
মার্ক জাকারবার্গ নয়, বাংলাদেশি মার্ক সাকারবার্গ( আদতে তার নাম সায়েম) ফাঁদে পড়েছেন লাখ লাখ তরুণ-তরুণী। টেলিগ্রামে একটি গ্রুপ থেকে প্রলুব্ধ করে পমপম নামে আর এক অ্যাপের মাধ্যমে করতেন পর্নোগ্রাফি, নিষিদ্ধ ছবি-ভিডিও নিয়ে ব্যবসা। এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডির হাতে ধরা পড়েছেন সাইবার অপরাধী সায়েমসহ নয়জন।
সোমবার (২২ মে) মালিবাগ সিআইডি হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, আন্তর্জাতিক টেলিগ্রাম চক্রের মূল হোতাসহ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে হাজার হাজার কোমলমতি তরুণীকে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল, একই সঙ্গে অভিভাবকদেরও দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে তারা।ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছিলেন, তাদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আইডি হ্যাক করে পমপম নামে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ তাদের গোপন ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করছে, অর্থ দাবি করছে। অর্থ দিতে না পারলে ভিডিও কলে এসে আপত্তিকর কর্মকাণ্ড করতে বাধ্য করছে। আর কোনো প্রস্তাবেই সাড়া না দিলে ভিকটিমদের নাম-পরিচয় আর ব্যক্তিগত তথ্যসহ লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবারের টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে ভাইরাল করে দিচ্ছে।
গোয়েন্দা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে চক্রটিকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করে সিআইডির সাইবার পুলিশ।গ্রুপটি আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে যে কেবল টাকা আয় করে তা নয়, চক্রটি ওইসব ভিডিও দেশ-বিদেশে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে বলেও জানান তিনি।
সিআইডি প্রধান জানান, মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের মতো দেশের অসংখ্য ক্রেতা গ্রুপটির সদস্য হয়েছেন। তারা অল্প বয়সী মেয়েদের আপত্তিকর ওইসব ভিডিও ক্রয় ও সংরক্ষণ করে থাকে।চক্রটির নেতৃত্ব দেয় মার্ক সাকারবার্গ নামে এক ব্যক্তি। শুরুতে খুবই চতুর এই মার্ককে চিহ্নিত করা সহজ ছিল না। আমরা প্রযুক্তির সহায়তায় তার নাম-পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি। মার্কের আসল নাম আবু সায়েম। বেকার সায়েম থাকে চট্টগ্রামে। এনআইডি অনুযায়ী তার বয়স ২০ বছর। সে শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম থেকে ইলেকট্রিক্যালে ডিপ্লোমা করেছে। তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
সিআইডি প্রধান জানান, এরই মধ্যে আরাফাত নামে এক ভুক্তভোগী ও তার প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি পমপম গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়ায় ডিএমপির তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মার্ক সাকারবার্গ ও তার দলের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে একটি মামলা করেন।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মার্ক ওরফে সায়েমকে গ্রেফতার করা হয়। মার্কের দেয়া তথ্যানুযায়ী, তার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু শাহরিয়ার আফসান অভ্রকে চট্টগ্রামের হাউজিং এলাকা থেকে এবং বোগদাদী শাকিলকে উখিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।
মার্ক ওরফে সায়েমের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে মার্ক সাকারবার্গ আইডিটি লগইন করা অবস্থায় পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে আবু সায়েমই মার্ক সাকারবার্গ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পমপম গ্রুপের যত চ্যানেল এবং গ্রুপ আছে তার অ্যাডমিনদের আসল নাম-পরিচয় পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।
সিআইডি প্রধান আরও জানান, পমপম গ্রুপের অ্যাডমিনদের কাজ ছিল মার্কের হয়ে নতুন নতুন কনটেন্ট জোগাড় করা। নতুন কনটেন্ট পেতে তারা ফেক এনআইডি বানিয়ে টার্গেটের ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম আইডি হ্যাক করত এক সময়।
ওরিজিনাল কনটেন্ট পাওয়ার পদ্ধতি আরও সহজ হয়ে গিয়েছে জানিয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীদের সাবেক প্রেমিকেরাই নতুন নতুন কনটেন্ট দিচ্ছে।
মার্ক ওরফে সায়েম, অভ্র এবং শাকিলকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের ডিভাইস তল্লাশি ঢাকানিউজ২৪.কম / এস
আপনার মতামত লিখুন: