নিজস্ব প্রতিবেদক : পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জ্বালানি খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এনার্জি খাতের উন্নয়ন করতে হবে, এটি ছাড়া এ বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
সোমবার (০৩ জুন) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আইইবি'র কেমিকৌশল বিভাগের উদ্যোগে "এনার্জি সংকট এবং পরিবেশগত প্রভাব পরিচালনার জন্য জরুরি পদক্ষেপ" শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে কেমিক্যাল ও এনার্জি খাতের নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আমার মন্ত্রণালয় এ খাতের উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণে সজাগ থাকবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের পথে আমাদের যেতে হবে। কারণ ফসিল ফিউলের সমাপ্তি আছে। প্রধানমন্ত্রী এখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সেমিনারে শহীদুজ্জামান সরকার আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি জ্বালানি কোম্পানি অধিগ্রহণ না করতেন তাহলে আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা থাকত না।
তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই অফশোর এক্সপ্লোরেশনের চেষ্টা করব। তবে, অন্যান্য উৎস থেকে রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টা আমাদের করতে হবে। এ সংকট আমরা অতিক্রম করতে পারব না যদি না নতুন উৎস থেকে আমরা এনার্জি সংগ্রহ করতে করতে পারি। একাজে প্রকৌশলীদের এগিয়ে আসতে হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় সংসদের সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর।
তিনি বলেন, আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে জ্বালানি ঐ বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা শতভাগ সাফল্য অর্জন করতে চাই। চ্যালেঞ্জ সমাধানে আমাদের সমন্বয় বাড়াতে হবে, এবং নেট মিটারিং বাস্তবায়নে সচেতন হলে আমাদের খরচ কমে আসবে।
তিনি আরো বলেন, ৫৭ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ হয় বাংলাদেশে। যারা বেশি কার্বন নিঃসরণ করে তাদের দায় আমাদের নিতে হচ্ছে এটি নিয়ে আমরা পেশাদার জায়গা থেকে সোচ্চার হতে পারি।
স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এস এম মনজুরুল হক মঞ্জু। তিনি বলেন, মেধাবী প্রকৌশলীদের কর্মদক্ষতায় বাংলাদেশ এনার্জি খাতে প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ খাতের আরো উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট নিরসনে অবদান রাখতে পারব।
সম্মানিত আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ জ্বালানি আমাদের রিজার্ভ করে রাখতে হয়। সেজন্য আমাদের নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপর। আমাদের নিজস্ব ক্লিন জ্বালানি কম।সাম্প্রতিক জ্বালানি সংকটের পেছনে অনেক কারণ একত্র হয়েছে। দাবদাহ, বেশি এসি ব্যবহার জমিতে সেচ, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি একসাথে হয়েছে। সংকট নিরসনে অপচয় রোধ এবং সিস্টেম লস বন্ধ করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে পিডিবি। আমরা কার্বন নিঃসরণ কমাতে সচেষ্ট। এ নিয়ে ভয় কমাতে হবে। ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা।
তিনি বলেন, এনার্জি ডিভিশন থেকে আমরা এনার্জি নিয়ে থাকি। তারা এটি আমদানি করে থাকেন। তবে তারা কতটা দক্ষতার সাথে এটি করতে পারেন তার সাথে আমাদের সাফল্যের সম্পর্ক রয়েছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী খন্দকার আব্দুস সালেক (সুফি) পিইঞ্জ। তিনি বলেন, আমাদের এখন এনার্জি সংকটের কারণ বৈশ্বিক অস্থিরতা বৃদ্ধি এবং যুদ্ধ। তবে আমরা নিজেরাই কয়লা ও প্রাকৃতিক সম্পদ খনি থেকে সঠিক সময়ে উত্তোলন করতে পারলে এ সংকট দেখা দিত না। তবে এখনো তরল পদার্থ যদি আমরা দ্রুত উত্তোলন করতে পারি তাহলে আরো বড় সংকট তৈরি হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারে বাংলাদেশ। এখন ডলার সংকট, বিদ্যুৎ এর চাহিদা বৃদ্ধির ফলে এনার্জি সংকট বেড়ে গেছে। রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য পেট্রোবাংলা ও পিডিবির পরিকল্পনা সাজাতে হবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সঠিকভাবে স্থাপন হয়নি বলে আমরা এর সুফল কম পাচ্ছি। এনার্জি সংকট এসডিজি অর্জনে আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে। গ্যাস সংকট সমাধান না হলে ইন্ডাস্ট্রি উৎপাদন কমবে এবং এক্সপার্ট কমে যাবে। ফলে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়বে।
তিনি মনে করেন, প্রকৌশলীদের সামনে এআইসহ বর্তমান প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে না পারলে এ খাতের নেতৃত্ব চলে যাবে অন্য দেশের প্রকৌশলীদের হাতে।
তিনি জানান, টেন্ডার কার্যক্রম চলছে। কিন্তু অনুসন্ধান এবং উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হতে যেন দেরি না হয় সেটি দেখতে হবে। ২০২৬ সালের আগে এ সংকট নিরসনের সম্ভাবনা নেই, তখন এল এন জি যুক্ত হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের বিষয়টিকে স্বাভাবিক কারণে গুরুত্ব দিতে হবে। কয়লা চুরির ঘটনায় প্রকৌশলীদের হয়রানি না করার আহ্বান জানান তিনি।
আইইবির কেমিকৌশল বিভাগ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ ওবায়দুল্লাহ (নয়ন) এর সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কেমিকৌশল বিভাগ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এ. এন. এম. তারিক আব্দুল্লাহ।
এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)’র কেমিকৌশল বিভাগ ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ ইলিয়াস হোসেনসহ অনেকেই মূল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / জেডএস/সানি
আপনার মতামত লিখুন: