• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

প্রামাণ্যানুষ্ঠান নোঙর-সূতিভোলা খাল সম্প্রচার হবে আগামীকাল 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২২ ফেরুয়ারী, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৫৬ পিএম
প্রামাণ্যানুষ্ঠান নোঙর-সূতিভোলা খাল সম্প্রচার হবে আগামীকাল 
নোঙর-সূতিভোলা খাল

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ টেলিভিশন এর নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি বিষয়ক গবেষণা ভিত্তিক ধারাবাহিক প্রামাণ্যচিত্র নোঙর-‘সূতিভোলা খাল’ আগামীকাল শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১:৩০ মিনিটে বিটিভি এবং বিটিভি ওয়ার্ল্ড একযোগে সম্প্রচার করবে।

শততম পর্ব অতিক্রম করে এবার ১১০তম পর্বে সূতিভোলা খালের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম সূতিভোলা খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নৌকা চলাচলের উপযোগি করার কথা বলে সাক্ষাতকার প্রদান করেন। এ ছাড়া পরিবেশবাদি ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ নদী ও প্রাণ প্রকৃতি সংরক্ষণ করার জোর দাবি জানিয়েছেন।

মেয়র বলেন ঢাকা উত্তর সিটির মহাপরিকল্পনায় সুতিভোলা খাল দিয়ে নৌকা নিয়ে সাঁতারকুল হয়ে আফতাবনগর দিয়ে হাতিরঝিল ঘুরে বালু নদে নৌকা চলাচল করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। 

এক সময়ের প্রবাহমান নড়াই নদী সংলগ্ন সূতিভোলা খাল এখন দূষণ-দখলে মৃতপ্রায়। নয়ন জুড়ানো রূপ তার ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছিল দুই যুগ আগে। সেই নড়াই নদীর শাখা সূতিভোলা খালে এখন মাছ নেই। বেড়েছে মশার উপদ্রব। কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। বেড়েছে রোগবালাই। দূষিত পানির কটু গন্ধে তীরবর্তী এলাকার মানুষের দুর্ভোগও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে প্রাণ-পরিবেশ। বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। রাজধানী ঢাকার পয়োবর্জ্য ও শিল্পকারখানার বর্জ্য পড়ে সূতিভোলা নদীর পানি এখন আলকাতরার মতো কালো হয়ে গেছে। তাই স্থানীয়রা একে পঁচা পানি বলে। রাজধানী ঢাকার খিঁলগাও, ডেমরা, বেড়াইদ, গুলশান ও রূপগঞ্জের ৫০ গ্রামের লাখো মানুষের কাছে বালু নদের পঁচা এখন অভিশাপ।

শীতলক্ষ্যার মোহনা ডেমরা থেকে টঙ্গীতে গিয়ে তুরাগ নদে মিলেছে বালু নদী। বালু নদী থেকে দুটো ছোট নদ নড়াই ও দেবধোলাই ঢুকেছে ঢাকার রামপুরায়। নড়াই নদী থেকে সূকিভোলা খাল ঢাকার মিরপুর, পল্লবী, উত্তরা, গুলশান, তেঁজগাও, সবুজবাগ, মতিঝিলসহ বিশাল এলাকার শিল্প ও পয়োনালার বর্জ্য এসে রামপুরা ব্রিজের নিচ দিয়ে বালু নদীতে পড়ছে।

বিভিন্ন শিল্প কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল পড়ছে। বছরের পর বছর আবর্জনা পড়তে পড়তে এর পানি এখন বর্জ্য হয়ে পড়েছে। ঢাকা ওয়াসার একটি সূত্র জানায়, বালু নদের মোট দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে দৈনিক ১০ লাখ ঘনমিটার পয়োবর্জ্য, ৫৬ কোটি ঘনমিটার বর্জ্য মেশানো পানি, বিভিন্ন কলকারখানার ৪৫০ ঘনফুট বর্জ্য প্রতিদিন এ নদে পড়ছে। এছাড়া বালু, নড়াই ও দেবধোলাইয়ের উপড় রয়েছে সহস্রাধিক খোলা পায়খানা। এসব থেকে আরো ৫৬০ ঘনফুট পয়োবর্জ্য নদের পানিতে মিশছে। সবমিলিয়ে বালু ও সূতিভোলা খালের পানি এখন আলকাতরার মতো কালো।

রাজধানীর সাতারকূল-ভাটারা এলাকায় সূতিভোলা খালের অবস্থান। ইতোমধ্যে ডিএনসিসি মেয়র সূতিভোলা খাল এবং পরবর্তীতে পাশের সমুদ্র খালের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ডিএনসিসি মেয়র সূতিভোলা খালের পাড় দিয়ে হেটে যান। এসময় মেয়রের উপস্থিতিতে খালের পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইটের তৈরি ওয়াল ভেঙে দিয়ে প্রায় আধা কি.মি. জায়গা দখলমুক্ত করা হয়।

সূতিভোলাকে একটি মডেল খাল হিসেবে উন্নয়ন করার ঘোষণা দিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ঢাকার পূর্ব পাশে মোট প্রায় ২৯ কি.মি. খালের উন্নয়ন ও খালগুলোর মধ্যে কানেকটিভিটি তৈরি করা হবে। এ বছরের মধ্যে প্রথম ধাপে সূতিভোলা খালের ৭ কি.মি. উন্নয়ন করবো এবং পরবর্তীতে বাকি ২২ কি.মি. এর উন্নয়ন হবে। সূতিভোলা খালটিকে একটি মডেল হিসেবে উন্নয়ন করা হবে। সূতিভোলা খালের আদলে পর্যায়ক্রমে অন্য খালগুলোরও উন্নয়ন করা হবে।

ঢাকার খালগুলো একসময় ওয়াসার অধীনে ছিল। ২০২০ সালে সিটি করর্পোরেশন বুঝে পাওয়ার পর থেকে খালের উন্নয়নে কাজ করছে। বিভিন্ন খালে দেখা যাচ্ছে নেভিগেশন নিশ্চিত না করে পানির উপরের স্তরে ওয়াসার পাইপ বসানো হয়েছে।

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব (খাল ও ড্রেনেজ) আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করর্পোরেশনকে হস্তান্তর করার পর নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন দুই মেয়র। খাল পরিষ্কার করার পাশাপাশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করছে কর্পোরেশনগুলো।

গত ২০ জানুয়ারি ২০২৪ দুপুরে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা সংলগ্ন সুতিভোলা খাল ও কড্ডা খাল পরিদর্শন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় সকল খালের পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পরিষ্কার এবং দখলমুক্ত করা হবে বলে ঘোষণা দেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

পঁচা পানিতে চলে জীবন-জীবিকা : সরেজমিনে বালু নদীর তীরবর্তী বালুরপাড়, দাসেরকান্দি, কামশাইর, চানখালী, ধীৎপুর, পশ্চিমগাঁও, চনপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নয়ামাটিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বালু নদীর পঁচা পানি অভিশাপ হলেও এসব গ্রামের বৌ-ঝিয়েরা পঁচা পানিতেই থালা-বাসন পরিষ্কার করছে। পুরুষরা এ পানিতে গরু গোসল করাচ্ছে। এমনকি লোকজন এ পঁচা পানিতেই গোসল করছে।

পঁচায় বিপর্যস্ত কৃষি : এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, নদীর পূর্বপাড়ে রূপগঞ্জ। আর পশ্চিমপাড়ে ঢাকার খিলগাও, ডেমরা, বেরাইদ, ডুমনী ও নাসিরাবাদ। নদের উভয় তীরজুড়ে ফসলের ক্ষেত। এক সময় এসব জমিতে অধিক ফসল ফলতো। পঁচা পানির কারণে এখন এর অর্ধেকও হয় না। এক সময় আগে বিঘায় ৪০ মণ ধান পাওয়াযেত। এখন ১৭ কি.মি. জমিতে মাত্র ১৮ মণ ফসল পাওয়া যায়! বিকল্প উৎস না থাকায় জমিতে কৃষকরা বালু সুতিভোলা নদীর পঁচা পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয়রা।

মশা-মাছির যন্ত্রণা : পরিবেশ বিপর্যয় ও কৃষি বিপর্যয়ের পাশাপাশি মশা-মাছির যন্ত্রণাও রয়েছে। গত ১৮ বছর ধরে পঁচা পানির কারণে মশার উপদ্রব এসব এলাকায় অনেক বেশি। দিনের বেলায়ও মশারী খাটিয়ে নিস্তার নেই তাদের। মশা নিধনে নেই সরকারী কোন উদ্যোগ।

জেলে পল্লীর দুর্দিন : বালু নদীর তীরবর্তী দাসেরকান্দি, চরচনপাড়া ও ফকিরখালির জেলে পল্লীতে পঁচা পানির কারণে নদীতে মাছ না থাকায় দেড় শতাধিক জেলে পরিবার এখন নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বছরের ছয় মাস তাদের কাটাতে হয় অর্ধহারে-অনাহারে। তাই তাদের পরবর্তী প্রজন্ম পেশা বদলাচ্ছে। পঁচা পানি এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে।

সুমন শামস এর পরিকল্পনা, গবেষণা, গ্রন্থনা, উপস্থাপনায় এবং আবদুল বাতেনের প্রযোজনায় বাংলাদশের নদ-নদী এবং পরিবেশ-প্রকৃতির অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র নোঙর প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার সকাল ১১:৩০ মিনিটে সম্প্রচার হয়।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image