ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeসারাদেশকুমিল্লালাকসামে ডাকাতিয়া নদী খনন-সংস্কার ঝুলে আছে ৫৩ বছর

লাকসামে ডাকাতিয়া নদী খনন-সংস্কার ঝুলে আছে ৫৩ বছর

মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম, কুমিল্লা : কুমিল্লার বৃহত্তর লাকসাম উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ডাকাতিয়া নদীটি এখন এলাকাবাসীর গলার ফাঁস। নদীটি দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় কুমিল্লা, চাঁদপুর ও লক্ষীপুর জেলার লাখ লাখ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে নদীতে পানি না থাকায় সেচ যন্ত্র বন্ধ; ব্যাহত হচ্ছে ইরি-বোরোসহ রবি ফসলের আবাদ। থামছে না নদীর দু’পাড়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ জবর দখল। স্বাধীনতার ৫৩ বছর ধরে ওই নদীটির সংস্কার ও পূনঃ খনন প্রকল্পটি ঝুলে আছে। সময়ের বিচারে ওই নদী যেন আজ অস্তিত্ব সংকটে। তবে বিগত সরকার ডাকাতিয়া নদীটির কিছু কিছু অংশে খনন ও সংস্কার কাজ শুরু করলেও তা অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ। গত সপ্তাহে উপজেলা প্রশাসন লাকসামের অংশে পানি বদ্ধকতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নিয়ে প্রশংসার দাবিদার হলেও জবর-দখল ঘিরে কোন তৎপরতা না থাকায় এলাকার জনমনে নানাহ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এছাড়া এ ডাকাতিয়া নদীর উপর বিগত সরকার বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক ব্রীজ নির্মাণ করলেও কাজের ধীরগতি এবং কর্মকান্ড নিয়ে নানাহ প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকির অভাব, দায়িত্বহিনতা ও রহস্যজনক কারণে নিরবতাই এ প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ অনেকটাই ঝুকিতে পড়বে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ডাকাতিয়া নদীটিতে পলি মাটি জমতে জমতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃহত্তর লাকসামের বাগমারা বাজার থেকে চিতোষী শান্তিরবাজার পর্যন্ত ৭০/৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীটি শুকনো মওসুমে পানি শুন্য থাকে। ফলে বছরের বেশিরভাগ সময়েই নদীতে পণ্য পরিবহন ও জন যাতায়াত বন্ধ এবং পানি না থাকায় কৃষকরা ইরি, বোরো ফসলসহ রবি শস্য উৎপাদনে দারুন হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্ষাকালের শেষ মূহূর্তে এসে নদীটিতে পানি ভর্তি থাকার কথা থাকলেও ধীরে ধীরে পানি শূন্যতার দিকে যাচ্ছে। চলমান ইরি-বোরো মওসুমে পানির চাহিদা বৃদ্ধি থাকে। তখন পানির জন্য এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে হাহাকার পড়ে যায়। কুমিল্লার লালমাই থেকে শুরু করে চিতোষী শান্তিরবাজার পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর দু’পাড় বিগত কয়েক বছরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের জবর দখলে। কোথাও কোথাও ডাকাতিয়ার তীরেই গড়ে ওঠেছে আবাসন প্রকল্প কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ১৩০ ফুট প্রস্থের ডাকাতিয়া নদী এখন ৫০/৬০ ফুটে এসে ঠেকেছে। ঘাঘৈর, বেরুলা, কার্জন ও চাইলতাতলি খালসহ ডাকাতিয়া নদীর সংযোগ অন্যান্য শাখা খালগুলোও দখল হয়ে পড়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। এ অঞ্চলের উৎপাদনযোগ্য প্রায় ২০ হাজার একর কৃষি জমিতে ৬/৭ মাসের ফসল দিয়েই নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে পুরো বছর পার করেও বাইরের জেলায় সরবরাহ সম্ভব। আবার নদীতে মাছ শিকারী জেলে ও নৌকা বেয়ে মাঝি-মাল্লাসহ জীবিকা নির্বাহকারীদের অনেকেই পৈত্রিক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকেছে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, এককালের ডাকাতিয়া নদীকে ঘিরেই দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো গড়ে ওঠে। বৃহত্তর লাকসামের সু-প্রসিদ্ধ বাণিজ্যিক কেন্দ্র দৌলতগঞ্জ বাজার থেকে ঢাকা, চাঁদপুর, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, ফরিদপুর, নোয়াখালী, ল²ীপুর, বরিশাল, ভোলা, হাতিয়া, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ দেশের বড় বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্রের সাথে বহু যুগ ধরে নৌ যোগাযোগ ছিল। বর্তমানে নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় সেসব বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর সাথে বৃহত্তর লাকসামের নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর থেকে এ অঞ্চলে নদীটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন বহু মন্ত্রী-এমপি, নেতা-নেত্রী। কৃষকদের স্বার্থে, এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ডাকাতিয়া নদীটি সংস্কার, বিভিন্ন পয়েন্টে সুইসগেট কাম-রেগুলেটর নির্মাণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ স্থাপনসহ বেদখল হয়ে পড়া নদীর দু’পাড়ের হাজার হাজার একর জমি উদ্ধারে বছরের পর বছর এলাকাবাসীর দাবি। এছাড়া বর্তমানে নদীটিতে কুচুরী ফেনায় ভরে গেছে এবং এ নদী ঘিরে এ অঞ্চলের প্রায় শতাধিক নৌঘাট আজ প্রযুক্তিযুগে এসে হারিয়ে গেছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন ডাকাতিয়া নদীটির বাঁচানোর উদ্যোগ আলোর মুখ দেখে না কেন ?

এ ব্যাপারে জেলা- উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেও কোন ফলপ্রসু জবাব পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক চাপের কথা শিকার করে ওই নদীটির বিভিন্ন সমস্যা স্থানীয় ভাবেই সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু আমরা এ অঞ্চলে পেটের দায়ে চাকুরী করতে এসেছি ইচ্ছা থাকলেও মুখ খুলতে পারছি না।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular