
বখতিয়ার রহমান, পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি : দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেও গত ২২ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা গ্রামের মরহুম মোবারক হোসেনের পুত্র প্রয়াত সিরাজুল হক । তাই পিতার মৃত্যুর পরেও তাহার সন্তানদের মানষিক যন্ত্রনা আজও দুর হয়নি। প্রয়াত সিরাজুল হকের প্রথম পুত্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক অনেকটাই আক্ষেপ করে বলেন, বাবা ইন্তেকাল করে পরপারে চলে গেলেন, অথচ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকুও পেলেন না । যা আমাদের জন্য চরম কষ্টের ।
জানা গেছে, সিরাজুল হক বিগত ১৯৫৪ সনের ১৯ অক্টোবর জম্ম গ্রহন করেন । বড় ভাইয়ের চাকুরির সুবাদে চট্রগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ থানার ওয়াজেদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৭১ সনে এসএসসি পাস করেন ।
পরবর্তিতে সেখান থেকে তিনি নোয়াখালীর এক আত্মীয়র বাসায় যান । সেখান থেকে ভারতে গিয়ে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে ২ নং সেক্টরে ১০ বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেনাবাহিনীর সঙ্গে থেকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন । সেখানে ২ নং সেক্টরের কমান্ডার খালেদ মোশাররফ, প্লাটুন কমান্ডার মেজর জাফর ইমাম, হাওলাদার আঃ জলীল সহ ভারতের বেলুনিয়ায় যেয়ে যে হেড কোয়াটার গঠন করেন সেখানকার কোয়াটার মাষ্টার সিপাহী দুলাল সিরাজুল হকের উপর কোয়াটারের ষ্টোর কিপারের দায়িত্ব অর্পন করেন । বেলুনিয়া থাকা কালীন সিরাজুল হককে প্রতিমাসে ৫শ’ রুপি করে সম্মানী ভাতা দেয়া হয় ।
পরবর্তিতে সিরাজুল ইসলাম বেলুনিয়া থেকে ফেনির পশুরামে আসার পর ওই এলাকা মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে আসে । তারপর চট্রগ্রামের নাজিরহাটে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর তুমুল যুদ্ধে হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পন করে । সিরাজুল হক সে সময় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছিলেন । দেশ স্বাধীনতার পর ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসলে সিরাজুল হক ১৪ জানুয়ারী ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ী ফিরে আসেন ।
পরবর্তিতে ১৯৭৩ সনে সিরাজুল হক আর্ম ষ্টোরের হেড ক্লার্ক ২ নং সেক্টরের সৈয়দপুর সেনা ক্যাম্পে ছাড়পত্র জমা দিয়ে মুহাম্মদ আতাউল গণী ওসমানী স্বাক্ষরিত সনদ গ্রহন করেন । পরবর্তিতে সিরাজুল ইসলাম ২০১৪ সনের ৩০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য জামুকায় অনলাইনে আবেদন করেন । যার ডিজি নং-২১১৮১৪ ।
তথ্য প্রমানে জানা গেছে. ভারত থেকে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল সেখানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৬৬৯৮ নম্বরে সিরাজুল ইসলামের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । বিগত ১৯৯৯ সনে নোয়াখালীর চাটখিল থানা মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ উপলক্ষে যে স্বরণিকা প্রকাশিত হয়েছিল, সে স্বরণিকাতেও সিরাজুল হকের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।
এদিকে সিরাজুল ইসলাম বার্ধক্য জনিত কারনে চলতি সনের গত ২৬ ফেব্রয়ারী ইন্তেকাল করেন । মৃত্যুর পুর্ব পর্যন্ত তিনি কুয়েতপুর সরঃ প্রাথঃ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন । প্রয়াত সিরাজুল হকের প্রথম পুত্র ওমর ফারুক , দ্বিতীয় পুত্র রায়হান আলী ও কন্যা ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাহার বাবা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন । রাষ্ট্রিয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছিলেন । তার পরেও সিরাজুল হকের ভাগ্যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি মিলেনী ।
তবুও প্রয়াত সিরাজুল হকের সন্তানদের প্রত্যশা তাদের বাবা বেঁচে না থাকলেও হয়তো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি টুকু পাবেন । তাহার সন্তনেরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয়ে বেঁচে থাকতে চান । এটাই হবে তাদের পরিচিতি ।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: