নিউজ ডেস্ক : জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি আন্দোলনের আহ্বায়ক একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ সেলিম ও সদস্য সচিব রুস্তম আলী খোকন এক বিবৃতিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ, দেশপ্রেমিক ও সুনাগরিক গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুগোপযোগী বিজ্ঞানভিত্তিক সর্বজনীন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের জন্য সরকারের নিকট দাবি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বায়ান্ন'র ভাষাভিত্তিক বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্খিত মূল্যবোধ পরিপন্থী কোন শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশ মেনে নেবে না। বিগত পঞ্চাশ বছরে সংবিধানের একইধারার সমতাভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ঘোষণার বিপরীতে দেশে ১২ রকমের শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। বিভাজিত হয়েছে তি। শিক্ষা ক্ষেত্রকে ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। একদিকে বিকশিত করা হয়েছে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অন্যদিকে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভিনদেশী কারিকুলামে ধনীক গোষ্ঠী আরেক ধরণের নাগরিক সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারগুলো তাদের খেয়াল খুশি ইচ্ছামত নানান ধরনের শিক্ষা পদ্ধতি প্রণয়নের ফলে জমজমাট হয়েছে কোচিং বাণিজ্য।
শিক্ষার্থীর জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শৈশবের সৃষ্টিশীল সময় ও সুকুমারবৃত্তি। ছাত্র শিক্ষক অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় মতামত গ্রহণ না করেই আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রচিত শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে অভিভাবক মহলে। শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না দিয়েই প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদ্ধতির প্রণয়ণের ফলে পদ্ধতিসমুহ ব্যর্থ হয়ে কোচিং ব্যবসাকেই শক্তিশালী করেছে।
বিশৃঙ্খল এই পরিস্থিতির সুযোগে ধর্মীয় শিক্ষা ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা পদ্ধতি সাধারণ শিক্ষাকে সংকুচিত করে জণগণ এর ভেতর সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতার পরিবেশ তৈরি করেছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো প্রণয়ন, তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, আদর্শিক মান উন্নয়ন, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে একইধারার সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যতীত কোনভাবেই বাংলাদেশে বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ইউনেস্কোর সুপারিশ মোতাবেক জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে সরকার জাতীয় আয়ের মাত্র ১.৮
শতাংশ এই খাতে বরাদ্দ দিয়ে থাকে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে বাস্তবভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গী সন্নিবেশিত করা জরুরী। অগ্রসর ও অনগ্রসর বিদ্যালয়ের ব্যবধান হ্রাস করে পর্যায়ক্রমে একটি শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করার ওপর নেতৃবৃন্দ গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিবৃতিতে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির ধর্মীয় শিক্ষা ও চেতনার ভিত্তিতে ধর্মভিত্তিক শিক্ষা প্রণয়নের দাবির তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়, বাংলাদেশ গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ধর্মনিরেপেক্ষতা জাতীয়তাবাদী মূল্যবোধের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি একটি রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রে পশ্চাৎপদ ধর্মীয় শিক্ষার নামে অন্ধকারাচ্ছন্ন কোন শিক্ষা পদ্ধতির দাবি উচ্চারিত হতে পারে না। আবহমান বাঙালী সমাজ মানস তার নিজ জীবনে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পরিবার ও সমাজ হতেই ধর্ম শিক্ষা ও চর্চা করে গেছে এবং বর্তমানেও তা বহমান। কোন কোন অন্ধকারের শক্তি ধর্মকে আশ্রয় প্রশয় করে তাদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা করে গেছে যা সকল সময়ে বাঙালী দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিরোধ করেছে। বর্তমানের এই শক্তির অপচেষ্টা প্রতিহত করতে জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি আন্দোলন সকল ধর্ম বর্ণের জণগণকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর।
নেতৃবৃন্দরা আরও বলেন, অচিরেই জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি আন্দোলন বর্তমান শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বক্তব্য দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবে। সে লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি আন্দোলন ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক মহলে মতবিনিময় সভা করছে।
দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের সাথে একাধিক মতবিনিময় সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকল অংশের মতামত এর ভিত্তিতে একটি সুপারিশ মালা সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: