• ঢাকা
  • শনিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

সংস্কৃতি খাতে বাজেটের এক শতাংশ বরাদ্দ দাবিতে উদীচীর সেমিনার


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ৩১ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০:৩৮ পিএম
সংস্কৃতি খাতে বাজেটের এক শতাংশ বরাদ্দ দাবিতে
উদীচীর সেমিনার

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংস্কৃতি খাতে জাতীয় বাজেটের ন্যুনতম এক শতাংশ বরাদ্দের দাবিতে সেমিনার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। 

৩১ মে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে "জাতীয় বাজেট: সংস্কৃতিখাতে এক শতাংশ বরাদ্দের প্রাসঙ্গিকতা" শীর্ষক উদীচীর এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান-এর সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মামুনুর রশিদ, মফিদুল হক, ম. হামিদ, এম এম আকাশ, ফওজিয়া মোসলেম, মানজারে হাসিন মুরাদ, আসিফ মুনির তন্ময়, আজাদ আবুল কালাম, আহকামউল্লাহ, মিজানুর রহমান, রাহুল রাহা, রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা, ডা. লেলিন চৌধুরী, মানজারুল ইসলাম চৌধুরী সুইট, জাকির হোসেন, নারায়ণ চন্দ্র শীল, প্রণয় সাহা, আবদুস সেলিম, ড. আজিজুর রহমান, রঘু অভিজিৎ রায়সহ বরেণ্য সংস্কৃতিজন এবং সংগঠকবৃন্দ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ লিখেছেন এবং উপস্থাপন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। 

মূল প্রবন্ধে অমিত রঞ্জন দে বলেন, জাতীয় জীবনে সংস্কৃতি চেতনা দুর্বল হলে অপসংস্কৃতির বিস্তার ঘটে। সংস্কৃতির যে মানবীয় রূপ তা ক্রমশ দুরে সরে যেতে থাকে এবং কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিনোদনের উপকরণে পর্যবসিত হয়। সাম্প্রদায়িক ভেদচিন্তা ক্রমান্বয়ে মানবিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটিয়ে চলছে, সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতিবাচক প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। একদিকে উন্নয়নের নামে লুটপাট বাণিজ্য, অর্থ পাচার; অন্যদিকে পুঁজিবাদী অর্থনীতির গর্ভজাত ভোগবাদ, যৌনতা, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, মৌলবাদী গোষ্ঠীর তাণ্ডব জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এর বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক গণজাগরণ এখন সময়ের প্রয়োজন। যাকে কেন্দ্র করেই উৎসারিত হবে নবীন চিত্রকলা, সংগীত, নাটক, কাব্য। কিন্তু তার জন্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এবং সদিচ্ছাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বিগত কয়েক বছর ধরে দাবি উঠছে সংস্কৃতিখাতে জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ১ ভাগ বরাদ্দ দেয়ার। কিন্তু তা ০.০৯ থেকে ০.১৬ ভাগের উপরে ওঠেনি কোনোভাবে। 

উদীচীর সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, “সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাজেটের জন্য বরাদ্দের একটা অংশ শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যার মধ্যে গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার, পুতুল নাট্য উৎসব, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব, যন্ত্রসংগীত উৎসব, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক নির্মাণ উল্লেখ্যযোগ্য। কিন্তু, দেখা গেছে প্রায় সবগুলো অনুষ্ঠানই হয়েছে শিল্পকলার চৌহদ্দিতে মিলনায়তনের ভেতরে যেখানে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নেই বললেই চলে। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ শিল্পকলা একাডেমির দরজায় দাঁড়িয়ে ভেতরে কি হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করে। ভেতরে গিয়ে দেখার সাহস তাদের নেই। অথচ সংবিধানের ২৩ নং অনুচ্ছেদে সর্বস্তরের জনগণ যাতে জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে এবং অংশগ্রহণের সুযোগ পায় সে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, “আমরা যদি সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে ব্যর্থ হই তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যতই হোক না কেন তা এক সময় বালির বাঁধের মত ভেঙে পড়বে। সুতরাং সবার আগে এই খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে হবে। বর্তমানে এইখাতে যে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয় তা উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতা পরিশোধ আর শিল্পকলা একাডেমিকেন্দ্রিক শহুরে মানুষের চিত্তবিনোদনের কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়নে শেষ হয়ে যায়। তা গ্রামীণ জনপদের মানুষ বা শ্রমজীবী মানুষের সংস্কৃতি বিকাশে কণামাত্র অর্থও অবশিষ্ট থাকে না। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এ ভূখণ্ডের সংস্কৃতি বিনির্মাণে বিশেষ করে আমাদের লোক ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি নির্মাণে গ্রামীণ জনপদের মানুষের ভূমিকাই অগ্রগণ্য। শুধু তাই নয়, সংস্কৃতি এবং সংস্কৃতিকর্মীরাই রাষ্ট্রের বহুমাত্রিক সংকটে গণমানুষের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করে থাকেন। প্রেরণা জোগান ঘুরে দাঁড়াতে। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ আমাদের গণসংগ্রামগুলো তারই সাক্ষ্য বহন করে থাকে। এই সংস্কৃতিকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কৃতিখাতে জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম এক শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার যৌক্তিক দাবি করে আসছে। তাদের সেই দাবি বারংবার উপেক্ষা করা হচ্ছে, যা আমাদের বাজেট ভাবনা এবং দর্শনের সীমাবদ্ধতা ছাড়া আর কিছু না।“ 

সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, প্রতিবছর জাতীয় বাজেটের আকার বাড়ছে, কিন্তু সংস্কৃতির কাঠামো-পরিকাঠামো বাড়ছে না। মহান মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনা ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সমাজতন্ত্র অভিমুখী আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের যে স্বপ্নকল্প তার সাথে সঙ্গতি রেখে বাজেট প্রণীত হচ্ছে না। যতটুকু যা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তা অবকাঠামো নির্মাণে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। সেখানে চলছে অবাধ লুটপাট এবং নির্ধারিত সময়ে কাজটি সম্পন্ননা করতে পারায় প্রক্কলন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা আরো বলেন, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সংস্কৃতিকর্মীরা সম্মূখ সারিতে ছিলেন। কিন্তু, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর রাজনৈতিক ব্যক্তিরা চলে গেলেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আর সংস্কৃতি কর্মীরা পড়ে থাকলেন রাজপথে। সংস্কৃতি বাজেট যারা করেন তারা সংস্কৃতি বোঝেন কিনা সে প্রশ্ন তোলেন তারা। বলেন, ধর্মীয় মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেয়ার মাশুল দিতে হবে রাষ্ট্রকে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে সংস্কৃতি খাতে বাজেট বরাদ্দের দাবি জানান বক্তারা। 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image