নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি : নীলফামারীর ডিমলায় এক সন্তানের জননী এক গৃহবধূ (১৯) ধর্ষণের ঘটনা গ্রাম্য সালিশের নামে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই এলাকা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সালিশের নামে মিমাংসার ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সরদার হাট গ্রামের কাচারী পাড়ার বাসিন্দা ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর দিনমজুর স্বামী তার স্ত্রী ও সাড়ে তিন বছরের কন্যা সন্তানকে বাড়িতে রেখে কাজের সন্ধ্যানে ঢাকায় যান।
পরের দিন শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) ওই গৃহবধূ নিজ শয়ন ঘরে ঘুমন্ত সন্তান নিয়ে থাকা কালিন সময় রাত প্রায় ৯টার সময় একই এলাকার আক্তারুলের লম্পট ছেলে শাহিন ইসলাম (২৫) বাহির থেকে কৌশলে বাড়ির পিছনের গেট খুলে বাড়িতে প্রবেশ করে ওই গৃহবধূর কাছে ঘরের দরজা খুলে চান।গৃহবধূ দরজা খোলা মাত্রই শাহিন ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে ওই গৃহবধূর হাত-মুখ বেঁধে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে একা থাকা ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর ঘরে শব্দ শুনতে পেয়ে ওই গৃহবধূর স্বামীর বড় ভাই রেজাউল ঘরে প্রবেশ করে লম্পট শাহিনকে হাতে-নাতে আটক করেন।
এমন ঘটনা জানাজানি হলে এলাকার শত-শত উৎসুক মানুষ সেখানে ভিড় জমান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত না করেই লম্পট শাহিনের উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেন ইউপি সদস্য সামছুল হক, বক্কর কসাইসহ মাতব্বরেরা।
পরে বিচারের নামে কালক্ষেপণ করে গত রবিবার (২৮ জানুয়ারি)এলাকায় সালিশ বৈঠক বসিয়ে ভুক্তভোগীর হাত-পা ধরে ক্ষমা চাইয়ে নিয়ে ধর্ষক শাহিনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে নন জুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে গৃহবধূর স্বাক্ষর নিয়ে ঘটনাটি মিমাংসার নামে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন মাতব্বররা।সালিশে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সামছুল হক, এলাকার শহর উদ্দিনের ছেলে বক্কর কসাই, ছকিতুল্লার ছেলে আফজাল হোসেন,জই মামুদের ছেলে টনেয়া দুলাল,আব্দুল গফুরের ছেলে শিক্ষক অলিয়ার রহমান, মনির হোসেন মল্লিকের ছেলে শিক্ষক রাসেলসহ বেশকিছু মাতব্বরের ইচ্ছে মতোই হয় সবকিছু।
ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূ বলেন,আমার স্বামী বাড়িতে না থাকায় শাহিন আমার ঘরে প্রবেশ করে আমার হাত-মুখ বেঁধে একমাত্র সন্তানকে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।আমি শাহিনের বিচার চাই। গৃহবধূর স্বামীর বড় ভাই রেজাউল বলেন,আমি শাহিনকে হাতে-নাতে আটক করেছি।যা এলাকার শত-শত মানুষ স্বাক্ষি।
সালিশের পর ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বলেন,আমার স্ত্রীকে হাত-মুখ বেঁধে ধর্ষণ করা হলো আর সালিশে শুধুমাত্র অভিযুক্ত শাহিনকে হাত-পা ধরিয়ে ক্ষমা চাইয়ে নিয়ে ওরা যা করে দিয়েছেন তাই মেনে নিতে বলেন।সঠিক বিচারতো আমরা পাইনি।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য সামছুল হক বলেন, ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।ওই গৃহবধূর কাছে শাহিন সে সময় গ্যাস লাইট আনতে গিয়েছিলো।এ সময় ভুল বোঝাবুঝি হলে আপোষ-মিমাংসা করে দেয়া হয়।তবে অর্থের বিনিময়ে মিমাংসার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)দেবাশীষ রায় বলেন,এ ঘটনায় আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। ভুক্তভোগীর পক্ষে কেউ কোনো অভিযোগ দিলে অবশ্যই ধর্ষকসহ সালিশকারীদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামের ব্যবহৃত সরকারি-০১৩২০১৩৫৩০২ নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: