• ঢাকা
  • সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৬ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

নৈতিকতা ধ্বংসকারী শিক্ষা কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০১:৫৫ পিএম
নৈতিকতা ধ্বংসকারী শিক্ষা কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন
মানববন্ধনে অভিভাবকরা।

জহিরুল ইসলাম সানি, নিজস্ব প্রতিবেদক : পাঠ্য বইয়ে কোমলমতি শিশুদের মেধা, শিক্ষা ও নৈতিকতা ধ্বংসকারী শিক্ষা কারিকুলাম বাতিল চেয়ে মানববন্ধন করেছে একটি সামাজিক সংগঠন 'সচেতন অভিভাবক সমাজ বাংলাদেশ'।

শনিবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। 

এসময় মানববন্ধনে অভিভাবকরা বলেন, নতুন ক্যারিকুলামে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষার নামে যা শেখানো হচ্ছে, তা স্পষ্ট 'যৌন শিক্ষা'। এই যৌন শিক্ষা পাঠ বাতিল করতে হবে। বিশেষ করে, ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এ শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ের ৪৭ থেকে ৪৯ পৃষ্ঠায় বয়ঃসন্ধি কালে নারী-পুরুষের দেহের পরিবর্তন, নারী-পুরুষের শরীর থেকে কি নির্গত হয়, কোন অঙ্গের আকার কেমন হয়, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কেমন আকর্ষণ হয় ইত্যাদি শেখানো হচ্ছে। এছাড়া বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ের ১১তম অধ্যায়ের 'মানব শরীর' শিরোনামে ১১৯ থেকে ১২২ পৃষ্ঠায়- পেনিস, পেনিস দৃঢ়তা, যোনী, লোম গজানো, স্তন, নিতম্ব, উরু, বগল, স্রাব, মাসিক, সেক্স হরমোন, ইত্যাদি রগরগে বর্ণনাসহকারে কোমলমতি শিশুদের পড়ানো হচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগের বিষয়।

তারা বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণির একটা বাচ্চার বয়স কত হয়? ১১ থেকে ১৩ বছর হয়। এই বয়সে সব শিশু বয়ঃসন্ধিতে পৌছায় না। কিন্তু সেই বয়সেই এ ধরনের শিক্ষা বাচ্চার মনে ভয়ঙ্কর কু-প্রভাব ফেলতে পারে। সবচেয়ে জটিল বিষয় হচ্ছে, ক্লাসে পাঠ্য এই বিষয়গুলো নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রুপ ডিসকাশন করতে হয়, গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট করতে হয়, সামষ্টিক মূল্যায়নের মাধ্যমে ত্রিভুজ পেতে হয়। কিন্তু এ বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আলোচনার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যে লজ্জার বাঁধন থাকে, সেটা উঠে যায়। বিশেষ করে, এই শিক্ষা নিয়ে ক্লাস রুমে ছাত্র-ছাত্রীরা যখন গ্রুপ ডিসকাশন করবে, তখন তারা যে অনৈতিক কোন কথা বা কাজ করে বসবে না তার নিশ্চয়তা কি? তাছাড়া, বাংলাদেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক দ্বারা ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এসব পড়ানোর নাম করে শিক্ষকরা যে, শিক্ষার্থী থেকে কোন অনৈতিক সুযোগ নিতে চাইবে না, তার নিশ্চয়তা আমরা অভিভাবকরা পাবো কোথায়?

অভিভাবকরা আরো বলেন, কেউ কেউ দাবী করতে পারে, এসব শিক্ষার অভাবে নাকি বাচ্চারা সমস্যায় পড়বে। ধরে নিচ্ছি, এসব শিক্ষা না নিলে বাচ্চাদের কিছু ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু এসব শিক্ষা লাভ করতে গিয়ে কোন বাচ্চা যদি অনৈতিক কিছু করেই বসে, তখন তার কতটুকু ক্ষতি হবে? এই দুই ক্ষতির তুলনা করলে কোনটা বেশি ভয়াবহ? অভিভাবকরা আরো বলেন, মানুষ মাত্রই বড় হবে, বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছাবে এটাই যুগ-যুগান্তেরে স্বাভাবিক নিয়ম। আজকে যারা মা-বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানীরা, খালা-মামারাও এক সময় এই বয়সে ছিলো। তারা এক সময় প্রয়োজনের সমাধানও পেয়েছেন। কিন্তু তারা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বয়ঃসন্ধির শিক্ষা নেননি, তাই বলে তাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে এমনটা নয়। বরং আজকের যুগে অভিভাবকরা আরো ভয়ের মধ্যে থাকে, না জানি তার সন্তান কি ভুল করে বসে। তার মধ্যে এই শিক্ষা অনেকটা নতুন প্রজন্মকে আরো উস্কে দেয়ার নামান্তর। বিশেষ করে, বয়ঃসন্ধীকালীন শিক্ষাটা নারী-পুরুষের জন্য পৃথক। সে জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের একজন অন্যজনেরটা জানার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু পাঠ্যবই ও ক্লাসে এক সাথে ছেলে-মেয়েদের তা শেখানো হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী।

তারা বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা মূলত দুই ধরনের হয়। (১) পাবলিক, যা জনসম্মুক্ষে বলা ও প্রয়োগ করা যায়। (২) গোপন বা প্রাইভেট, যা শেখা ও প্রয়োগের জন্য প্রাইভেসী দরকার। বয়ঃসন্ধীকালীন শিক্ষার নাম দিয়ে যা শেখানো হচ্ছে, তা এক ধরনের প্রাইভেট শিক্ষা, যা শেখা ও প্রয়োগের জন্য প্রাইভেসীর দরকার। আমরা এই শিক্ষার বিরুদ্ধে নই। এই শিক্ষার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। কিন্তু সেটা জনসম্মুক্ষে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নয়, বরং প্রাইভেসী বা গোপনীয়তা রক্ষা করে শেখানো উচিত।

অভিভাবকরা বলেন, একটি শিশুর যখন দাঁত জন্মায়, তখন সে কামড় বসিয়ে তার ব্যবহার করতে চায়। একটি শিশু যখন হাঁটার শক্তি পায়, তখন বার বার হেঁটে তার ব্যবহার করতে চায়। ঠিক তেমনি একটি শিশু বয়ঃসন্ধিকালে যে নতুন ক্ষমতা পায়, তারও যথেচ্ছ ব্যবহার সে করতে চাইতে পারে। এজন্য বয়ঃসন্ধিকাল একটি সেনসিটিভ সময়। এর নিয়ন্ত্রণও সেনসিটিভলি করা উচিত। বর্তমান পাঠ্য বইয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যে যৌন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, তাতে শিশুটি ভুল বুঝে যৌনতায় বেপরোয়াও হয়ে যেতে পারে, যা খুব ভয়ঙ্কর বিষয়।

তারা বলেন, এসব শিক্ষা প্রাইভেসীর সাথে অভিভাবকরা যেন বাসাতেই দিতে পারেন, সেজন্য অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করা দরকার, প্রয়োজনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদেরকে দিক নির্দেশনা সমৃদ্ধ লিফলেট বা বই দেয়া যেতে পারে। এছাড়া প্রতি শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের গাইড করার জন্য একজন দায়িত্বশীল শিক্ষক থাকেন, যিনি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে কাজ করেন। ঐ শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীদের বন্ধুর মত সম্পর্ক থাকে, যেন তারা মন খুলে তাদের সমস্যাগুলো বলতে পারে। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম পর্যন্ত শ্রেণীতে যদি গাইড শিক্ষকরা বিষয়টি একটু খেয়াল রাখেন, তবে কোন শিক্ষার্থী যদি বাসায় পর্যাপ্ত শিক্ষা নাও পায়, তবে গাইড শিক্ষক সেই শূণ্যতা পূরণ করে দিতে পারেন। অর্থাৎ পুরো বিষয়টির জন্য এতো ঢাক-ঢোল পেটানোর প্রয়োজন নেই, বরং সুন্দর ও স্বাভাবিক নিয়মে প্রাইভেসীর সাথে শিক্ষাটি দান করা সম্ভব।

অভিভাবকরা বলেন, আপনারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন যে, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজ, পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ একটা কারিকুলাম এ বছর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এর ফলে এদেশের পতিত শিক্ষাব্যবস্থা আরো পতনের সম্মুখীন হয়েছে। আমাদের সন্তানের শিক্ষা ও জীবন আজ ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মুখে। উপরুন্ত মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে দেশের নিরীহর অভিভাবক ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দি করা হচ্ছে। তাদের এই বিপন্নতায় আমরা সারা দেশের অভিভাবকরা খুবই উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় আমরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেছি।

মানববন্ধনের সংগঠনের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত দাবীসমূহ তুলে ধরা হয় :

১. শিক্ষানীতি বিরোধী নতুন কারিকুলাম সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে। 

২. নাম্বারভিত্তিক ২টা সাময়িক পরীক্ষাসহ বার্ষিক পরীক্ষা চালু করতে হবে। ঘনঘন কারিকুলাম পরিবর্তনের মাধ্যমে জাতীর মেরুদন্ডকে ধ্বংস করা যাবে না।

৩. নবম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় অথবা বিভাগ নির্বাচনের সুযোগ রাখতে হবে। ৪. ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি নির্দেশক বা ইন্ডিকেটর বাতিল করে নম্বর ও গ্রেড ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি রাখতে হবে।

৫. সকল সময়ে সকল শিখন, প্রোজেক্ট ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক ক্লাসের ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে এবং স্কুল পিরিয়ডেই সকল প্রোজেক্ট সম্পন্ন হতে হবে।

৬. শিক্ষার্থীদের দলগত ও প্রোজেক্টের কাজে ডিভাইসমুখী হতে অনুৎসাহিত করতে হবে এবং তাত্ত্বিক বিষয়ে অধ্যয়নমুখী করতে হবে।

৭. প্রতি বছর, প্রতি ক্লাসে, নিবন্ধন ও সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে, প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা চালু রাখতে হবে, এবং এসএসসি ও এইচএসসি ২টা পাবলিক পরীক্ষা বহাল রাখতে হবে। 

৮. সকল সময়ে সকল শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই তা মন্ত্রী পরিষদ এবং সংসদে উত্থাপন করতে হবে।

৯. অন্যায়ভাবে এবং মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে মিথ্যা মামলায় বন্দি অভিভাবক ও শিক্ষকদের মুক্তি দিতে হবে। সেই সাথে সকল অভিভাবক ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক পদক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

সচেতন 'অভিভাবক সমাজ বাংলাদেশ'র পক্ষে মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সমন্বয়কারী মো: আবু মুসলিম বিন হাই, এডভোকেট মোঃ খোরশেদ আলম, এডভোকেট মোঃ শফিক, এডভোকেট লতিফা সুলতানা, মিসেস রানী বেগম, রাহিমা আক্তার, তাসনিম ফাতেমা, মোহাম্মাদ সেলিম, আবু মোহাম্মাদ, জিয়াউর রাহমান, রফিকুল ইসলাম, পারভেজ রেজা প্রমুখ।

ঢাকানিউজ২৪.কম / জেডএস

আরো পড়ুন

banner image
banner image