ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeসংগঠন সংবাদমহাখালী ডিওএইচএস থেকে দ্রুত সিগারেট কারখানা অপসারণ জরুরী

মহাখালী ডিওএইচএস থেকে দ্রুত সিগারেট কারখানা অপসারণ জরুরী

নিউজ ডেস্ক: পরিবেশ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুসারে তামাক কোম্পানি একসময় লাল শ্রেনীভুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিলো। পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্যের উপর তীব্র প্রভাব ফেলে বিধায় আবাসিক এলাকায় লাল শ্রেনিভুক্ত শিল্প কারখানা কোনভাবেই থাকতে পারবে না। বিষয়টি অনুধাবন করে ২০২৩ সালে সংশোধিত বিধিমালায় খুবই চতুরতার সাথে তামাক লাল থেকে কমলা শ্রেণীতে নিয়ে আসা হয়েছে।

ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদন করার পরেও নীতি নির্ধারকদের প্রভাবিত করে তামাক কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক এলাকায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সিগারেট কারখানা অবিলম্বে মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকা থেকে অপসারণ করে শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া জরুরি। একই সাথে দেশে নতুন কোন তামাক বা সিগারেটে কোম্পানির অনুমোদন না দেয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আজ বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট আয়োজিত “তামাক কোম্পানির কার্যকলাপ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি : আইন শক্তিশালী করা জরুরি শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ আহবান জানানো হয়।

বাংলাদেশ সংবিধানে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও, কতিপয় সরকারী সংস্থা সিগারেট কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপ নিচ্ছে। মহাখালী ডিওএইচএস ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশ্র আবাসিক এলাকা। বিএটি’র কারখানা থেকে নির্গত তামাকের রাসায়নিকের কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে, শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তামাক পাতা আনা-নেয়া এবং উৎপাদিত তামাক পণ্য সারাদেশে পরিবহনের কাজে বড় বড় ট্রাক-লরির আগমনে এ এলাকায় সড়কের উপর ব্যাপক চাপ পড়ছে। যা যানজট, শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণও সৃষ্টি করছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশ শহরের মাঝখান থেকে ক্ষতিকর তামাক কারখানাগুলো সরিয়ে সেখানে স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলছে। যেমন: তামাক কোম্পানির একচেটিয়া মালিকানাধীন ২০০ একর জমির একটি প্লট ব্যাংককে বেঞ্জাকিট্টি ফরেস্ট পার্ক করা হয়েছে, বর্তমানে যা একটি পাবলিক পার্কে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯২৭ সালে নির্মিত গ্রীসের এথেন্সের একটি তামাক কারখানা, সুলায়মানিয়া, কুর্দিস্তানের একটি তামাক কারখানা বর্তমানে সংস্কৃতিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে-র আপিল বিভাগ ভয়েজ অব ডিসকভারী সংক্রান্ত এক রীট মামলায় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ, নতুন তামাক কোম্পানির লাইন্সেস না প্রদান এবং বিদ্যমান তামাক কোম্পানিগুলোতে তামাক ব্যবসা হতে সরিয়ে আনার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছে। অথচ তামাক পাতার রপ্তানি শুল্ক ২৫% থেকে কমিয়ে শূণ্য শতাংশ করা হয়েছে। ফলে দেশে তামাক চাষ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের খাদ্য সংকটকে প্রকট করবে।

জনস্বাস্থ্যকর্মীরা আরও বলেন, আপীল বিভাগ নতুন কোন সিগারেট কোম্পানি স্থাপনের অনুমোদন না দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করলেও বেপজা ও বিডা দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ বৃদ্ধির নামে শিল্প এলাকায় নতুন সিগারেট ও তামাক কোম্পানি অনুমোদন দেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যা সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্যের সামিল। প্রজাতন্ত্রের এই দুই সংস্থাকে আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আপীল বিভাগের নির্দেশনা পালন প্রজাতন্ত্রের সকল বিভাগের দায়িত্ব। নিজের দেশের মানুষের স্বাস্থ্য, পরিবেশ ধ্বংস করে বিনিয়োগ কোন ধরনের উন্নয়ন নয়। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষা করে উন্নয়ন করা যায় এমন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ নিশ্চিতে বিডা ও বেপজাকে আমরা আহবান জানাচ্ছি।

দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবাদী এবং তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো তামাক কোম্পানির অনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের আহবান জানিয়ে আসছে। সিগারেট কোম্পানির আগ্রাসন থেকে সুরক্ষায় অন্যতম রক্ষাকবচ বৈশ্বিক চুক্তি এফসিটিসির অনুচ্ছেদ ৫.৩ বাস্তবায়ন, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির (CSR) অপব্যবহার বন্ধ করা , তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার এবং তামাক কোম্পানির ২৫% শুল্ক পূর্ন:বহাল করার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ সংশোধন

করে তামাকের মতো ক্ষতিকর পণ্যকে পুনরায় লাল তালিকাভুক্ত করা জরুরি। অনতিবিলম্বে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা মহাখালীর ডিওএইচএস থেকে বিএটি’র তামাক কারখানা অপসারণ করে এখানে একটি জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী পার্ক নির্মাণ করার দাবি জানাই। একই সাথে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি জানাই।

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ এর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ, কে. এম. মাকসুদ। সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, বিইউএইচএস এর ডিপার্টমেন্ট অব অকোপেশনাল এন্ভারমেন্টাল হেলথ ফ্যকালটি প্রফেসর এ. এফ. এম সরোয়ার, ডেভেলপমেন্ট এ্যাক্টিভিটিস অব সোসাইটির টিম লিড, টিসিআরসি এর সদস্য সচিব মো.বজলুর রহমান, বিএনটিটিপি’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, ৭১ টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুশান্ত সিনহা । সভাটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা অনন্যা রহমান। সংবাদ সম্মেলনে অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমকর্মীসহ আরো উপস্থিত ছিলেন তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত স্থানীয় সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular