• ঢাকা
  • শনিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক বিজিবি


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ০৬ ফেরুয়ারী, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০১:১৫ পিএম
মিয়ানমারে চলছে গোলাগুলি
সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক বিজিবি

জাফর আলম, কক্সবাজার : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত ঘেঁষা ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্তে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার জান্তা সরকারের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে চলা সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতভরও দুপক্ষের মধ্যে চলেছে গোলাগুলি। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে সময়ও সেটি অব্যাহত আছে।সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলির ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছেন দেশটির বিজিপি সৈনিক, চাকমা, রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের হাজারের কাছাকাছি লোকজন। তবে তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় আছে বিজিবি।

এদিকে টানা কয়েকদিনের ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কে এরই মধ্যে তুমব্রু সীমান্তের তিনটি গ্রাম কোনার পাড়া, মাঝের পাড়া, বাজার পাড়া জন মানবশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামে কয়েকজন পুরুষ ছাড়া নারী ও শিশুরা নিজেদের মতো করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে।সীমান্তের পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।এদিকে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঘুমধুম এলাকা পরিদর্শনের সময় মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম।

তিনি বলেন, নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখের পর থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। বিশেষ করে টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার এলাকাগুলো অশান্ত হয়ে যায়। তাদের সরকারি বাহিনী ও কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীদের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ধারণা দেখা দেয়, যার ফলে বিজিবি সদর দপ্তরে নির্দেশনা অনুযায়ী, সীমান্তে বিজিবি সংখ্যায় শক্তি বৃদ্ধি করেছি। নতুন করে যেন কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে পালংখালি বর্ডার এলাকা ভিতরে কিছু মর্টারশেল এসে পড়ে। তবে সেখানে কেউ আহত বা নিহত হয়নি। তারপরও মায়ানমার বিজিপির কাছে কঠোরভাবে প্রতিবাদ লিপি পাঠিয়েছি। 

পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করলে গত পরশু রাত থেকে ঘুমধুম, তমব্রু, বাইশফাঁড়ি এলাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর মধ্যে যথেষ্ট সংঘর্ষ আকার ধারণ করে। আমরা বর্ডারকে প্রটেক্ট করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করি, যা আমরা সফল হয়েছি।তিনি মিয়ানমার বিজিপি প্রসঙ্গে বলেন, গতকাল সকালে হঠাৎ করে যখন বিজিপি বাহিনীরা কোনোভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠছিল না তখন জীবন বাঁচানোর জন্য তারা বর্ডারে অনুপ্রবেশ করতে চায়। আমরা তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী তাদেরকে নিরাপত্তা মেসেজ দেই। তারপর তারা আমাদের কাছে অস্ত্র সেরেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করে। এরপর তাদেরকে নিরাপত্তা হ্যাভেনে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করি। তাদের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছে।

মর্টারশেল পড়ে হতাহতের ব্যাপারে বলেন, সোমবার দুপুরে মর্টারশেল আঘাতে দুইজন সাধারণ নাগরিক নিহত হন। তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ বাহিনী (বিজিপি) কে কঠোর প্রতিবাদ লিপি জানিয়েছি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি হেডকোয়ার্টার কাজ করে যাচ্ছে। মিয়ানমার সরকারের কাছে কনসাল তুলে ধরেছি। 

অনুপ্রবেশের ব্যাপারে আমাদের সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।এদিকে কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, চলমান সীমান্ত সংঘর্ষে মিয়ানমারের অনেক বেসামরিক নাগরিক সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশ ডুকে পড়তে পারে, তবে এটা আমরা কোনোভাবেই কামনা করি না। সীমান্তে আটকে পড়া পরিবারগুলোর খাদ্যসংকট সহ মানবিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক সংস্থাদের এগিয়ে আশা উচিত। তবে কোনোভাবেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেয়া ঠিক হবে না।

পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ২২৯ বিজিবির সদস্য : মিয়ানমারের বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি) মোট ২২৯ জন সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। একসঙ্গে ১১৪ জন সদস্য প্রবেশ করেছেন।মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য জানান।তিনি বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আশ্রয় নেওয়া বিজিপির সদস্য সংখ্যা ছিল ১১৩। পরে আরও দুজনকে রিসিভ করলে সে সংখ্যা হয় ১১৫। এরপর একসঙ্গে আরো ১১৪ জন প্রবেশ করেন।এদিকে, মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী ও বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ওই ঘটনাটি বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় চলমান অস্থিরতার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করা হয়েছে। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image