নিউজ ডেস্ক : ২০২২ সালে ৯ জেলা রোগটির উচ্চ ঝুঁকিতে ছিল, গত বছর তা হয়েছে ১১। দেশে বাড়ছে কুষ্ঠ রোগ। নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় যুক্ত হয়েছে বান্দরবান ও দিনাজপুর। বর্তমানে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৬।
বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালিত হচ্ছে রোববার। এবারের প্রতিপাদ্য– ‘আত্মমর্যাদার পরিবেশ, কুষ্ঠ কলঙ্কের হবে শেষ’। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সকাল ১০টায় শোভাযাত্রা, পরে আলোচনা সভা করবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশিদ আলমের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
আট বিভাগের মধ্যে রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ ৩৯ শতাংশ রোগী। এরপর ঢাকা বিভাগে ১৮, সিলেটে ১২ এবং চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে ৯ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। সর্বনিম্ন ৩ শতাংশ রোগী ময়মনসিংহ বিভাগে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, রংপুর বিভাগের আট জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে নীলফামারীতে। এ জেলায় গত বছর ১৯৬ জনের কুষ্ঠ শনাক্ত হয়, যার ৯ শতাংশই ছিল শিশু।
বর্তমানে কুষ্ঠ রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ১১ জেলা হলো– মেহেরপুর, মৌলভীবাজার, জামালপুর, বান্দরবান, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর ও ঠাকুরগাঁও। এসব জেলায় প্রতি লাখে ৫ জন বা তার বেশি মানুষ কুষ্ঠ আক্রান্ত। মধ্যম ঝুঁকিতে ঢাকাসহ ৬ জেলা। আর নিম্ন ঝুঁকিতে ৩৭ জেলা। ১০ জেলায় কোনো রোগী নেই।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নানা উদ্যোগের পরও কুষ্ঠ রোগের বিস্তার বাড়ছে। এ জন্য রোগটি নির্মূলে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত ও চিকিৎসা পেলে কুষ্ঠ পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো দেশে কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা প্রতি ১০ হাজারে একজনের নিচে নেমে এলে দেশটিকে ‘কুষ্ঠমুক্ত’ ঘোষণা করা যায়। সেই হিসাবে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ কুষ্ঠ রোগমুক্ত’ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে এখনও প্রতি বছর বহু মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বর্তমানে রাজধানীর মহাখালীর ৩০ শয্যার কুষ্ঠ হাসপাতালে ১৫ জন চিকিৎসাধীন। এখানে নতুন শনাক্ত রোগী রাখা হয় না। কুষ্ঠ-পরবর্তী জটিলতা নিয়ে কেউ এলে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আরও দুটি হাসপাতাল পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনায় আরও ২০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে।
৩০ শয্যা কুষ্ঠ হাসপাতালের সাবেক আবাসিক চিকিৎসক সোহেল রানা বলেন, কুষ্ঠ রোগী হিসেবে শনাক্ত হওয়ার ভয়ে আক্রান্ত অনেকে চিকিৎসকের কাছে যান না। কেউ কেউ কবিরাজসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নেন। এসব কারণে সব রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে সময় লাগে। ততদিনে রোগ অনেক দূর গড়ায়। এতে অনেকেই প্রতিবন্ধিতার শিকার হন।
তিনি আরও বলেন, কুষ্ঠ বংশগত নয়, এটি মৃদু সংক্রামক রোগ। ১০০ জনের মধ্যে ২০ রোগী সংক্রামক। কুষ্ঠ বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। তবে রোগী চিকিৎসার আওতায় এলে জীবাণু ছড়ায় না। চিকিৎসা নিতে দেরি হলে রোগীর হাত-পা, চোখসহ বিভিন্ন স্থানে বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়। অনুভূতিহীন হালকা ফ্যাকাসে বা সাদাটে দাগ, চামড়ায় গুটি বা দানা, কানের লতি মোটা হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
জাতীয় কুষ্ঠ রোগ নির্মূল কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. তানজিনা ইসলাম বলেন, রংপুর বিভাগে কী কারণে কুষ্ঠ রোগী বেশি, গবেষণা প্রয়োজন। তবে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও ঘনবসতি এলাকা হওয়ায় রোগী বেশি বলে ধারণা হচ্ছে। কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। সরকার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: