• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

১৯৭১ এর এই দিনে শত্রুমুক্ত হয়েছিলো নোয়াখালী


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:০৩ পিএম
১৯৭১ এর এই দিনে শত্রুমুক্ত হয়েছিলো নোয়াখালী
নোয়াখালী মুক্ত দিবস

নোয়াখালী প্রতিনিধি : সাত ডিসেম্বর নোয়াখালী মুক্ত দিবস। একাত্তরের এদিন ভোরে বৃহত্তর নোয়াখালীর মুজিব বাহিনীর প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত এবং সি-জোনের কমান্ডার মোশারেফ হোসেনের নেতৃত্বে জেলা শহর মাইজদী আক্রমন করে মুক্তিযোদ্ধারা। একযোগে তারা তিনটি রাজাকার ক্যাম্প দখল করে। আত্মসমর্পণ করে পাকিস্থানীদের এদেশীয় দালাল রাজাকাররা। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সন্মুখ যুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধের মুখে অবস্থা বেগতিক দেখে নোয়াখালী পিটিআই’র ট্রেনিং সেন্টার থেকে তড়িঘড়ি করে পালিয়ে যায় পাকিস্থানী সেনারা, শত্রুমুক্ত হয় নোয়াখালী।

৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল। সি-জোনের গুপ্তচরের মাধ্যমে জানতে পারে জেলা শহর মাইজদীতে পাক হানাদার বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে গেছে। তাৎক্ষনিক জোন এর রাজনৈতিক প্রধান আলী আহম্মদ চৌধুরী সহ অন্যান্য কমান্ডারবৃন্দ জরুরী বৈঠকে বসে এবং নোয়াখালী শহরে অবস্থিত পাক বাহিনী ও রাজাকারদের উপর আক্রমন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

৭ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে মুজিব বাহিনীর প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত এবং ডি-জোনের কমান্ডার রফিক উল্যাহ্’র বাহিনী সহ মুক্তিযোদ্ধারা সবাই মিলে যৌথ অভিযান চালিয়ে মাইজদী ভোকেশনাল, নাহার মঞ্জিল, কোর্ট ষ্টেশন, রৌশন বাণী সিনেমা হল, দত্তের হাট, কোল্ড ষ্টোরিজ সহ সব রাজাকার ক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে নিয়ে আসে। বাকি ছিলো শুধু পাকিস্থানি বাহিনীর মূল ক্যাম্প মাইজদী পিটিআই। অন্য সবগুলো ক্যাম্প দখল নেওয়ায় একা হয়ে যায় পিটিআই।

একদিকে সাধারণ মানুষের আনন্দ মিছিল, অন্যদিকে আক্রমন করতে হবে পিটিআই। পিটিআই হোস্টেল দিঘির উত্তর পাড়ে ৩ তলা বিল্ডিং এ রাজাকারদের হেড কোয়াটার ছিল। কিন্তু এ বিল্ডিং ভাঙার মতো কোন বিধংসি অস্ত্র ছিলোনা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। তাই ফেনী থেকে একটা ২ ইঞ্চি মোটার এনে তা থেকে তিন তিনটা মোটার সেলের দ্বারা পিটিআই হোস্টেলে আক্রমনের মাধ্যমে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা দিকে মাইজদী শহরে সর্বশেষ রাজাকার ক্যাম্প এর পতন ঘটিয়ে নোয়াখালীর শহর মাইজদীর হেড কোয়ার্টার হানাদার মুক্ত করা হয়। জেলা শহরের চারিদিকে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তি পাগল মানুষের আনন্দ জোয়ারের ঢল উঠে।

নতুন প্রজন্মের কাছে ৭ ডিসেম্বরের স্মৃতিকে পরিচয় করিয়ে দিতে ১৯৯৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর পাক-বাহিনীর ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত নোয়াখালী পিটিআই সম্মুখে স্থাপন করা হয় স্মরণিকা স্তম্ভ ‘‘মুক্ত নোয়াখালী’’। আর বর্তমান সরকার মতায় আসার পর একই স্থানে বর্ধিত পরিসরে স্থাপন করা হয় নোয়াখালী মুক্ত মঞ্চ।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে পাকিস্থানী বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর মুক্তিকামী ছাত্রজনতা পুলিশ ও ইপিআর ফেরত জওয়ানদের সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত নোয়াখালী ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীতে পাকবাহিনীর হামলার মুখে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে পিছু হটলে নোয়াখালীর নিয়ন্ত্রণ নেয় পাকিস্থানীরা। নোয়াখালী পিটিআই এবং বেগমগঞ্জ সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে শক্তিশালী ঘাটি গাড়ে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী। তাদের সাথে এদেশীয় রাজাকাররা মিলে শুরু করে লুটপাট। এরই মধ্যে

নোয়াখালীর অসংখ্য ছাত্র জনতা প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারত থেকে এসে পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জাপিয়ে পড়ে। কোম্পানীগঞ্জের বামনীর যুদ্ধ, বেগমগঞ্জের বগাদিয়াসহ অসংখ্য যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। শহীদ হয় শত শত মুক্তিযোদ্ধা। শুধুমাত্র সোনাপুরের শ্রীপুরে তারা হত্যা করেছিলো শতাধিক ব্যক্তিকে। ডিসেম্বরের শুরুতেই নোয়াখালীর প্রত্যন্ত প্রান্তরে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্থানিদের পিছু হটিয়ে দেয়। ৬ ডিসেম্বর দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা বেগমগঞ্জ মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা। আর ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় গোটা নোয়াখালী।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image