ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeঅপরাধকুমিল্লায় গৃহবধূ সুমাইয়ার রহস্যজনক মৃত্যু, পরিকল্পিত হত্যা পরিবারের দাবী

কুমিল্লায় গৃহবধূ সুমাইয়ার রহস্যজনক মৃত্যু, পরিকল্পিত হত্যা পরিবারের দাবী

নিজস্ব প্রতিবেদক : মাত্র বিয়ের ৪ মাসের মাথায় নববধূ সুমাইয়ার জীবন অবসান। হাতে মেহেদির রং মুছতেনা মুছতেই পরপারের যাত্রী হলেন গৃহবধূ সুমাইয়া আক্তার (১৮)। সুখে শান্তিতে সংসার করার স্বপ্ন নিয়ে তাকে চিরতরে বিদায় নিতে হলো এই সুন্দর পৃথিবী থেকে। নিহত সুমাইয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এখনো চলছে কান্নার মাতম।

গত ১৭ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের জামতলী গ্রামে মোহব্বত আলী ফকির বাড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে সুমাইয়া আক্তারের। এলাকাবাসীর জনমণে প্রশ্ন। আত্মহত্যা নাকি হত্যা? ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশ সুমাইয়া আক্তারের স্বামীর বাড়ি থেকে ১৭ অক্টোবর আনুমানিক বিকাল ৪ টায় জানালার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত সুমাইয়া আক্তারের পরিবারের দাবী,স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখেছে জানালার সাথে।

নিহত সুমাইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার গৌরাঙ্গলা গ্রামের মোঃ বোরহান উদ্দিন কাজলের মেয়ে। সরেজমিনে গিয়ে ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সুমাইয়া আক্তার কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের জামতলী গ্রামের মোহাব্বত আলী ফকির বাড়ির নজরুল ইসলাম প্রকাশ (বাদশা মিয়ার) ছেলে মোঃ মেহেদী হাসানের সঙ্গে প্রেমের টানে গত ১৪ জুন পালিয়ে গিয়ে ২৬ জুন তারা ঢাকায় রোটারীর মাধ্যমে কোর্ট ম্যারিজ করে। পরবর্তীতে ১৬ জুলাই সুমাইয়ার বাবা বিবাহের বিষয়টি জানতে পেরে পারিবারিক ভাবে উভয়পক্ষই তাদের বিয়ে মেনে নেয়।

এরপর কিছুদিন ভালোই চলছিলো তাদের সংসার জীবন। ১৭ অক্টোবর বিকাল ৫ টার সময় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জামতলী গ্রামের নাছির সর্দার জানায় সুমাইয়ার মৃত্যুর খবর, জানিয়েই মোবাইল সংযোগ কেটে বলে জানা যায়। সুমাইয়া আক্তারের মৃত্যুর পর থেকেই স্বামী ও শ্বাশুরীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সুমাইয়ার শশুর নজরুল ইসলাম একজন প্রবাসী। নিহতের বাবা বোরহান উদ্দিন কাজল বলেন, আমার মেয়েকে ৪ মাস আগে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে মেহেদী। বিষয়টি জানার পর আমরা উভয়পক্ষ পারিবারিক ভাবে মেনে নেই।

মেনে নেওয়ার কিছু দিন পর থেকেই বিদেশে যাওয়া কথা বলে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য সুমাইয়াকে চাপ দিতে থাকে মেহেদী হাসান ও তার পরিবারের লোকজন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমার মেয়েকে প্রায় সময়ই স্বামী মেহেদী হাসান ও তার মা রেনুয়ারা বেগম মারধর করতো। গত ১৭ অক্টোবর আমার ছেলেকে ফোন দিয়ে ওই এলাকার নাছির সর্দার জানায় সুমাইয়া ফাঁস দিয়েছে। তখন আমার ছেলে সেখানে গিয়ে দেখে আমার মেয়ে ঘরের ভিতরে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলে আছে, এবং লাশ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমার মেয়েকে মেরে ঘরের মধ্যে তারা ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে এলাকায় প্রচার করছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। নিহত সুমাইয়া আক্তারের মা বলেন, আমি মেয়ের বাড়ী যাওয়ার আগেই পুলিশ লাশ নিয়ে থানার দিকে রওনা হয়, রাস্তায় দেখা হয় তাদের সাথে। আমি অনেক বার চেষ্টা করেছি আমার মেয়ের মুখটা শেষবারের মতো একবার দেখার জন্য, কিন্তু পুলিশ দেয়নি। তারা বলেছে আমার মেয়ের লাশ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। লাশ এখন দেখানো যাবেনা বলে তারা থানায় নিয়ে যায়। ওই এলাকার নাছির সর্দার বলেন, তারা পালিয়ে বিয়ে করে, আমি নিজে উপস্থিত হয়ে পারিবারিক ভাবে বিষয়টা মীমাংসা করে দেই। বিয়ের কিছু দিন পর মেয়ের বাবা আমাকে ফোনে জানায়, তার মেয়ের সাথে মেহেদী খারাপ আচরণ করে এবং মারধর করে। মেহেদীকে বুঝানো হয়েছে।

এর কয়েকদিন পর জানতে পারি সুমাইয়া আক্তার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সুমাইয়ার মৃত্যুর পর থেকে মেহেদী তার মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা পলাতক রয়েছে।

ব্রাহ্মণপাড়া থানার এস আই রবিউল আওয়াল সুমাইয়া আক্তারের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মরদেহের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। নিহতের পরিবারের সাথে খারাপ আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। মেহেদী হাসানের চাচাতো ভাইয়ের সাথে একই বাড়ীতে সুবর্ণা নামে সুমাইয়ার এক চাচাতো বোন বিয়ে দেয়া আছে। সুমাইয়ার মৃত্যুর ঘটনা সুবর্ণার কাছে জানতে চাইলে বলেন,সুমাইয়া আমার চাচাতো বোন, আমরা একসময় একই কলেজে লেখাপড়া করেছি। কিন্তু সুমাইয়া কিভাবে মারা গেলো এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। সুমাইয়ার বিয়ের পর থেকে মেহেদী এবং সুমাইয়া, আমি তাদের সাথে কথা বলিনা।

এ ঘটনায় সুমাইয়ার মা মর্জিনা আক্তার বাদী হয়ে কুমিল্লা বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২ নং ট্রাইবুনাল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং ৭৫৫/২৪.১০.২০২৪ ইং।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, সুমাইয়ার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছেনা, আত্মহত্যা নাকি হত্যা?

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular