নূরে আলম ভূইয়া
মানুষ বলে থাকে জীবন অনেক ছোট। আসলে কি তাই? যারা শৈশব পার করে ধাপে ধাপে সময় ও জীবনের পরিক্রমায় বাধ’ক্যে এসে পৌছেছেন তাদের অনেককে এই প্রশ্নটা করে আমি জেনেছি, জীবন আসলে কোন অবস্থাতেই বাধ’ক্যে এসে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শেষ হলে সেটা ছোট নয়। তারা এটাও বলেছেন বাধ’ক্যে মন ও শরীরের যে অবসাদ, ক্লান্তি এবং একাকীত্ব সেখানে নতুন স্বপ্ন, সম্ভাবনাকে জাগিয়ে রেখে অচৈতন্যর মত বেচে থাকার আগ্রহটা আর বাড়ে না। ঠিক তাই। একটা সময় আসে যখন মানুষ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে পৃথিবীকে বিদায় জানাতে সবদিক থেকে প্রস্তুত হয়ে যায়।
জন্মের পর মানব শিশুকে নিয়ে আগ্রহ এবং আদরের শেষ থাকে না। বিশেষ করে মায়ের ত্যাগ তিতিক্ষা অনেক। পাশাপাশি বাবা,দাদা,দাদী,নানা, নানী, ভাই, বোন সকলে মিলেই এই শিশুটিকে গড়ে তুলে, বড় করে। সকলের ছায়ায় এবং মায়ায় সে কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদাপ’ন করে। তারপর নিজ পরিবারের বাইরে যেয়ে সে গড়ে তুলে একান্তই তার নিজের একটা পরিবার। সেখানে তার পরবর্তী প্রজন্ম আসে এবং পূব’বতী’ প্রজন্ম হতে সে ক্রমশই বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। যাদের ভালবাসা এবং ত্যাগে সে এই অব্দি এসেছে সেই তারাই ক্রমে ক্রমে তার কাছ থেকে হারিয়ে যেতে থাকে। আর এভাবে সেও একদিন তার পরবর্তী প্রজন্মের কাছ থেকে হারিয়ে যায়।
আসলে মানুষের জীবনকে একারনেই ছোট বলা হয়ে থাকে যে, অন্য সকল কিছুর বিষয়ে আপনি আন্দাজ করতে পারলেও আপনার নিজের মৃত্যুর বিষয়টি সম্পর্কেই আপনি সবচে বেশি অজ্ঞ থাকেন। মৃত্যু আপনার যে কোন সময় হতে পারে। আর এখানে আপনার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। আর এখানেই একটা নিশ্চিত বিষয় লক্ষণীয়। আপনার জীবন আর আপনার সেই জীবনের মৃত্যু কোনটাই কিন্তু আপনার নিয়ন্ত্রনে না। তাহলে এটা অন্য কারো নিয়ন্ত্রণে তো আছেই। আর তিনিই হলেন সৃষ্টিকতা’। আর তাই সৃষ্টিকতা’ই এখানে আপনার জীবনের সময়কাল নিধা’রন করে দিচ্ছেন।
জীবনে অনেক কিছু থাকে, অনেক কিছু ঘটে। প্রতিটি মানুষের জীবনকাল এক একটি ইতিহাস। এখানে অনেক গল্প থাকে। সব গল্পগুলো মানুষ জানে না, জানাতে ইচ্ছে করে না। থাকে একান্তই ব্যক্তিগত জগৎ যেখানে অন্য কেউ আসতে পারে না। আছে হাসি,কষ্ট,। বেদনা, ক্ষত এবং স্মৃতির অসামান্য গাথুনী। আছে কল্পনার বিশাল এক জগৎ। এখানে আছে এমন একটা ভাবনার জগৎ যার কোন দৈঘ’,প্রস্থ কিংবা তল নেই। আছে মায়া। আছে সম্পর্কের ঘোরপ্যাঁচ, পাশাপাশি টানাপোড়েন।
আছে সকল স্তরে জ্ঞানের অফুরান ভান্ডার। এই ভান্ডারে নিজেকে মানুষ যত বেশি যুক্ত করে, কল্পনার দুয়ার যতবেশি প্রসারিত করে, যত বেশি জ্ঞান আহরণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করে,- এই মানুষগুলোর বিবেক,ইচ্ছে, অনিচ্ছা তত বেশি অনেকাংশেই জাগ্রত হতে থাকে। চিন্তা, চেতনার ক্ষেত্র আলাদা হতে থাকায় সাধারণ মানুষগুলো হতে তারা আলাদা হতে থাকে। তাদের অনুভূতি, সেন্সর সকল ক্ষেত্রেই অনেক শক্তিশালী থাকে। এই মানুষগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একাকীত্বে ভোগে, এবং অসুখী হয়। এর কারন তাদের জ্ঞান এবং বিবেক।
যাই হোক জীবনের শুরু হতে শেষ অব্দি মানুষ নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে। শিখতে থাকে। কিন্তু মৃত্যুর পূব’ পয’ন্ত শিখতে পারে খুব সামান্য কিছুই। জীবনের মানে খুজতে খুজতে কখনও পুলকিত হয় কখনও ক্লান্ত হয় মানুষ। অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে হতাশাও। বাড়ে ক্লান্তি। বুঝতে পারে জীবনের ম্যাক্সিমাম কিছুই তার নিয়ন্ত্রণে নেই। যার নিয়ন্ত্রণে আছে তিনি হলেন স্রষ্টা। আর অধিকাংশ মানুষই জীবনের শেষ স্তরে এসে সকল অন্যায় ও জীবনের ব্যার্থতার জন্য স্রষ্টার কাছে পরকালের মুক্তির জন্য নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সমপ’ন করে।
লেখকঃ নূরে আলম ভূইয়া, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, গফরগাঁও উপজেলা।