নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশি স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের উদ্ভাবিত সৌরচালিত ভাসমান স্কুলকে ইউনেস্কো ২০২৫ সালের মর্যাদাপূর্ণ ‘কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার’ প্রদান করেছে।
শিক্ষায় নতুন উদ্ভাবন ও জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে এটি বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান, যা চীনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রদান করা হয়।
বিশ্বজুড়ে শতাধিক মনোনয়নের মধ্যে ইউনেস্কো তিনটি প্রকল্পকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেছে; এগুলো হলো বাংলাদেশের শিধুলাই ভাসমান স্কুল, আয়ারল্যান্ডের “লার্ন উইথ নালা” ই-লার্নিং এবং মরক্কোর “সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম”।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের শানডং প্রদেশের কনফুসিয়াসের জন্মস্থান চুফুতে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রেজোয়ান তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থার পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন।

চলনবিল অঞ্চলে বেড়ে ওঠা রেজোয়ান ছোটবেলায় দেখেছেন যে বর্ষার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক বন্যায় বন্ধ হয়ে যায়। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০০২ সালে তিনি নৌকাকেই স্কুলে রূপান্তর করেন — বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুল হিসেবে পরিচিত এই উদ্যোগটি।
বর্তমানে এসব সৌর-চালিত নৌকা শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে; ফলে বর্ষাকালেও শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
বর্তমানে ১০০টিরও বেশি ভাসমান নৌকা স্কুল, পাঠাগার ও ক্লিনিক হিসেবে কাজ করছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থীকে এই প্রকল্পের আওতায় শিক্ষিত করা হয়েছে।
একই বছরই ইউনেস্কো ‘কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার’ লাভের মাধ্যমে এ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
ইউনেস্কো এই উদ্যোগকে বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয় উদ্ভাবনের মাধ্যমে সাক্ষরতা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছে।
পাশাপাশি, বাংলাদেশ সরকার ২০৫০ সালের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় রেজোয়ানের ভাসমান স্কুল মডেলটি অন্তর্ভুক্ত করেছে।
রেজোয়ানের উদ্যোগ ফ্রান্সের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ইমিগ্রেশন হিস্ট্রিতে ‘বোট স্কুলস অব বাংলাদেশ – ফিউচার দ্যাট ফ্লোটস’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে।
এছাড়া, টিআরটি ওয়ার্ল্ডের তথ্যচিত্র ‘বাংলাদেশ টার্নস টাইড অন ক্লাইমেট চেঞ্জ উইথ ফ্লোটিং স্কুলস’ সেভ দ্য চিলড্রেন গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এর ফাইনালিস্টে নির্বাচিত হয়েছে। তদুপরি, রেজোয়ানের কাজ জুলিয়া ওয়াটসনের বই ‘লো-টেক: ওয়াটারে’-তেও স্থান পেয়েছে, যেখানে ২২টি আধুনিক ঐতিহ্যভিত্তিক উদ্ভাবনের মধ্যে বাংলাদেশের ভাসমান স্কুলকে তুলে ধরা হয়েছে।
শিক্ষাবিদ-শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, এই ভাসমান স্কুল মডেল নাইজেরিয়া, কম্বোডিয়া ও ফিলিপাইনের মতো দেশে শিক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
রেজোয়ান এ ব্যাপারে বলেন, “শিক্ষা শুধু পড়ালেখা নয়; এটি শান্তি, সমতা ও সহনশীলতা গড়ে তোলে। আমি চাই, কোনো দুর্যোগ যেন কোনো শিশুর শিক্ষাকে বন্ধ করতে না পারে”। চলনবিলের জলরাশি থেকে জন্ম নেওয়া এক স্থানীয় ধারণা আজ বিশ্বজুড়ে সাক্ষরতা, নকশা ও টেকসই উন্নয়নের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
ঢাকানিউজ২৪/মহফ




