আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার জঘন্য ও ন্যক্কারজনক এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে আসলে কে বা কারা ছিল, সে বিষয়ে বছরের পর বছর ধরে আলোচনা চলছে। বিভিন্ন লেখক, গবেষক ও সাংবাদিকের কলমে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধুর হত্যার নেপথ্যের ষড়যন্ত্রের নীল নকশার নানা ঘটনা এবং কেউ কেউ স্পষ্ট করেই বলেছেন, হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ভূমিকা ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের মৃত্যুর পর আলোচনায় উঠে এসেছে বিষয়টি। বুধবার (২৯ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে নিজ বাড়িতে মারা যান বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যা দেয়া সাবেক এই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি একদিকে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, অন্যদিকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবেও আখ্যায়িত।
কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিক ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় রিপোর্ট করেছিলেন, লরেন্স লিফশুলজ তাদের অন্যতম। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী সংঘাতময় নভেম্বর মাসের ঘটনাবলি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন প্রখ্যাত এই মার্কিন অনুসন্ধানী সাংবাদিক।
১৯৭৪ ও ৭৫ সালজুড়ে লিফশুলজের কর্মক্ষেত্র ছিল দক্ষিণ এশিয়া। ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ’র সাবেক দক্ষিণ এশীয় প্রতিনিধি ও দ্য গার্ডিয়ানের নিয়মিত লেখক লিফশুলজ বারবার ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান ও হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত নানা অজানা অধ্যায়ের নতুন দরজা উন্মোচন করেছেন।
বেশ কিছু গ্রন্থের প্রণেতা লিফশুলজ ‘অ্যানাটমি অব ক্যু’ নামের সিরিজ রচনায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। এছাড়া ‘বাংলাদেশ: দ্য আনফিনিশড রেভ্যুলিউশন'- এ বঙ্গবন্ধু হত্যায় বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ’র জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে এনেছেন তিনি।
ক্রিস্টোফার এরিক হিচেন্স নামে আরেক মার্কিন সাংবাদিক তার ‘ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার’ গ্রন্থে লিফশুলজের বরাত দিয়ে মুজিব হত্যাকাণ্ডে সিআইএ’র জড়িত থাকার বিষয়টি জোরালোভাবে সমর্থন করেন।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশ সফরের সময় ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে বসেই ১৫ আগস্টের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘সবুজ সংকেত’ দেন তিনি নানা নথিপত্র দিয়ে প্রমাণ করেন।
একজন অসাধারণ স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন এক ‘বিচিত্র মিথ্যাবাদী’ ও ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ক্রিস্টোফার এরিক হিচেন্স কিসিঞ্জারকে।
লিফশুলজ ২০০১ সালের মার্চে ‘হারপারস’ নামক এক ম্যাগাজিনে লেখা এক নিবন্ধে বলেন, বিভিন্ন ঘটনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, কিসিঞ্জার রাজনীতির বিষয়টাকে একটি নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে গ্রহণের প্রবণতা দেখিয়েছেন। তার কারণে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে। তার জন্য করুণ পরিণতি বরণ করেছেন এমন কিছু ব্যক্তির কথাও আমরা জানি। যাদের মধ্যে রয়েছেন সালভাদর আলেন্দে, আর্চ বিশপ ম্যাকারিওস ও শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ অনুসন্ধানের পর জিয়ার আমলে সামরিক আদালতে কর্নেল তাহেরের বিচারের অনুসন্ধানও করেছিলেন এই সাংবাদিক। যার ভিত্তিতে তিনি লিখেছিলেন 'বাংলাদেশ: দ্য আনফিনিশড রেভ্যুলিউশন'। তখন বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাকে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: