশিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। জিরানী এলাকার রেডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল ও আইরিশ ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকেরা হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল ও নাইট বিল বাড়ানোর দাবিতে টানা চার দিন চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সেসময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন কোনাবাড়ীর ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেড, রেজাউল অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যাশন সুমিট লিমিটেড, কেএম নোভেলি লিমিটেড, স্বাধীন ফ্যাশন, ফ্যাশন পয়েন্ট, লাইফট্যাক্স লিমিটেড, কানিজ ফ্যাশন, এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড, পিএন কম্পোজিট, মুকুল নিটওয়্যার, কটন ক্লাব, এ্যামা সিনট্যাক্স, বেসিক ক্লথিং ও অ্যাপারেলস প্লাসের শ্রমিকেরা। চন্দ্রা এলাকায় মাহমুদ জিনস ও নূরুল স্পিনিং কারখানার শ্রমিকেরাও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।

এছাড়া পানিশাইল এলাকার ডরিন ফ্যাশন, চন্দ্রা এলাকার মাহমুদ জিনস, নূরুল ইসলাম স্পিনিংয়ের শ্রমিকেরা নানা দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন। এভাবে গত আট মাসে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৯৫ বার মহাসড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে।

শ্রমিক আন্দোলন ও কথায় কথায় মহাসড়ক অবরোধের কারণে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন মহাসড়ক ব্যবহারকারী যাত্রী ও চালকরা।

এ ব্যাপারে রাজিব পরিবহনের চালক বুলবুল বলেন, মানুষের ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে কিন্তু কারখানা শ্রমিকদের আন্দোলন, সড়ক অবরোধ থামেনি। মহাসড়কে প্রায় শ্রমিকরা অবরোধ করেন, এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয়। তাদের এই আন্দোলন চলতে থাকলে ঈদে মানুষের বাড়ি ফেরা কষ্ট হবে।

দাবি আদায়ে মহাসড়ক অবরোধের কারণ জানতে চাইলে কারখানার শ্রমিক ইলিয়াস আলী বলেন, সড়কে না নামলে কেউ আমাদের কথা শুনে না। আমরা পেটের দায়ে কাজ করি, বেতন না পাইলে ঈদ কেমনে করমু, বাড়িতে মা বাবা আছে তাদেরই কী পাঠামু।

শিল্প পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত গাজীপুরে বেতন প্রদান করেছে ৯২ ভাগ কারখানা, ঈদ বোনাস প্রদান করা হয়েছে ৫৮ ভাগ কারখানায়। তবে ঈদের আগে বেতন-বোনাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে ২৭টি কারখানায়। এছাড়া বুধবার থেকেই অনেক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআইয়ের সদস্য ও ডিবিসি নিউজের পরিচালক মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে বেশির ভাগ কারখানায় মালিকপক্ষ বেতন ভাতা পরিশোধ করেছেন। আগামী দুই দিন সময় আছে। আমি মনে করি এ সময়ের মধ্যে পুরো বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে সক্ষম হবেন কারখানা মালিকরা।

সড়ক অবরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রমিকদের কোনো সমস্যা থাকলে তারা বিজিএমইএতে যেতে পারেন, সেখানে সবার কথা বলার সুযোগ আছে। কিন্তু তা না করে যখন তখন মহাসড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করায় মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করতে নানা চক্রান্ত করা হচ্ছে। এ জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ এর পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, বুধবার পর্যন্ত গাজীপুরে ৯২ ভাগ প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেছেন। আমরা চেষ্টা করছি সব কারখানায় যাতে ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে পারে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular