ঢাকা  শুক্রবার, ২৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeঅপরাধপুলিশ হেফাজতে সেই খতিব, ‘নিখোঁজের’ পেছনের আসল ঘটনার স্বীকারোক্তি

পুলিশ হেফাজতে সেই খতিব, ‘নিখোঁজের’ পেছনের আসল ঘটনার স্বীকারোক্তি

গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব ও পেশ ইমাম মো. মহিবুল্লাহ মিয়াজীর চাঞ্চল্যকর নিখোঁজের পেছনের আসল ঘটনা জানা গেছে। তাকে ইতোমধ্যে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে তাকে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। তার নিখোঁজের পেছনের আসল ঘটনা তিনি স্বীকার করেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) একজন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)।

ওই কর্মকর্তা জানান, ইমাম মহিবুল্লাহ অপহরণের পেছনে ইসকন জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছিল। তবে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে— তিনি অপহৃত হননি। শ্যামলী পরিবহনের বাসের টিকিট কেটে নিজেই পঞ্চগড় গিয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এ মামলার তদন্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইমাম মুহিবুল্লাহর বাসের সহযাত্রী এবং বাসের সুপারভাইজারও পুলিশের হেফাজতে আছেন।

তিনি জানান, এরই মধ্যে ইমাম মুহিবউল্লাহ পুলিশের কাছে প্রকৃত ঘটনা স্বীকার করেছেন। তার দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আজ (২৮ অক্টোবর) তাকে আদালতে তোলা হবে। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।

এর আগে, গত বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে টঙ্গীর বাসা থেকে হাঁটতে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। পরদিন বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের সিতাগ্রাম হেলিপ্যাড এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের পাশ থেকে শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

এদিকে, খতিব মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে নতুন তথ্য দিয়েছেন আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি।

তিনি জানান, মহিবুল্লাহ মিয়াজী নিজের অপহরণের বিষয়ে যে বিবরণ দিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি।

ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ শেয়ার করে সায়ের বলেন, গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী দাবি করেছিলেন গত ২২ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ৭টার দিকে টঙ্গীর শিলমুন এক্সিস লিংক সিএনজি ফিলিং অ্যান্ডকনভার্সন সেন্টারের সামনে থেকে তাকে অপহরণ করে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়। তবে উক্ত এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় সকাল ৬টা ৫২ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে তিনি ঘর থেকে বের হন। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তিনি বাম হাতে দরজা খুলে বের হন, পেছন ফিরে তাকাননি এবং টিনের দরজাটি বন্ধ হয়ে যায়।

সকাল ৬টা ৫৩ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে তিনি মসজিদ ছাড়েন এবং প্রায় ৬টা ৫৪ মিনিটে টঙ্গী টু কালীগঞ্জগামী আঞ্চলিক সড়কে কালীগঞ্জের দিকে রওনা হন। পরনে ছিল সাদাপাঞ্জাবি-পাজামা, মাথায় কালো রঙের পাগড়ি।

সায়ের আরও জানান, মুহিব্বুল্লাহর বাসার অদূরে শিলমুন এক্সিস লিংক সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভারশন সেন্টারের চারটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজেও এজাহারে উল্লেখিত অপহরণের বর্ণনার মিল পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে নেওয়া চারটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে মুহিব্বুল্লাহ পাম্পের সামনে দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন।

ফিলিং স্টেশনের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স পথরোধ করে তাকে অপহরণের যে দাবিটি করা হয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে এরকম কোনো ঘটনা দেখা যায়নি। বরং তাকে একাই দ্রুত গতিতে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। সামনের সেতুর উপরে পুলিশের স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় মুহিব্বুল্লাহ একাই হাঁটছেন। অথচ এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, ফিলিং স্টেশনের সামনে তাকে অপহরণ করা হয়। ৬টা ৫৪ মিনিটে এলাকা থেকে রওনা হয়ে তিনি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ফিলিং স্টেশনে পৌঁছান সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে।

ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. সোলেইমান নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের জানান, ‘তিন দফায় পুলিশের বিভিন্ন শাখা আমাদের সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ করে, আমাদের ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে হুজুরকে অপহরণ করা হয়নি।’

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular