মিঠামইন (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার বিস্তীর্ণ হাওর জুড়ে বরো ধানের সমারোহ। যত দূর চোখ যায় যেন সোনালী ধানের সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্য গড়তে গহীন হাওরের বছরের অর্ধেক সময় জুড়ে পড়ে থাকে একদল মানুষ। স্হানীয় ভাবে এরা জিরাতি নামে পরিচিত, মূলত কৃষি শ্রমিক।বরো মৌসুমে হাওরে ছোট ছোট কুঁড়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করেন জিরাতিরা।আশেপাশে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে গাছপালা কিংবা ছায়া নেই।
কিশোরগঞ্জের নিকলী, মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম এ ৪ টি হাওর উপজেলা কার্তিক থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত অস্থায়ী ভাবে গলাঘরে বসবাস করেন বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩৫ হাজার জিরাতি।লোকালয় থেকে বহুদূরে অবস্থিত কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের অস্থায়ী ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন হাজার হাজার কৃষক। ‘জিরাতি’ নামে পরিচিত এসকল কৃষক গবাদিপশুর সাথে গাধাগাধি করে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে ব্রজপাতের ঝুঁকির মধ্যেই কষ্টে বোনা ফসল ঘরে তুলতে দিন রাত পরিশ্রম করে। হাওরে ধান ক্ষেতের মাঝখানে চোখে পড়বে ছোট ছোট এসব কুঁড়ে ঘর। সামান্য উঁচু জমিতে তৈরি এসব অস্থায়ী ঘরে বাস করেন কয়েকশো কৃষক। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের ৬ মাস জীবন যুদ্ধে মাঠে পড়ে থাকেন হাজার হাজার কৃষক। গবাদি পশুর সঙ্গে রাত কাটান তারা।এসব মানুষের নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যাবস্থা,স্বাস্থ্য সমস্ত পায়খানার টয়লেট কিংবা রাতে ঘুমানোর মত জায়গা।
বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ছোট কুঁড়ে ঘরে বসবাস করা জিরাতিরা ঘরের মাচায় স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ঘুমান।মাচার নিচে রাখা হয় গবাদিপশু। চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বসবাস করা এসব মানুষের ভাগ্যে ঝুটে না পুষ্টিকর খাবার। বেশির ভাগ ক্ষেএেই মোটা ভাত আর মরিচ ভর্তা কিংবা পান্তা ভাত দিয়ে চলে। নেই বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যাবস্থা। প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয় ক্ষেতের আইলে। আছে শীলা বৃষ্টি, বজ্রপাতসহ নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা।
বড় হাওরের কৃষক গোলাপ মিয়া জানান,সব কিছু তুচ্ছ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৃষকরা বছরের ৬ টি মাস পরে থাকেন হাওরে।নিজেদের ঘর বাড়ি, আত্মীয় স্বজন ফেলে কার্তিক মাসে তারা পাড়ি জমায় হাওরে।জমি তৈরি করা, চারা রোপন, সেচ পরিচর্যা থেকে শুরু করে ধান কাটা, মাড়াই, জাড়াই শেষে নতুন ধান সঙ্গে নিয়ে জৈষ্ঠ মাসে বাড়ি ফিরেন তারা।ফলন ভালো হলে মুখে হাসি ফুটে।ভুলে যান পিছনের দুঃখ কষ্ট। আবারও প্রস্তুতি নেন পরের বছর হাওরে যাওয়ার জন্য। অপর কৃষক সিরাজ মিয়া জানান,আমার দাদা ছিল কৃষক এর পর আমার বাবার আমল কেটেছে এই হাওরে।বর্তমানে আমি এবং আমার ছেলেদের নিয়ে যুগ যুগ ধরে চলছে আমাদের এই জীবন। আমার পূর্বের বংশধররা এভাবেই চালাচ্ছেন নিজেদের কৃষি কাজ।হাওরে নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের খাদ্য নিরাপওা নিশ্চিত করা সহ এই খাদ্য সৈনিকদের খবর কেউ নেয় না।তাদের জিরাতি কালে জীবন মান উন্নয়ন কিংবা সামান্য পানীয় জল আর স্যানিটেশন নিশ্চিত করা হলে দেশের জন্য তারা আরও বেশি অবদান রাখতে পারবেন। মিঠামইন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলাম খাঁন অপু বলেছেন, ৬ মাস হাওরের খাদ্য, পানীয় ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে তারা কৃষিতে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন।জেলার সিংহভাগ ফসল উৎপাদন হয় হাওর থেকে। এবিষয় নিয়ে তিনি উপর মহলে কথা বলবেন বলে জানান।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: