• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

নিজে কাঁদলেন, অন্যদেরও কাঁদালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৬:৪২ পিএম
নিজে কাঁদলেন, অন্যদেরও কাঁদালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)অঞ্জন দাশ

নাজমুল হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদক  : লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায় প্রায় ৩ বছর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অঞ্জন দাশ। তিনি বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন, এ খবর পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা চত্বরে বসে কাঁদছিলেন পৌরসভার পশ্চিম কাঞ্চনপুর এলাকার ৩৫ বছর বয়সী সীমা রানীর বর্মন। তার ভাষায়, ‘টিয়ুনু বলে যাইবগু? এহন আঁরে হনে চাইবু (ইউএনও না কি চলে যাচ্ছে, এখন আমাকে কে দেখবে?)। আঁর স্বামী তো আরো বেশি মাইরবো। এহন কার কাছে যাইমু?’ এ বলে তিনি অজস্র কান্না করেন।

অন্য দিকে দেখা মিলে হাজিমারা আশ্রায়ণ কেন্দ্রের পারুল আক্তার এসেছিলেন অঞ্জন দাশকে বিদায় জানাতে এবং কিছু সহযোগিতা চাইতে। ইউএনও থাকা অবস্থায় অঞ্জন দাশ স্বামী পরিত্যাক্তা পারুলকে আশ্রায়ণে একটা ঘর করে দিয়েছেন। সেখানে এক ছেলেকে নিয়ে এখন বসবাস করেন তিনি।

ফুল ছিটিয়ে, বুকে জড়িয়ে ধরে কোনো স্বজনের বিদায়ে যেমন মানুষ পিছুপিছু অনেক দূর পর্যন্ত এসে বিদায় দেন, ঠিক তেমনি ভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাশের বিদায়ে তেমনটাই করেন রায়পুর উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। আর মানুষের এমন ভালোবাসায় বিদায়ের সময় নিজেও কেঁদেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিদায়ে সেই ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছে। একাধিকজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়েও ইউএনও এর বিদায়ে কেন কেঁদেছেন সে কথা লিখছেন।

জানা গেছে, বদলি হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন দাশ চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় ইউএনও হিসেবে রোববার ( ১০ ডিসেম্বর) সকালে যোগদান করবেন।

গত বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্যোগে বিদায় অনুষ্ঠান করা হয়। বিদায়ের সময় কান্নার প্রসঙ্গ আসতেই হেসে ইউএনও বললেন, কাউকে নির্দেশ দিয়ে বা বলে কয়ে তো কাঁদানো যায় না। কান্নাটা ভেতর থেকে আসতে হয়। প্রায় তিন বছর রায়পুরের ১২১টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ জনগণের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তাই নিজে কেঁদেছি এবং শিক্ষক ও মানুষ ভালোবাসার জায়গা থেকে কেঁদেছেন।

আগামী শনিবার (৯ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা জানানো হবে বলে জানান উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ।
রায়পুরের একাধিক শ্রেণিপেশার মানুষ বলেছেন, ইউএনও হিসেবে অঞ্জন দাশ যখন দায়িত্ব পালন করেছেন, তখন তার হাসিমুখ দেখে সবাই ভরসা পেতেন, কথা বলার সাহস পেতেন। তার নেতৃত্বে আড়াই বছরে একবার জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন স্বাস্থ্য কার্যক্রমে দেশসেরা উপজেলা হয়েছে রায়পুর। উপজেলা শহরে স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য, উপজেলা প্রশাসন শিশু পার্ক তৈরি, আধুনিক লাইব্রেরি, আর্ট স্কুল, নান্দনিক বাজার সেট নির্মাণ, স্মার্ট চরপাতা গ্রাম ও স্কুল, ১২১টি প্রাথমিক স্কুল এবং স্বাস্থ্য বিভাগে তদারকি ও স্বল্প খরচে ‘স্বপ্নযাত্রা’ নামে ৫টি অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ এ ধরনের বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি ও নানা উদ্যোগ নিয়েছেন অঞ্জন দাশ। এগুলো সাধারণ মানুষ ও শিক্ষকদের কোনো না কোনো কাজে লেগেছে বা তাদের মধ্যে ভালোলাগা তৈরি হয়েছে।

আর অঞ্জন দাশ বলেন, ‘একজন ইউএনওর কাছে মানুষ কিছু প্রত্যাশা নিয়ে আসেন। আমার সঙ্গে সবাই কথা বলতে পেরেছেন। আমি মানুষের কথা শুনেছি। ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপেও অনেকে যোগাযোগ করেছেন। আমি চেষ্টা করেছি মানুষের ভোগান্তি কমাতে। ইউএনও হিসেবে কাজের দায়িত্বের বাইরেও মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। কেউ হয়তো জন্ম নিবন্ধন, পারিবারিক, জমিসংক্রান্ত, লেনদেনসংক্রান্ত ঝামেলায় আছেন, সংশ্লিষ্ট অফিসে সমস্যাটি সমাধানের অনুরোধ করেছি। এভাবেই মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন দাশ আরও বলেন, ‘অবকাঠামো নির্মাণ বা উন্নয়ন ইউএনওর দায়িত্ব নয়। আমি এগুলো করেছি নতুন কিছু করতে ভালো লাগে সে কারণে। বলা যায়, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাজগুলো করেছি।’

২০২১ সালের নভেম্বরে রায়পুর উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন অঞ্জন দাশ। ইউএনওর বিভিন্ন সৃজনশীল পরিকল্পনায় সহযোগিতা করেন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মারুফ বিন জাকারিয়াসহ অন্যরা। রায়পুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মইনুল হোসেন বলেন, অঞ্জন দাশ একজন ‘ডায়নামিক লিডার’ ছিলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে পড়াশোনা করা অঞ্জন দাশ বলছিলেন, তিনি ইউএনও হিসেবে বিভিন্ন কাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন বা সমন্বয় করেছেন। তবে কাজগুলো বাস্তবায়নে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি ছিল। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম ও স্বল্প খরচে সাধারন মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ায় চলতি বছরে দেশসেরা বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন স্বর্ণ পদক ও শিক্ষা খাতে শ্রেষ্ঠ উপজেলা হওয়ার পেছনেও সম্মিলিত উদ্যোগ ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) আমির হোসেন ও প্রধান শিক্ষক তাজল ইসলাম বলেন, ইউএনও শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় নয়, ব্যক্তিগত অর্থায়নেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পোশাক বিতরণ করেছেন। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষে বিদ্যালয়ে পার্ক স্থাপন, ফুটবল, ক্যারাম বোর্ডসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ, ক্লাস্টার অনুযায়ী বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, মেধাবৃত্তি প্রাপ্ত সকল শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদানের লক্ষে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করেছেন। বাংলাদেশ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন পরিচালনা সকল শিশু ও শিক্ষকদের জন্যে যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন এর ব্যাবস্থাও করেছেন ইউএনও অঞ্জন দাশ। সেজন্যই বিদায়ে শিক্ষক সমাজ তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image