ঢাকা  মঙ্গলবার, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ          সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

spot_img
Homeসর্বশেষঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আটক. জাল সীল জব্দ

ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আটক. জাল সীল জব্দ

তারিক মোহাম্মদ, ঝিকরগাছা (যশোর): যশোরের ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চাঞ্চল্যকর জাল-জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। ঝিকরগাছা শ্রমজীবী সমবায় সমিতির জমি বিক্রিতে জারিয়াতির অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ভূপালী সরকার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত করতে গিয়ে জালিয়াত চক্রের মূলহোতা দলিল লেখক (মহরার) মনসুর আলী (৬০) কে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করেছে।

জাল-জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত মনসুর আলীর হেফাজতে থাকা ‘‘ঝিকরগাছা শ্রমজীবী সমবায় সমিতির” সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সমিতির লোগো সম্বলিত মোট তিনটি সীল উদ্ধার করেন। মনসুর আলী মহরার লাইসেন্স নং ৪২। এসময় অন্য অভিযুক্তরা সুযোগ বুঝে গাঢাকা দেন বলে অভিযোগ। ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম- দুর্নীতির দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।

বুধবার (৭মে) দুপুরে আকস্মিক তদন্তে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই দলিলের রেজিস্ট্রি সম্পাদনকারী সাব-রেজিস্টার মোহাম্মদ শাহিন আলম অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে এদিন তিনি মনিরামপুর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা গেছে। অভিযান চলাকালে অভিযুক্ত মহরার সন্তোষ সরকার ও তার সহযোগী হাফিজুর রহমান, কম্পিউটার অপারেটর গাঢাকা দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি একটি অনিবন্ধিত সমবায় সমিতির নামে নিজ হাতে লিখিত ভুয়া রেজুলেশন তৈরি করে এবং রেজুলেশনে সভাপতি ও সম্পাদকের পদ-পদবি অস্পষ্টতা থাকলেও নামজারির আবেদন করার ঘটনা প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
এই ঘটনায় সৃষ্ট দলিলের দাতা, গ্রহীতা, সাক্ষী ও সনাক্তকারীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ঝিকরগাছা সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পারভিন আক্তারকে নিয়মিত মামলা দায়েরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানাগেছে।

উল্লেখ্য যে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তদন্ত ও এর আগে স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সহকারী কশিশনার ভুমি তার সার্ভেয়ার দিয়ে বির্তর্কিত ওই জমির সরেজমিন তদন্ত করান।
এদিকে অতিসাম্প্রতিক সময়ে বহুলোলোচিত একটি সরকারি খাসজমি (ঝিকরগাছা ১ নং ওয়ার্ডের ২নং কলোনির ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি) ঝিকরগাছা শ্রমজীবী সমবায় সমিতির মালিকানা দেখিয়ে ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন সম্পাদিত হয়। পূর্বের সাব-রেজিস্ট্রার উক্ত দলিল রেজিষ্ট্রি ফেরত দেয়ায় নতুন সাব-রেজিস্ট্রার যোগদানের সাথে সাথে প্রতারণার মাধ্যমে দলিলটি রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগকারি রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।

জানাগেছে, রেজিস্ট্রেশন সম্পাদনের পর বহুলালোচিত ও বিতর্কিত ওই সম্পত্তির ক্রেতা পক্ষ দলিলটি নামজারি/ নামপত্তন করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আবেদন করেন। কিন্তু, দলিলের তথ্যগত ত্রুটিও সন্দেহজনক হওয়ায় সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাভিদ সারওয়ার সৃষ্ট দলিলটির নামজারি স্থগিত রাখেন। শুধু তাই নয়, নামজারির আবেদনের দাখিলকৃত পৃথক সাতটি দলিলে ধারাবাহিক মালিকানার ক্ষেত্রে অসংগতি, অস্পষ্টতা, কাটাছেঁড়া বা টেম্পারিং, ওভার রাইটিং ও অসম্পূর্ণ থাকায় এসব দলিলের নামজারি/ মিউটেশন আটকে দিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাভিদ সারওয়ার। তখনি সামনে আসে এই জাল-জালিয়াতির চিত্র।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অভিযান চলাকালে এ সময় তার সাথে সরকারি কর্মকর্তা, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নকল নবিশ, দলিল লেখক সমিতির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মহরারসহ গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত চলাকালে ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মোঃ শরিফুল হাসান, শেখ মোঃ জহুরুল ইসলাম, মহিদুল ইসলাম, সোহরাব হোসেন, মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, মো. শওকত আলী, তৌহিদুর রহমানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আকবর আলি বলেন বিষয়টি তদন্তাধীন থাকাই এ বিষয়ে তার কোন বক্তব্য নেই।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বুধবার সন্ধ্যায় ঝিকরগাছা সহকারি কমিশনার ভূমি নাভিদ সারওয়ার অন্যের দলিল নম্বর ব্যবহার করে নতুন দাতা ও গ্রহীতা সাজিয়ে নকল দলিল এক একর ১৯ শতক জমি নামপত্তন করতে দেয়া গ্রহীতার বাড়িতে তদন্তে রয়েছেন। এছাড়া ভুমি সহকারি পারভীনা আক্তার বাদি হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানাগেছে। #

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular