• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

বিশ্বকবির জন্মজয়ন্তিতে পতিসর কাচারিবাড়ি সেজেছে নতুন সাজে


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ০৬ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৪৫ পিএম
তিনদিন ব্যাপী গৃহিত সকল অনুষ্ঠান
পতিসর কাচারিবাড়ি

বেলায়েত হোসেন, নওগাঁ : কৃষ্ণচূড়ায় রং ধরেছে, সোনালু ফুলের হলদে রঙের ছটায় কাচারি বাড়ির প্রাঙ্গনের এক কনে প্রকৃতির রুপের মেলা বসেছে। আবারো এসেছে ২৫ বৈশাখ। এবার পালিত হবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মজয়ন্তি। কবির প্রকৃত জমিদারি কালিগ্রাম পরগনা হলেও এখনো তা রয়ে গেছে আনেকটাই পিছিয়ে। তবে এর মাঝেও সাজানোর প্রচেষ্টা চলছে বিশ্বকবির স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নের কালিগ্রাম পরগনার পতিসরে অবস্থিত কাচারিবাড়ি। নিভৃতপল্লীর কাচারি বাড়িকে ঘিরে সবুজের বড়ই  অভাব।

কাচারি বাড়িটি এখন প্রত্নতত্ত অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে। সংগ্রহ করা হয়েছে কবির নানা স্মৃতিসামগ্রী। কবির প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসাকে বুকে বেধে সকল সমস্যাকে মেনে নিয়ে এক অদৃশ্য ভালবাসার টানে রবিন্দ্র ভক্তরা ছুটে আসেন পাখি ডাকা নিভৃতপল্লী পতিসরে। কবির প্রিয় নাগর নদী কাচারি বাড়ির সীমানা ছুঁয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে। সেই নদীতে এখন পানি নেই তাই বড় রুক্ষ্ম। এখানে প্রতি বছর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তি উপলক্ষে বসে মিলন মেলা। দূর-দূরান্ত থেকে কবির ভক্তরা ছুটে আসেন তাদের প্রিয় কবির স্মৃতি বিজড়িত পতিসর কুঠিবাড়ি প্রাঙ্গনে। এ যেনো সব পার্বনকে ছাড়িয়ে যায়। ইতোমধ্যে আসতে শুরু করেছে পতিসরের পরিবারগুলোতে তাদের আত্মীয় স্বজন।

১৮৯১ সালের পর কবি বহুবার এসেছেন পতিসর কাছারি বাড়িতে নাগর নদী পথে বজড়ায় চড়ে। এই পতিসরে বসে কবি রচনা করেছেন কাব্য নাটিকা, বিদায় অভিশাপ, গোরা ও ঘরে বাহিরে উপন্যাসে অনেকাংশ। ছোট গল্পের মধ্যে প্রতিহিংসা, ঠাকুরদা, ইংরাজ ও ভারতবাসী প্রবন্ধ। গানের মধ্যে যেমন তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা/তুমি আমার নিভৃত সাধনা, বধূ মিছে রাগ করোনা, তুমি নবরুপে এসো প্রানেসহ অনেক গান। দুই বিঘা জমি, তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে কবিতাসহ বিভিন্ন কবিতা। কবির স্মৃতি বিজড়িত মনিতলার পূজামন্ডপের সেই তাল গাছটি আজ আর নেই। ঝড়ে ভেঙ্গে গেছে অনেক আগে।

তবে রবীন্দ্র গবেষকগনের ধারনা মতে; পতিসর কুঠিবাড়ির সামনে যে দুই বিঘার মাঠ। বর্তমানে যেটা বাগান করা হয়েছে সেটিই কবির রচিত কবিতা দুই বিঘা জমির সেই মাঠটি। সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে কবির দেয়াল ঘড়ি, লোহার সিন্দুক, খাট, টি-টেবিল, টি-পট, আয়না, নাগর বোটের এ্যাংকর, ট্রাক্টরের ভগ্নাংশ, কবির স্নানের বাথটাব, কবির বিভিন্ন বয়সের ছবি, কবির স্বহস্তে লিখিত ৬ পৃষ্ঠার চিঠিসহ নানান
সামগ্রী। কবি তাঁর পুত্রের নামানুসারে প্রতিষ্ঠা করেন কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইন্সটিটিউট। 

১৯১৩ সালের নবেল পুরস্কারের ১ লাখ ৮ হাজার টাকার মধ্যে তিনি কৃষকদের উন্নয়নকল্পে প্রতিষ্ঠিত কৃষি ব্যাংকে জমা দেন ৭৫ হাজার টাকা। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পতিসর কাচারি বাড়িতে সর্বশেষ আসেন ১৯৩৭ সালে। কাচারি বাড়িতে সংরক্ষন করা হয়েছে কবির নানান স্মৃতি সামগ্রী। কাচারি বাড়ির সামনে সিংহ দুয়ার। ওই দুয়ারের সামনে বিশাল প্রাঙ্গন। সিংহ দুয়ার পেরোলেই কুটি অভ্যন্তর, সামনে প্রশস্থ আঙ্গিনা। আঙ্গিনার তিন দিকে উঠে গেছে সিঁড়ি। সিঁড়ি পেরোলেই বারান্দা সংলগ্ন বিশাল বিশাল কক্ষ। এক কোন দিয়ে উঠে গেছে চিলে কোঠার সিঁড়ি।

নওগাঁর বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আতাউল হক সিদ্দিকী জানান, পতিসর কাচারি বাড়ি যে পরগনায় অবস্থিত সেটাই কবির পৈতিক সূত্রে পাওয়া জমিদারি কালিগ্রাম পরগনা এবং এটাই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব জমিদারী। শাহজাদপুর, শিলাইদহ জমিদারী ছিল কবির অপর ভাইদের। কবি যেহেতু এ অঞ্চলে বেশী আসতেন তাই তাঁকেই সবকটি জমিদারী দেখাশুনা করতে হতো। গত ২০০৯ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বহস্তে লিখিত ৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি উদ্ধার করেন স্থানীয় রবীন্দ্র সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক মতিউর রহমান মামুন।  রবি ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত পতিসর কৃষি ব্যাংকের একটি হিসাবের খাতা উদ্ধার করা হয়। পতিসরে
জাতীয়ভাবে উদযাপন করা হচ্ছে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী। তাই কাচারীবাড়ির চারপাশে বর্তমানে সাজ সাজ রব।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কাছারিবাড়ি পতিসরে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিন দিনব্যাপী জাতীয়ভাবে রবীন্দ্র জন্মোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবে বরীন্দ্র গবেষকরা কবিগুরুকে নিয়ে স্মারক আলোচনা করবেন। এছাড়া প্রধান ও বিশেষ অতিথিবৃন্দের আলোচনা অন্তে দেশের জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

তিনদিনের এই রবীন্দ্র জন্মোৎসবের প্রথম দিনে কাচারিবাড়ির দেবেন্দ্র মঞ্চে সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের সভাপতিত্বে বিকাল আড়াইটায় আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এমপি। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন আসনের সাংসদ, পুলিশ সুপার ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দরা উপস্থিত থাকবেন। ২য় দিন বিকাল সাড়ে ৩টায় আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকতেখারুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন রবীন্দ্র গবেষক আবুল মোমেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থনীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন। এছাড়া অন্যান্য অতিথিবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

৩য় দিন বিকাল সাড়ে ৩টায় জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন রবীন্দ্র গবেষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক জুলফিকার মতিন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। এছাড়াও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। উৎসবে জাতীয় পর্যায়ের রবীন্দ্র শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন। এছাড়াও তিনদিন জেলা, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর নিয়মিত শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই দিন ব্যাপী গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

পতিসর কাচারীবাড়ির সহকারী কাস্টডিয়ান আবুল কালাম হোসেন বলেন, কবিগুরুর জন্মউৎসব উপলক্ষে পতিসর কাছারিবাড়িতে হয়েছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ।জন্মবার্ষিকীর সকল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে কাচারী বাড়ির দেবেন্দ্র মঞ্চে। এছাড়া কাচারি বাড়ি ও তার আশেপাশের এলাকাগুলোকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, কাচারিবাড়ি পতিসরে কবিগুরুর জন্মোৎসব উপলক্ষে জাতীয়ভাবে আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী গৃহিত সকল অনুষ্ঠান যেন সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ন পরিবেশে সম্পন্ন হয় সেই লক্ষ্যে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনদিন পতিসরের আইন-শৃঙ্খলার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে পুলিশের বিশেষ বাহিনীও নিয়োজিত থাকবে। তাই আমি শতভাগ আশাবাদি এবার নওগাঁসহ পুরো দেশবাসী পতিসরে একটি ভিন্ন রকমের পরিবেশের মধ্য দিয়ে কবিগুরুর জন্মেৎসব উদযাপন করতে পারবেন। জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বিগত সময়ে পতিসরে কবির জন্মবার্ষিকী যে সকল কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছে এবার সম্পন্ন ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা কবিগুরুর জন্ম বার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে নানা বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image