রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের ৫৫ হাজার বিঘা কৃষি জমির বিস্তীর্ণজোড়া ফসলি মাঠে কৃষকদের চাষাবাদের সুবিধার চিন্তা করেই মাঠের মাঝখানে ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ব্রিজ। কিন্তু দুপারেই সংযোগের কোন রাস্তা না থাকায় অচল হয়ে পড়ে আছে ১৮ লক্ষ টাকার ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজটি। ফলে নির্মিত এ নতুন এ ব্রিজ দিয়ে কৃষকরা কোন ধরনের যানবাহনের ব্যবহার করতে না পারায় কোন উপকারেই আসছেনা। এ অবস্থায় চাষাবাদের জন্য কৃষক যেন নিজেই হয়ে উঠেছে যান্ত্রিক বাহনের বিকল্প মাধ্যম।এতে কৃষেকদের কষ্টের সীমা নেই।
৫০ মিটার লম্বা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় শুধু মাঠের পর মাঠ আর আবাদি জমি।দুই তিন কিলোমিটার আশপাশে নেই কোন গ্রাম। মোটা দাগে বলা যায় মাসে কিংবা বছরে একটিও যানবাহনও ওই ব্রিজ দিয়ে যেতে চোখে পড়েনা বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,চাষাবাদের জন্য কৃষক যেন নিজেই হয়ে উঠেছে যান্ত্রিক বাহনের বিকল্প মাধ্যম।এতে কৃষকদের পোহাতে হচ্ছে চরম কষ্ট, দুঃখ ও ভোগান্তি।আবাদি জমির মধ্য দিয়ে গরুর গাড়ি, পাওয়ার টিলার,লড়ি, পিক আপ ভ্যানের যাতায়াতের কোন রাস্তা না থাকায় হাজার হাজার কৃষক চৈত্রের খরা রোদে এবং বর্ষাকালে নিজের ঘাড়ে করে ফসল বহন করেন। এই নিদারুণ কষ্টের দৃশ্য দেখার যেন কেউ নেই। কৃষি কাজের এই সম্ভাবনাময় আবাদস্থল হচ্ছে গোরকই লোলতই বিল এবং এই বিলটি উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়ন, কাশিপুর ইউনিয়ন এবং নন্দুয়ার ইউনিয়ন দ্বারা বেস্টিত।
কৃষক সহিদুর ইসলাম বলেন, এখন জমিতে অনেক ভালো ফলন ফলছে, যা দেখে প্রাণ জুরিয়ে যায়। কিন্তু ফসল ঘরে তোলার সময় দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় আমাদের। কারণ ব্রিজটির দুপাশে সংযোগের রাস্তা না থাকায় কৃষিকাজের জন্য কোন ধরনের যানবাহন ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। ফলে অনেক দুর থেকে ফসল মাথায় করে বয়ে আনতে হয়। তাই শ্রমিকও পাওয়া যায় না। তাই আমরা নিজেরাই এখন যান বাহরেনর বিকল্প মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছি। নিজেদের ফসল নিজরাই মাঠ কেটে বহন করে বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়। আবার সময় মতো ফসল কাটতে না পাড়লে ফলন ঝড়ে যায়। এই অবস্থায় সরকারের কাছে আমাদের দাবি, ক্যানেলের অব্যবহৃত রাস্তাটি যেন পাঁকা করে দেওয়া হয়।
রাণীশংকৈল প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানা গেছে, কৃষকদের চাষাবাদ সহজীকরণ ও গোরকই-লোলতই বিলে জমে থাকা পানি দূরীকরণে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে লোলতই বিলে খাল খনন করে। এবং এতে নির্মাণ ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ টাকা। এতে করে বিলের পানি ক্যানেলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কৃষকরা বছরে আমন ও বোরো ধান এবং সরিষাসহ তিনটি চাষাবাদ করতে পারছেন। কিন্তু ক্যানেলের উপরে অব্যবহৃত রাস্তা পাঁকা না হওয়ায় মাটি পুনরায় ক্যানেলে পড়ে যাওয়ায় ক্যানেলটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং পুনরায় জলবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ ব্যপারে রাণীশংকৈল এর সন্তান ঢাকা সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মেহেদী হাসান শুভ মুঠোফোনে জানান, লোলতই বিলে ক্যানেলের অব্যবহৃত রাস্তা পাঁকাকরণের দাবিতে গঠিত কমিটির হাজার হাজার কৃষকের কষ্ট লাঘবের জন্য প্রাথমিক ভাবে কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি, এলজিইডি কর্তৃপক্ষের সাথে মিটিং করেছি এবং মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ১২ টি দপ্তরে রিপ্রেজেন্টেশন আকারের ফাইল প্রেরণের কার্যক্রম ইতিমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে। আমি খুব শীঘ্রই ফাইল ইস্যু করবো।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, ভন্ডগ্রাম থেকে জওগাঁও বিলে আগে হাঁটু সমান পানি জমে থাকার কারণে বছরে একবার ফসল ফলানো সম্ভব হতো। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএডিসি কর্তৃক ফসলের মাঠের মাঝে বরাবর বয়ে যাওয়া লোলতোই খাল খনন করা হয়েছে৷ যার ফলে ২ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ টি ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু, বিস্তীর্ণ এই ফসলের মাঠের আশেপাশে যাতায়াতের কোনো রাস্তা না থাকায় সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় প্রায় ৩ হাজার কৃষককে। তাই পানি নিষ্কাশন ও বিভিন্ন আবাদী ফসল বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন ব্রিজের সাথে দুই পাশে দুই কিলোমিটার করে চার কিলোমিটার রাস্তা মাটি দিয়ে উঁচু করে পাকা করলে ওই এলাকার কৃষকদের দীর্ঘ দিনের দুঃখকষ্ট চিরতরে দূর হবে।