গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়া করতে পারেনি হারুন মিয়া (২৫)। সংসার চালাতে স্কুল ছেড়ে অন্যের দোকানের এক কোনায় টেবিল পেতে বিক্রি শুরু করেন চা। এই আয় দিয়ে কোনোমতে মিটে যায় তাঁর সংসারের খরচ। আবার শুরু করেন লেখাপড়া। প্রথমে রাখতে শুরু করেন গ্রাহকের জন্য কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা। এর মধ্যেই কিছু কিছু বই কিনে রেখে দেন দোকানের পাশেই। চা-প্রেমীরা চা পান করতে করতে বই পড়ার নেশায় পড়েন। গড়ে ওঠে ছোটখাটো একটি পাঠাগার। এবার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে দেওয়া হয় 'প্রিয় বাংলা পাঠাগার' পুরস্কার। তাঁর দোকানের অবস্থান ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের ধান মহালে।
প্রিয় বাংলা প্রকাশনীর উদ্যোগে গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর রাজধানী ঢাকার শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চা বিক্রেতা হারুন মিয়াকে 'প্রিয় বাংলা পাঠাগার' পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। নাট্যাভিনেতা আবুল হায়াত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে হারুনের হাতে পুরস্কারের সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন। পাঠাগার গড়ে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর স্বীকৃতিস্বরূপ হারুন ছাড়াও দেশের আরো তিন ব্যক্তিকে এই পুরস্কার দেওয়া হয় প্রিয় বাংলা প্রকাশনীর পক্ষ থেকে। এ ছাড়া পুরস্কৃতদের প্রত্যেকের হাতে ২০০ বই তুলে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে হারুন মিয়া বলেন, 'আমি অতি ক্ষুদ্র একজন মানুষ। কিন্তু যে সম্মান আমাকে দেওয়া হয়েছে তা বহন করার ক্ষমতা আমার নেই। বই পড়ার নেশা থেকে আমি আজেবাজে টাকা খরচ না করে বই কিনে আনি। আর তা আমার চা স্টলে রাখি চা-প্রেমীদের পড়ার জন্য। গড়ে তুলি পাঠাগার।' জানা যায়, হারুনের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরশহরের সতিষা মহল্লায়। দরিদ্র হারুন অর্থাভাবে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আয় রোজগারের আশায় ২০১২ সালে বেছে নেন চায়ের দোকান। ২০২৩ সালে চা বিক্রির টাকায় গড়ে তোলেন পাঠাগার। পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে গিয়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এখন তিনি স্বপ্ন দেখছেন একজন আইনজীবী হওয়ার।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: