নিউজ ডেস্ক: কতিপয় জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত একটি সংবাদ মন্ত্রণালয়ের গোচরীভূত হয়েছে। “উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট, চার মাস পর বরখাস্ত শিক্ষক” এই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বরখাস্তকৃত সহকারী শিক্ষকের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য পরিবেশিত হয়েছে। তার বক্তব্যের ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দুর করতে এবং প্রকৃত ঘটনা স্পষ্টীকরণের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করছে।
প্রকৃত ঘটনা হল- কুড়িগ্রাম জেলাধীন রাজারহাট উপজেলার আবুল কাশেম বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জনাব মনিবুল হক বসুনীয়া তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি https//facebook.com/con/share/p/15fJhojZVs/ থেকে গত ১২ মে ২০২৫ তারিখে একটি নেতিবাচক ও কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করেন। এই পোস্টে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘন্টা বৃদ্ধি, শনিবার বিদ্যালয় খোলা রাখা, এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে শিষ্টাচার বহির্ভূত ভাষা (উচ্চারণযোগ্য নয়) ব্যবহার করে তার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন।
এই পোস্টে ১০ মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪ প্রদান এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৫ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘন্টা বৃদ্ধি সংক্রান্ত আলোচনাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সারাবছরে বিদ্যালয় খোলা থাকবে মাত্র ১৭৯ দিন। বিশ্বের অন্য যে কোন দেশের তুলনায় তা অনেক কম। এতো অল্প শিখন ঘন্টা দিয়ে কোনভাবেই প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব নয়। মূলত এ পরিপ্রেক্ষিতেই শিক্ষকদের সাপ্তাহিক কর্মঘন্টা ঠিক রেখে শনিবার বিদ্যালয় খোলা রাখার প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়। উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিখন ঘন্টা বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এর আওতাধীন সকল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআইসমূহকে ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে নন ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে পরিণত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় বিবেচনাধীন।
বর্ণিত শিক্ষক ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত আইডিতে শিক্ষকদের সাপ্তাহিক কর্মঘন্টা ঠিক রেখে শনিবার বিদ্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে মতামত প্রদান করতে গিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে শিষ্টাচার বহির্ভূত ও বিরূপ মন্তব্য পোস্ট করেন যা সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৯ এর ৭(ঘ) এবং ১০(ঙ)(ছ) (পরিমার্জিত সংস্করণ) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর আওতায় অসদাচরণের সামিল।
এই আলোচনাকে কেন্দ্র করে তিনি তার পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘‘এইযে শিখন ঘন্টা বাড়াতে চাচ্ছে কেডা এইডা? এইডা আবার দেকতাসি শনিবারও স্কুল খোলার কতা কইতাসে”। তিনি উল্লেখ করেন, “ভ্যাকেশন নন ভ্যাকেশন অন্য ব্যাপার। জানিনা এইডা কোন পদে আছে। তবে কথা শুইন্যাতো মনে হইতাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছে। আমারে একখান কতা বুঝানতো… এইগুলারে কই থেকে ধইর্যা আইনা এই ডিপার্টমেন্টে বসায়? আর কারাই বা বসায়? প্রাথমিক ডিপার্টমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার জন্য এরা কী কী পরীক্ষা দিয়ে তবে এসেছে? নাকি ক্যাডার-ম্যাডার হইলে যেকেউ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বোদ্ধা হয়ে যায়? এইগুলার কী বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে ক্লাস নেয়ার? এরা কতোদিন স্কুলে ক্লাস নিসে?”
এছাড়াও এ পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, “ফাইজলামো করেন সমস্যা নাই। তয় লিমিট ক্রসে যাইয়েন না, সেটা হোক ডিজি, সচিব, উপদেষ্টা কিংবা প্রধান উপদেষ্টা।” তার এই পোস্টের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর এর ডিজি, ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এর সচিব, মাননীয় উপদেষ্টা এমনকি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকেও হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। সরকারি চাকরীতে নিয়োজিত কর্মচারী হয়ে সরকারি বিধি বহির্ভূত আচরণ এবং একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদানের ফলশ্রুতিতে বর্ণিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পর বর্ণিত শিক্ষক দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, চার মাস পূর্বের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তার এই দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’
ঢাকা নিউজ/এস