নিজস্ব প্রতিবেদক : নারীর ক্ষমতায়নে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। তাছাড়া নারীদের স্বার্থ রক্ষায় বর্তমান পদক্ষেপের পাশাপাশি আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।
রোববার (১০ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ইউসেফ বাংলাদেশ আয়োজিত 'ইনভেষ্ট ইন ওমেন : একলেরেট প্রোগরেস' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, নারীর স্বাধীনতা হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা। নারীরা সেদিনই স্বাধীন হবে, যখন সে তার নিজের জীবনটাকে কিভাবে যাপন করবে, সে কোন পোশাক পড়বে, সে তার আয়করা অর্থ দিয়ে কি করবে, সে তার সন্তানকে কিভাবে বড় করবে। নারীরা সমাজের পরিবারের সবার মতামত নিবে। কিন্তু তার সিদ্ধান্তের মূল্যায়ন থাকবে। সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে। সেটুকুই আমার কাছে স্বাধীনতা মনে হয়। তাছাড়া নারীর ক্ষমতায়নে আইন সম্পর্কে সচেতনতা ও আইনের সংশোধন জরুরি। একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়তে নারীর ক্ষমতায়নে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, আমরা এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করতে পারিনি স্বামী-স্ত্রীর সম অধিকার। আমরা এখনো নারীদের নিরাপদ করতে পারিনি। নারীর প্রধান দোষ, অন্যায়কে মেনে নেওয়া। নারীকে প্রতিবাদী হতে হবে। তার অধিকার ছিনিয়ে আনতে হবে। গণপরিবহন কর্মক্ষেত্র যদি সমানভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলেই নারী সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা এটা করতে পারিনি এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের দেশে সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পরিবারের প্রতিটা ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারের পিতা। সেখানে মায়ের ভূমিকা থাকে খুবই কম। এই অধিকার আমাদের পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে তাহলেই নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের সমাজে নারীরা প্রতিবাদ করতে গেলেই দেখা যায়, সেখানে সংসার ভাঙ্গার উপক্রম হয় বা ভেঙ্গে যায়। আর সেখানে কি পরিবারের নারীকেই দোষারোপ করা হয়। এই বৈষম্য থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের সরকার প্রধান দীর্ঘদিন ধরে নারী হওয়ার পরও আমাদের সমাজে নারীর অধিকার পুরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা এখনো নারীর ক্ষমতায়নে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পিছিয়ে আছি, যেটা খুবই দুঃখজনক। এখনো বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা থেকে সুযোগ-সুবিধা নিতে গেলে পুরুষের নাম ব্যবহার করা লাগে। নারীর ক্ষমতায়নের বৈষম্য দূর করতে হলে আমাদের পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে। তাহলেই আমরা সম্মিলিত ভাবে নারী পুরুষ মিলে এগিয়ে যেতে পারবো। তাহলে নারী জাগরণ এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে।
আব্দুল করিম বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা নারী উন্নয়নে ঋণ দিয়ে থাকে। কিন্তু আপনারা লক্ষ্য করবেন কোন নারী কোন সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার পরে টাকাটা তার স্বামীর হাতেই তুলে দিতে হয় । অর্থাৎ পরিবারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে নারীর ভূমিকা তেমন দেওয়া হয় না।
এ্যাড. এলিনা হক বলেন, ছেলে মেয়ে সবাইকে মিলেই আমাদের সমাজটা গড়তে হবে। ধর্মীয় অনুশাসনের দোহাই দিয়ে অনেক সময় আমাদের নারীদের বিভিন্ন অধিকারের জায়গা থেকে থামিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের আগে সচেতন হতে হবে। আমাদের নারীর বৈষম্য থেকে উত্তরণ জন্য শুধু সরকারী বেসরকারী সংস্থার সভা সেমিনারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। আমাদের পুরুষশাসিত সমাজে নারীর ঘরে রাখার যে দীর্ঘদিন ধরে অপতৎপরতা বিরাজমান আছে এটা নতুন নয়। ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক ভাবে এ অপসংস্কৃতি অনেক দিনের। আমরা মনে করি আমাদের অনেক আইন সংশোধনের দরকার আছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেয়া খান বলেন, বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়েছে কিন্তু নারী সামাজিকভাবে সেভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। তবে প্রতিটা জায়গায় আমাদের আসলে যেটা আমাদের নারীর বৈষম্য অনেকটাই কমে এসেছে। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে । যুগোপযোগী ট্রেডে নারীরা যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। পাশাপাশি কোন প্রশিক্ষণগুলা নারীদের জন্য ভাল হয়, সেগুলো আমরা বাছাই করে নারীদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করবো।
তিনি বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে নারী উন্নয়ন নিয়ে কাজ করি এবং নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলি। নারীর প্রশিক্ষণের কথা বলি। কিন্তু নারী পুরুষ বাদ দিয়ে আরেকটি হাত কখনোই একটিভ হবেনা । বাসে নারীদের যাতে সমানভাবে সব সিটে বসতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে সব ক্ষেত্রে সচেতন হাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ইউসেপ বাংলাদেশ'র নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক মূখ্য সচিব ড. আবদুল করিমের সভাপতিত্বে গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান। প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস্ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ও প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান, ইউসেপ বাংলাদেশ'র সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর পপুলেশন কাউন্সিল ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ড. উবায়দুর রব, দৈনিক প্রথম আলো'র যুগা সম্পাদক সোহরাব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইউসেপ বাংলাদেশ এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য তাহমিনা আকতার। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউসেপ ঢাকা উত্তর অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সিনিয়র অফিসার কমিউনিকেশন তামান্না মাহমুদ রিমা এবং গোল টেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন যমুনা টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট সম্পাদক রোকসানা আঞ্জুমান নিকোল।
ঢাকানিউজ২৪.কম / জেডএস/সানি
আপনার মতামত লিখুন: