মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম, কুমিল্লা : আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের বিপনী বিতানগুলো নতুন সাজে সেজেছে নানাহ ব্র্যান্ডের বাহারী ঈদ পোশাকে। স্থানীয় ভাবে অর্থনৈতিক মন্দাভাবে জর্জরিতসহ নানাহ সংকটে পড়ে ঘুরে দাঁড়াতে অস্থির কেনাকাটায় পন্যের বাজার । চলমান পরিস্থিতি ও ভয়াবহ বন্যার আঘাত যেনো জনতার ঢলের কাছে হার মেনেছে। স্থানীয় প্রশাসন বাজার মনিটরিং কিংবা ভ্রাম্যমান আদালতসহ আইনগত বিষয়ে জানান দিতে নানাহ কৌশলে মানুষকে সচেতন করতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বিভিন্ন পন্যের বাজার মনিটরিংয়ে রয়েছে বিতর্ক।
বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ক্রেতাদের একাধিক সূত্র জানায়, ভয়াবহ বন্যা ও নোংরা রাজনীতির আতংক এবং রমজানের প্রথম দিন থেকে প্রতিবছরের মতো এবারও এ অঞ্চলের সবক’টি বিপনী বিতাণে জমে উঠেছে নানাহ শ্রেণির ক্রেতাদের সমাগম। দেশীয় পোশাকের চাইতে বিদেশী হরেকরকম ব্র্যান্ডের বাহারী পোশাকে প্রতিটি দোকানে সয়লাব আর ধীরে ধীরে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে। বিপনী বিতাণগুলোতে কটন, খাদি, ভাটিকা, বেক্সি ফেব্রিক্স, সিল্কসহ দেশি-বিদেশী নানাহ নকশা ও কারুকাজের তৈরী পোশাকের পাশাপাশি ভীন দেশীয় থ্রিপিচ-বাহুবলি-১, বাহুবলি-২, সর্বমঙ্গলা, সরোজা ও হুররামসহ একাধিক নামের পোশাকের কদর বেশি ক্রেতাদের। তারপরও মহামারী করোনাসহ নানাহ প্রতিকুলতায় ব্যবসায়িক লোকসানে এবার ভালো ব্যবসার আশায় নতুন নতুন ডিজাইনের বাহারী পোশাকে বিপনী বিতানগুলোর দোকানগুলোতে সাজানো হয়েছে। এছাড়া সবকয়টি বিপনী বিতানে ভারতীয় পন্যে সয়লাভ। স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিকতা ও মনিটরিং না থাকায় ভারতীয় পন্যের ব্যবসা জমে উঠেছে এ অঞ্চলে এবং বিভিন্ন সেন্টিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানায়।
সূত্রগুলো আরও জানায়, চলমান দেশব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারনে নানাহ অজুহাতে এলাকার কোন কোন বিপনী বিতানে গত বছর চেয়ে এবার সবচেয়ে দামবেশি ধরা হয়েছে দেশীয় নানাহ বাহারী পোশাকের। বিশেষ করে শিশু কিশোরদের পাঞ্চাবী, ফতুয়া, থ্রিপিচ, বড়দের পাঞ্জাবী, থ্রিপিচ, টুপিচ, শাড়ী কাপড় বেশি কিনছে ক্রেতারা। এছাড়া ভারত সীমান্তের চোরা দরজাগুলো দিয়ে প্রকাশ্যে চোরাপথে আসা এ অঞ্চলের হাট-বাজার বিভিন্ন ভারতীয় পণ্যে সয়লাব হয়ে বেচাকেনায় প্রস্তুত দোকানীরা। এমনিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে এ অঞ্চল। ফলে এলাকায় বন্যা, খরা, তাপদাহ, ঘুর্নিঝড়ের আশংকা লেগেই আছে। তাই বিভিন্ন পন্য উৎপাদনে অনেকটা ভাটা পড়েছে বলে ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র জানায়।
অপরদিকে, এ অঞ্চলে চোরাচালানী তৎপরতায় দেশের ঐতিহ্যবাহী পূর্বাঞ্চলীয় জেলার দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, সদর দক্ষিণ, লালমাই, বরুড়া, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলাসহ রেলওয়ে জংশন অবৈধ চোরাচালান ব্যবসার ট্রানজিট রুট হিসাবে বর্তমানে সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করে চলেছে। পূর্বাঞ্চলীয় চোরাচালান রুট গুলো হচ্ছে কুমিল্লা হইতে সালদা নদী, ফেনীর পশুরাম, নোয়াখালী ও চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার সড়ক পথ, রেলপথ ও নৌপথ ছাড়াও বন্দর নগরী চট্রগ্রাম এখন চোরাচালান ব্যবসায় আলোচিত এক ভারতীয় পন্যের সাম্রাজ্যের নাম। লাকসাম বাজার নিয়ন্ত্রণে চোরা চালানী সেন্ডিকেট অনেকটাই দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে বিপনী বিতান গুলো।
এ ব্যাপারে লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির একাধিক ব্যবসায়ী নেতা জানায়, এ অঞ্চলের সকল শ্রেণির ব্যবসায়ীরা প্রকৃতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানাহ কারনে গ্রামীণ অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়ায় ধারদেনা ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে মালামাল তুলতে হয়েছে। বিক্রি কিছুটা শুরু হলেও এখনও ভালো ভাবে জমে উঠেনি। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে ক্রেতা সমাগম ও বেচাকেনা বাড়বে বলে প্রতিক্ষায় আছি।