জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় নারী এবং হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণে পোগলদিঘা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান রিপনের নেতৃত্বে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও অর্থ আদায়ের কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সরিষাবাড়ী উপজেলা জুড়ে চলছে নানান আলোচনা ও সমালোচনা।
বুধবার (২১ মে) উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। এবিষয়ে স্থানীয় সচেতন মহল ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন অবিলম্বে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ও বিএনপি নেতা রিপনকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, পোগলদিঘা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আক্তারুজ্জামান রিপন ইউপি চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে সাদা কাগজে সুবিধাভোগীদের নাম ও কার্ড নম্বর দেখে লিখছেন। তার পাশে বসা ইউপি সদস্য মোবারক হোসেন ও শ্রমিকদল নেতা সুজন সুবিধাবীদের কাছ থেকে ২০০ টাকাসহ কার্ড নিয়ে স্বাক্ষর করছেন।
তাদের এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের সময় একজন সুবিধাভোগীকে বলতে শোনা যায় ‘আমি তোমাকে খিলামু (খাওয়াবো)।’ উত্তরে শ্রমিক দল নেতা সুজন বলেন, ‘একবারে ৬ হাজার টাকার চাইল পাইতাছো, ২০০ টাকা দিতে কি সমস্যা?’
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকাল ১০টা থেকে চাল উত্তোলনের জন্য কার্ড ধারীরা লাইনে দাড়িয়ে পরিষদের গোডাউনে প্রবেশ করে। পাশের রুমেই পোগলদিঘা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান রিপন, শ্রমিকদল নেতা সুজন মিয়া, ইউপি সদস্য মোবারক হোসেন কার্ড ধারীদের থেকে ২০০-৩০০ টাকা আদায় করে চাল দিচ্ছেন।
জানা যায়, এ অর্থ আদায়ে ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান লাল মিয়া ও ইউপি সচিব রফিকুল ইসলাম জড়িত রয়েছেন। এদিকে চেয়ারম্যান লাল মিয়ার বিশ্বস্ত ব্যক্তি সুজন মিয়ার বিরুদ্ধে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দে মাটি না কেটেই অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে। আর দলীয় পদ ব্যবহার করে রিপন ইউনিয়নে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে।
সুবিধাভোগীরা জানান, সবার কাছ থেকে গোডাউনের ভেতরেই টাকা নিয়েছে। কার্ডধারী ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। পরে আমরা অনেকে ৩০০ টাকা করে দিয়েছি, আবার অনেকেই ২০০ টাকা করে দিয়ে চাল নিয়েছি । সরকারিভাবে বিনামূল্যে বিতরণযোগ্য ৩০ কেজি চালের জন্য প্রত্যেক কার্ডধারীদের থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে তারা আত্মসাৎ করেছে। আমরা দরিদ্র মানুষ, সরকার আমাদের জন্য চাল দিচ্ছে কিন্তু তারা টাকা না দিলে চাউল দিতে রাজি না।
এবিষয়ে কথা হলে ইউপি সদস্য মোবারক হোসেন জানান, আমি অসুস্থ, তাদের ফোন পেয়ে পরিষদে গিয়েছি। আমি সেখানে বেশিক্ষণ ছিলাম না। আমার বিরুদ্ধে কে বা কারা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। বেকায়দায় ফেলতে বিভিন্ন পায়তারা শুরু করেছে। আমি কোন অন্যায় কাজে জড়িত না।
তবে ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান রিপন ও শ্রমিক দল নেতা সুজনকে বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে পোগলদিঘা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুন ফকির জানান, আমি ভিডিও দেখেছি । ভিডিও দেখেই মেম্বারদের অর্থ আদায় না করার জন্য বলা হয়েছে। রিপন বিএনপির একজন সমর্থক।
এদিকে পোগলদিঘা ইউনিয়নের তদারকি কর্মকর্তা ও সরিষাবাড়ী উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার এটিএম রুহুল আমীন বেগ জানান, পোগলদিঘা ইউনিয়নে ৪৫৪ জন কার্ড ধারী সুবিধাভোগী রয়েছে। প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণে কথা। মোট ৫ মাসের জন্য ৩টি করে ৫০ কেজির বস্তা বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা মহিলা বিষযক কর্মকর্তা শায়লা নাজনীন জানান, অর্থ আদায়ের কোন সুযোগ নেই। আমি আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম। এমন কোন বিষয় আমাকে ট্যাগ অফিসার জানায়নি।
এদিকে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রাশেদ হাসান জানান, ভিডিও দেখেছি। থানায় কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি।
সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) লিসা রিসিল বলেন, অর্থ আদায় সম্পূর্ণ অবৈধ। আমি ভিডিও পেয়েছি । আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব ।