ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeঅপরাধশিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ

শিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর বিজয় সরণি উড়ালসড়ক–সংলগ্ন ময়লার স্তূপের পাশের নালা থেকে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশুটির নাম রোজা মনি। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তেজগাঁও থানা-পুলিশ শিশুটির লাশ উদ্ধার করে।

তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল কাদের বলেন, শিশুটি তার মা শিল্পী আক্তার ও বোনদের সঙ্গে তেজকুনিপাড়া এলাকায় থাকত। বাবা নূর আলম প্রবাসী। গতকাল সোমবার দুপুরের পর থেকে শিশুটিকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। মঙ্গলবার সকালে উড়ালসড়কের পাশে একটি ময়লার স্তূপের পাশের নালায় বস্তাবন্দী লাশ দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। পরে গিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়।

শিশুটির পরিবার মাত্র ১৩ দিন আগে ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ায় একটি টিনশেড ঘর ভাড়া নেয়। সেই বাসা থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরত্বে বিজয় সরণি উড়ালসড়ক–সংলগ্ন নালা থেকে রোজা মনির লাশ উদ্ধার করা হয়।এই ময়লার স্তূপে পড়েছিল রোজা মনির বস্তাবন্দী লাশ

পুলিশ বলছে, শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গরম পানি দিয়ে পুরো শরীর ঝলসে দেওয়া হয়েছে। তারপর বস্তাবন্দী করে নালায় লাশ ফেলা হয়। শিশুটির গলায় দড়ি প্যাঁচানো ছিল।

তেজকুনিপাড়ায় রোজা মনিদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, রোজা মনির মা শিল্পী আক্তার বিলাপ করছেন। মা শিল্পী আক্তার জানালেন, তাঁদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। স্বামী নূর আলম এক বছর আগে মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে গিয়ে তেমন আয় করতে পারছেন না। ফলে তাঁরা আর্থিক অনটনে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে জীবিকার সন্ধানে ৮ মাস আগে ৭ সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে শিল্পী আক্তার ঢাকায় চলে আসেন। তিনি বাসাবাড়িতে কাজ নেন। দুই কিশোরী মেয়েকে পোশাক কারখানায় কাজে দেন। অন্য সন্তানদের কাজে দেওয়ার মতো বয়স হয়নি। ঢাকায় এসে প্রথমে তেজগাঁও এলাকায় ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বাসা নিয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে ১৩ দিন আগে সাড়ে তিন হাজার টাকায় তেজকুনিপাড়ায় এই বাসায় উঠেছিলেন।

মা শিল্পী আক্তারের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তাঁর কথা যেন থামছিল না। মেয়ের নানা স্মৃতি মনে করে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। কীভাবে মেয়ের লাশ খুঁজে পেলেন, সেই বর্ণনাও দিলেন নিজের মুখেই। কেন, কী কারণে তাঁর এই শিশুসন্তানকে হত্যা করা হলো, সেটি তিনি জানেন না। বললেন, ‘আমার নিষ্পাপ বাচ্চাডারে এমনে নির্মমভাবে যে মারল…শত্রুতা থাকলে তুই আমরার লগে শত্রুতা করতি। আমার মাইয়্যাতো কোনো শত্রুতা করে নাই। তারে কেন মারলি? আপনারার কাছে আমি বিচার চাই। মাইয়্যা হত্যার বিচার চাই। আর কিচ্ছু চাই না।’

শিল্পী আক্তার বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, ‘মাইয়্যা (রোজা মনি) খালি কইতো, আমরার ডাহা (ঢাকা) ভাল্লাগে না। তুমি আব্বারে কও আমরারে দেশে লইয়্যা যাইতো। এই ডাহাই (ঢাকা) মাইয়্যাডারে কাইড়া নিল।’

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন জানান, শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এই হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, সেটি খুঁজে বের করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। আশপাশের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র : প্রথম আলো

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular