
নিউজ ডেস্ক: ইউক্রেনের দোনেৎস্ক শহরের বোহোডিচন গ্রামে রুশ আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আবাসিক ভবন। আগ্রাসন শুরুর পর গত বছরের ১৭ আগস্ট গ্রামটি দখলের দাবি করে রুশ বাহিনী
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়ছেই। এই যুদ্ধের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কিয়েভ ও পোল্যান্ড সফর আরও একটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছে। গত সোমবার কিয়েভে বাইডেনের নাটকীয় সফর এবং পরদিন পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশোতে তাঁর বক্তব্য ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন আরও চাঙ্গা করেছে। মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইউক্রেনের যুদ্ধকে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর অস্তিত্ব-সম্পর্কীয় যুদ্ধ হিসেবে তুলে ধরেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন। যুদ্ধ যতদিন ধরেই চলুক, কিয়েভের পাশে থাকবে ওয়াশিংটন- কিয়েভে দেওয়া বাইডেনের এই বক্তব্য এবং পুতিনের দেওয়া ভাষণে বোঝা যায়, যুদ্ধ কতটা দীর্ঘ হতে পারে।
এদিকে দুই বৃহৎ শক্তির উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে নিজের নতুন কৌশলগত খেলা শুরু করেছে চীন। ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র না পাঠাতে চীনকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও চীন বলছে, রাশিয়াকে অস্ত্র পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। এর মধ্যে শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই-কে মস্কোতে পাঠিয়েছে চীন। শিগগিরই দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়ায় যাবেন বলে খবর এসেছে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য পশ্চিমাদের দায়ী করেছেন পুতিন। এর কিছুক্ষণ পর ওয়ারশোতে দেওয়া ভাষণে বাইডেন বলেন, পুতিন ভেবেছিলেন বিশ্ব গুটিয়ে যাবে, কিন্তু তিনি ভুল ছিলেন। ন্যাটো এখন আগের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। কিয়েভ শক্তভাবে দাঁড়িয়েছে এবং ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমাদের সহায়তা ব্যর্থ হবে না। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া জয়ী হবে না বলে অঙ্গীকার করেন ।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি 'নিউ স্টার্ট' স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। এই ঘোষণায় পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘোষণার পর দিন রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ স্টেট দুমায় এই চুক্তিতে অংশগ্রহণ স্থগিত করার পক্ষে ভোট হয়।
এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য মস্কোকে প্রাণঘাতী অস্ত্র পাঠানোর কথা তারা ভাবছে না। এই যুদ্ধে বেইজিংয়ের ভূমিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছে।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়া সফরের পরিকল্পনা করছেন শি জিনপিং। তাঁর সম্ভাব্য সফরের পরিকল্পনায় যুক্ত সূত্রের বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধ বন্ধ করা ও শান্তি আলোচনা শুরুর উদ্যোগ নিতে চান জিনপিং। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে চান, এই সংঘাতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না। জিনপিংয়ের মস্কো সফর এবং পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের দিন এখনও ঠিক হয়নি। তবে চলতি বছরের এপ্রিল বা মে মাসে রাশিয়ায় ওই সফরে যেতে পারেন তিনি।
মস্কোতে অবস্থানরত চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই বুধবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ওয়াং বলেন, কৌশলগত নেতৃত্বে শি জিনপিং ও পুতিন দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরপর ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে পুতিন বলেন, আগের বছরগুলোর পরিকল্পনা অনুযায়ী রাশিয়া-চীনের সম্পর্ক বিকশিত হচ্ছে। সবকিছুই এগিয়ে যাচ্ছে ও উন্নত হচ্ছে। রাশিয়া ও চীনের সম্পর্ক নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে। শি জিনপিংয়ের রাশিয়া সফরের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুতিন।
ওয়াং ই বলেন, অন্য কোনো দেশ চীন ও রাশিয়াকে চাপ দিতে পারে না। ভিন্ন দেশের চাপের মুখে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্কে কোনো ঘাটতি দেখা দেবে না।
এদিকে স্পেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রোবেলস বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইকে শক্তিশালী করতে জার্মানির তৈরি ছয়টি ল্যাপার্ড ট্যাঙ্ক পাঠানো হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: