আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে ফলাফলের পর কেন্দ্রীয় সরকার গঠন নিয়েও শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল বলছে, তারা দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়েছে এবং এককভাবে সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির বর্তমান শীর্ষ নেতারা মন্তব্য করেছেন, প্রেসিডেন্ট তাদের সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন।
ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার দু’দিন পরও জাতীয় পরিষদের পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশ করেনি দেশটির নির্বাচন কমিশন। সেনাবাহিনী জালিয়াতির ষোলোকলা পূর্ণ করার জন্যই এ কৌশল অবলম্বন করছে বলে অভিযোগ করেছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
এদিন সকালে পিপিপি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন নওয়াজ শরিফ। শনিবার সারাদিন খবর ছড়িয়ে পড়ে– জোট সরকার গঠনের আলোচনা শুরু পিটিআইর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সেনাসমর্থিত পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
পিপিপি চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, জোট সরকার গঠন নিয়ে পিএমএল-এন বা অন্য কারও সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। তিনি বলেছেন, পিপিপিকে ছাড়া কেন্দ্রীয়, পাঞ্জাব ও বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার গঠন করা যাবে না।
শনিবার দেশটির জিও নিউজকে বিলাওয়াল বলেন, ‘আমরা এখনও ভোটের পুরো ফলাফল জানি না, বিজয়ী স্বতন্ত্র পার্লামেন্ট সদস্যরা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা নিচ্ছেন, সেটাও জানি না। পিএমএল-এন, পিটিআই বা অন্যদের সঙ্গে জোট সরকার গঠনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি।’ বিলাওয়াল বলেন, ‘পিপিপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি প্রধানমন্ত্রী
হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করেছে। এখন আমাদের যদি সেটা পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে আমাদের আরেকটি বৈঠক করতে হবে এবং সেই বৈঠকে আমরা কীভাবে এগোব, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর আলি খান বলেন, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মিলে একক সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছেন। গহর আলি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে ফলাফল এসেছে তাতে এটা স্পষ্ট, পিটিআই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে। তা ছাড়া পাঞ্জাবের প্রাদেশিক আইনসভায় আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছি।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৫ আসনের মধ্যে ১৭০টিতে পিটিআই জিতেছে দাবি করে ব্যারিস্টার গহর বলেন, ‘যেহেতু এককভাবে সরকার গঠনের সুযোগ আমাদের রয়েছে, তাই জোট গঠনের কোনো পরিকল্পনা নেই। পিএমএল-এন অথবা পিপিপির সঙ্গে কোনো যোগাযোগও আমাদের হয়নি।’ তিনি বলেন, এখন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা ইমরান খানই নির্ধারণ করবেন। তিনিই আমাদের মূল নেতা, সেটা মুক্ত থাকলেও, আবার কারাগারে থাকলেও।’
এ ছাড়া শনিবার রাতের মধ্যে বাকি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা না হলে পিটিআই সমর্থকরা আজ রোববার রাজধানী ইসলামাবাদে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এবারের নির্বাচনে সব জল্পনাকল্পনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন। ফলে এ দলটিরই সরকার গঠনের কথা। তবে দেশটির শক্তিধর সেনাবাহিনী তাদের শত্রু ইমরানকে ক্ষমতার বাইরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। পিটিআই বাদে অন্যান্য দলের সমন্বয়ে জোট সরকার গঠনের জোর চেষ্টা চলছে। এ অবস্থায় পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে। পিটিআই সমর্থকরা দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন। এরই মধ্যে শনিবার গভীর রাতে জেলে থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ভাষণে ইমরান খান নির্বাচনে বিজয় দাবি করেছেন। তিনি নেতাকর্মীকে বিজয় উদযাপন এবং নফল নামাজ পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: